পাটগ্রামে থানায় হামলার ঘটনায় বিএনপির আরও ২ নেতা গ্রেপ্তার
Published: 8th, July 2025 GMT
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা, ভাঙচুর ও হাজত থেকে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনায় বিএনপির আরও দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার ভোরে পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় এ নিয়ে ১৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন পাটগ্রাম পৌর এলাকার থানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক রাবিউল ইসলাম এবং উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মতিয়ার রহমান। এর আগে একই মামলায় আরও এজাহারভুক্ত ও সন্দেহভাজনসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে থানা-পুলিশ। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনছিনিয়ে নেওয়া এক আসামিসহ পাঁচজন গ্রেপ্তার০৬ জুলাই ২০২৫২ জুলাই রাতে পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামিকে জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় পরদিন রাতে পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক হামিদুর রহমান বাদী হয়ে ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। মামলায় সরকারি কাজে বাধা, হত্যার উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মচারীকে মারধর, সরকারি সম্পদের ক্ষতি, চুরি ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, থানা-পুলিশের করা মামলায় গত চার দিনে ১৪ আসামিকে করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুনপাটগ্রামে ‘উদ্ধারে যেতে না দিতে’ হাতীবান্ধা থানাও অবরুদ্ধ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা০৪ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনহাতীবান্ধা থানা অবরুদ্ধ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ গ্রেপ্তার ২০৫ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনপাটগ্রাম থানায় হামলা ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার০৫ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আস ম ক ঘটন য় ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমাকে আনফ্রেন্ড করবেন না, আমি আপনাদের শত্রু নই’
পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেছেন, ‘আমাদের দিয়ে কাজ আদায় করে নেন। কিন্তু দূরে সরিয়ে দেবেন না। আমি সরে গেলে আরেকজন তো আসবে। তাঁকে দিয়ে তো কাজ করাতে হবে। এখানে ৩ হাজার ১০০ পুলিশ সদস্য আছেন। তাঁদের মনোবল যদি ভেঙে যায়, সেটা খুলনাবাসী বা দেশের কারও জন্য ভালো হবে না।’
মঙ্গলবার দুপুরে কেএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কেএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে তাঁর পদত্যাগের বিষয়টি উঠে আসে।
জবাবে কেএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমাকে আনফ্রেন্ড করবেন না। আমাকে অবন্ধু মনে করবেন না। আমি আপনাদের শত্রু নই। আমি এখানে কাজ করতে চাই। সত্যি সত্যি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটাতে চাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘আমি কোনো তদবির করে এখানে আসিনি। আবার থাকার জন্যও তদবির করছি না। পেশাদারি মনোভাব নিয়ে কাজ করতে চাই। আমাদের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে না চাইতে পারেন। আবার খুলনাবাসীর মধ্যেও অনেকে মনে করতে পারেন, আমি চলে গেলে ভালো হয়। তবে কেন ভালো হয়, সেটা তাঁরা ভালো বলতে পারবেন। আমার ইচ্ছা, আমার হৃদয়টা যদি খুলে দেখাতে পারতাম, তাহলে বুঝতে পারতেন, আমি যতটুকু সময় পাই, খুলনাবাসীর জন্যই কাজ করতে চাই।’
গত ২৫ জুন থেকে কেএমপি কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে কেএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ কিন্তু পদত্যাগ করতে পারে না। কর্তৃপক্ষ চাইলে প্রত্যাহার করতে পারে বা অন্য কোথাও পদায়ন করতে পারে। আমার কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত। আমার আন্তরিকতার ঘাটতি আছে কি না, সেটা আপনারা বিবেচনা করবেন। তবে পুলিশকে যদি দূরে ঠেলে দেন, তাহলে তাদের দিয়ে ভালো কাজ করানো কঠিন হয়ে যাবে।’
গত ১০ মাসে কেএমপি এলাকায় ২৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার। এর মধ্যে দুটি লাশ নদীতে ভেসে আসায় তদন্ত করছে নৌ পুলিশ। বাকি ২৪টির মধ্যে ২২টির রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটি মামলা তদন্তাধীন। তবে অগ্রগতি রয়েছে।
পুলিশ কমিশনারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ইজিবাইক চুরি বা ছিনতাইকে কেন্দ্র করে পাঁচটি, মাদক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাতটি, চুরি নিয়ে একটি, পরকীয়া সম্পর্কের কারণে পাঁচটি, পারিবারিক কলহে তিনটি এবং অন্যান্য কারণে পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে।
মাদকের বিষয়ে জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, মাদকের কারণে তরুণ প্রজন্ম ধ্বংস হচ্ছে। মাদক বিক্রেতা, বাহক ও যারা বাইরে থেকে মাদক এনে খুলনায় সরবরাহ করেন, তাঁদের ওপর পুলিশের নজরদারি অব্যাহত আছে। গত সপ্তাহে হরিণটানা থানা এলাকা থেকে ১৯ হাজার ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযানেও মাদক উদ্ধার হচ্ছে। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজপড়ুয়া সন্তানদের সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে হবে। সন্ধ্যার পর তারা যেন অযথা বাইরে ঘোরাফেরা না করে, সেদিকে অভিভাবকদের নজর দিতে হবে।
ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক নিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, খুলনায় প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ হাজার ইজিবাইক চলাচল করে। এর প্রায় ৬০ শতাংশ বাইরের এলাকা থেকে আসে। চালকদের ট্রাফিক আইনের জ্ঞান না থাকায় যানজট বাড়ছে। কেএমপির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজার চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাকি চালকদের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। রাজশাহীর আদলে খুলনায়ও ইজিবাইককে দুই রঙে ভাগ করে এক দিন পরপর চালানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে রূপসা সেতু অবরোধ০১ জুলাই ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে কেএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম খান, উপকমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আবু তারেক, উপকমিশনার (সিটিএসবি) আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও উপকমিশনার (ট্রাফিক) সুদর্শন কুমার রায় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনকেএমপি সদর দপ্তরের সামনে আজও বিক্ষোভ, বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে বিভক্তি৩০ জুন ২০২৫আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারকে না সরালে খুলনা অচলের হুঁশিয়ারি২৮ জুন ২০২৫আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারের অপসারণ দাবিতে আবার বিক্ষোভ২৮ জুন ২০২৫আরও পড়ুনকেএমপি কমিশনারকে সরাতে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা, খুলনা অচলের হুঁশিয়ারি২৬ জুন ২০২৫