ঝিনাইদহে এনসিপির পথসভায় নেতারা বললেন, হাসিনার বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়
Published: 9th, July 2025 GMT
জুলাই আন্দোলনে খুনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনার বিচার এবং সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানা হবে না বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। বুধবার বিকেলে ঝিনাইদহ পৌর শহরের পায়রা চত্বরে আয়োজিত এনসিপির জুলাই পদযাত্রা ও পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে তাঁরা এ কথা বলেন।
দ্রুত জুলাই সনদ তৈরির দাবি জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই সনদ আমরা আদায় করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ।’
বক্তব্যে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে ২৫ বছরে সীমান্তে বিএসএফ ১২০০ মানুষকে হত্যা করেছে। বিএসএফ সীমান্তরক্ষী নয়, একটি খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। তারা শুধু খুন করতে চায়, খুন করা তাদের নেশা। বিএসএফ মানবতাবিরোধী বাহিনী। আমরা সীমান্ত হত্যা মেনে নেব না। আমরা ভারত সরকারকে বলতে চাই বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মর্যাদাশীল আচরণ করুন।’
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ। ৫ আগস্টের পর থেকে দেখছি একটি দল আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করছে, তারা সংস্কার চায় না। আমরা বিচার এবং সংস্কার করে নির্বাচন চাই। আমরা খুনি হাসিনার বিচার চাই। একটি দল বলছে সংস্কার ও বিচার নির্বাচিত হয়ে এসে করবে, এমন ধোঁকাবাজি অনেক হয়েছে। আপনারা নির্বাচিত হয়ে সংস্কার ও বিচার করবেন এর নিশ্চয়তা কীভাবে পাব। সংস্কার দ্রুত করুন, তা না হলে ছাত্ররা আবার রাস্তায় নেমে আসবে। পুলিশ ভাইয়েরা, জুলাই আন্দোলনে দায় আপনাদেরও নিতে হবে। মনে রাখতে হবে সব পুলিশ কিন্তু খারাপ না। আপনার ভাই আমার ভাই পুলিশে চাকরি করে। যাঁরা আওয়ামী লীগের পুলিশ ছিলেন, যাঁরা ছাত্র–জনতার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁদেরও জুলাই হত্যার দায় নিতে হবে।’
এ সময় ঝিনাইদহের সন্তান এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজাকে আসছে নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা তাঁকে আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। তিনি ঝিনাইদহবাসীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আপনাদের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। আপনারা এনসিপির সঙ্গে থাকেন। এনসিপি আপনাদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে। এনসিপি জনগণের রাজনীতি করবে এবং সব সময় জনগণের পাশে থাকবে।’
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়াই, শহীদের বাবা–মার পাশে দাঁড়াই, তখন আমরা জুলাই আন্দোলনে ফিরে যাই।’
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘২৪–এ আমরা একটি খুনি শাসকের হাত থেকে মুক্ত হয়েছি, কিন্তু শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত হতে পারিনি। দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ, নির্বাচন কমিশনসহ সব গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। দেশের সব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপ্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করার জন্য সব ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশে এমন রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে ধর্মের নামে কোনো হানাহানি বা শত্রুতা থাকবে না।’
সভায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ রাকিব হোসেনের মা ও বাবাও বক্তব্য দেন।
দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত করেছি। তবে দীর্ঘ সময় পার হলে হত্যার বিচার ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার হয়নি। জুলাই সনদ তৈরি হয়নি। আমরা সংস্কার চাই, হত্যাকারীদের বিচার চাই, জুলাই সনদ চাই।’
পদযাত্রা ও পথসভায় আরও অংশ নেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর আগে বিকেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধিদলটি চুয়াডাঙ্গা থেকে ঝিনাইদহ জেলা শহরের জোহান পার্কে আসে। সেখানে তাঁরা শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড চত্বর থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রার এ সময় রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ এসসিপির নেতাদের শুভেচ্ছা জানান। পদযাত্রা নিয়ে শহরের পায়রা চত্বরে সমাবেশস্থলে আসেন। মাগরিবের নামাজের পর পথসভার মঞ্চে আসেন নেতারা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিপুলসংখ্যক মানুষ সমাবেশে অংশ নেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব জ ল ই সনদ এনস প র পদয ত র আপন দ র ঝ ন ইদহ
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি
সহকারী শিক্ষক পদকে ৯ম গ্রেডের বিসিএস ক্যাডারভুক্ত করা এবং নিয়মিত পদোন্নতিসহ চার দফা দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি পালন করছেন পাবনার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এ কর্মসূচি পালন শুরু করছেন তারা। ফলে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। তবে দাবি মানা হলে, শুক্র ও শনিবার অতিরিক্ত ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষকরা।
আরো পড়ুন:
পাবনায় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি, পরীক্ষা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষকরা
কুয়েটে শিক্ষার্থীকে অস্ত্রাঘাত, অপর শিক্ষার্থী বহিষ্কার
সকাল ১১টার দিকে সরেজমিন পাবনা জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথাসময়ে বিদ্যালয়ে আসলেও বসে সময় কাটাচ্ছেন। কেউ গল্প আবার কেউবা আড্ডায় মেতে থাকলেও শ্রেণিকক্ষে যাচ্ছেন না শিক্ষকরা। ক্লাসরুম তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে নির্ধারিত পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে বিদ্যালয়ে আসলেও ফিরে যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের।
পাবনা জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান, আসাদুজ্জামান খান, সহকারী শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম, নাজিয়া হাসান বলেন, ‘‘আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া বিঘ্ন হোক, আমরাও চাই না। কিন্তু আমরা এখন অসহায়। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। নিয়মিত পদোন্নতি ও পদায়ন দেওয়া হয় না। আদালতের রায় পক্ষে থাকলেও বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া হয় না। বিভিন্ন সময় শিক্ষকরা এসব দাবি উত্থাপন করলেও কোনোভাবেই তাদের যৌক্তিক দাবি মূল্যায়ন করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে এমন কর্মবিরতি পালন করছি। আমরা চাই, সরকার আমাদের দাবি মেনে নিক, আমরাও দ্রুত ক্লাসে ফিরতে চাই। আমাদের দাবি মানা হলে শুক্র ও শনিবার অতিরিক্ত পাঠদানের মাধ্যমে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবো।’’
আন্দোলরত শিক্ষকদের চার দফা দাবিগুলো হলো- (১) সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের’ গেজেট প্রকাশ। (২) বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা। (৩) সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ দেওয়া এবং (৪) ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের দুই থেকে তিনটি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।
ঢাকা/শাহীন/বকুল