‘জুলাই ঘোষণা’ সংবিধানের প্রস্তাবনায় নয়, তপশিলে চায় বিএনপি
Published: 10th, July 2025 GMT
মূল সংবিধান নয়, চতুর্থ তপশিলে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’কে অন্তর্ভূক্ত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায় বিএনপি। ক্রান্তিকালীন বিধান-সংক্রান্ত এ তপশিলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকেও অন্তর্ভূক্ত চায় দলটি। যদিও এনসিপির দাবি ‘জুলাই ঘোষণা’ সংবিধানের প্রস্তবনায় রাখতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ দাবি নাকচ করেছেন। তিনি বলেন, সংবিধান সাহিত্য নয়, আইন। একাত্তরের ১০ এপ্রিল ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রই সংবিধানের মূল অংশে ছিল না। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সপ্তম তপশিলে যুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তা সাংবিধানিক নয়। ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক মূল্য রয়েছে। বিএনপি চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে মর্যাদা ও গুরুত্ব ধারণ করে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে চায়।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের এগারতম দিনের সংলাপ শেষে এসব কথা বলেছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি এনসিপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের চাওয়ায় জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সরকার মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছে। কয়েকদিন আগে সরকারের একজন উপদেষ্টা ঘোষণাপত্রের খসড়া বিএনপি মহাসচিবকে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি খসড়া সরকারকে দিয়েছিল। এরপর আর অগ্রগতি ছিল না। এবারের খসড়ায় বিএনপির আগে দেওয়া মতামতের কিছু প্রতিফলন রয়েছে। গত বুধবার রাতে সরকারকে এবারের খসড়ায় মতামত জানানো হয়েছে।
জুলাই ঘোষণার মাধ্যমে অভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবি করছে এনসিপি। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে ক্রান্তিকালীন বিধান-সংক্রান্ত সংবিধানের চতুর্থ তপশিলে যুক্ত করে জুলাই অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে। চতুর্থ তপশিলে রাখা যেতে পারে, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে।’
মূল সংবিধানে জুলাই ঘোষণাকে অর্ন্তর্ভূক্ত করতে বিএনপির আপত্তি কেন প্রশ্নে সালাহউদ্দিন বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে রাখলে, প্রশ্ন আসবে পচাত্তরের ৭ নভেম্বর বিপ্লব, নব্বইয়ের অভ্যুত্থান- কোথায় রাখা হবে?।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেছেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতার মামলায় পঞ্চম, ষষ্ঠ এবং সপ্তম তপশিলকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। তাই, অভ্যুত্থান-সংক্রান্ত জুলাই ঘোষণা চতুর্থ তপশিলে একটি প্যারায় রেখে, স্বীকৃতি দেওয়া যৌক্তিক হবে। আরেকটি প্যারায় বর্তমান সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে, রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে।
তবে এ ধারণাকে নাকচ করে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই ঘোষণা রাখাত হবে। তা রাষ্ট্র পরিচালনার পাথেয়। জুলাই ঘোষণার সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান সংবিধানই সংস্কার হলে, জুলাই ঘোষণাকে কীভাবে প্রস্তাবনায় রাখা যাবে-প্রশ্নে আখতার হোসেন বলেছেন, সংবিধান নতুন বা পুরাতন যাই হোক, জুলাইয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। সংবিধানের বাইরে তপশিলে যোগ করা গ্রহণযোগ্য হবে না।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ স ল হউদ দ ন ন বল ছ ন র জন ত ক প রস ত ক ত কর সরক র এনস প ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
সনদে সই করব কি না অনুষ্ঠানে গেলে দেখতে পারবেন: তাহের
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তাঁরা দাওয়াত পেয়েছেন এবং আশা করছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। সনদে সই করবেন কি না, সেটা অনুষ্ঠানের দিন সবাই দেখতে পারবেন।
আজ বুধবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অতি জরুরি বৈঠক শেষে বের হয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
সনদে স্বাক্ষর করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘১৭ তারিখে (শুক্রবার) আমরা আশা করি, যাব। মাত্র এক দিন বাকি আছে, ওই দিন গেলেই ইনশা আল্লাহ দেখে ফেলবেন।’ কোনো অনিশ্চয়তা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে রকম অনিশ্চয়তা আমরা দেখি না।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণভোট আগে হতে হবে। তারা নভেম্বর মাসে গণভোটের প্রস্তাব করেছে। নভেম্বরে গণভোট হলে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, এটা তারা চায়।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে তাতে ভোট পড়ার হার কম হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলের কর্মী–সমর্থকরা তাঁদের পছন্দের মার্কায় ভোট দিতে বেশি আগ্রহী থাকবেন। তখন গণভোটের গুরুত্বই থাকবে না। সে জন্য তাঁরা গণভোট নভেম্বরে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশনকে তাঁরা বলেছেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেগুলো একটি প্যাকেজ করে একটি প্যাকেজেই গণভোট হতে হবে।
গণভোটের জন্য রাজি হওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান জামায়াতে ইসলামীর ওই নেতা। তবে গণভোটের সময় নিয়ে ভিন্নতা থেকে গেছে উল্লেখ করে তাহের বলেন, গণভোট হবে সংস্কার কমিশনের জন্য। জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়। গণভোটের এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো নির্বাচনী আচরণে কিছু পরিবর্তন আনবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, উচ্চকক্ষ এবং ‘পিআর সিস্টেম বাই ভোটার নট বাই দি এমপিস’ এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচনের আগেই এই সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং সেই অনুযায়ী উচ্চকক্ষের ভোট হবে। যদি এটা নির্বাচনের দিনই হয়, তাহলে উচ্চকক্ষ তো পাস হলো না। তাহলে কি আবার একটা নির্বাচন হবে?