Samakal:
2025-10-17@12:17:14 GMT

৩৫ হাজার টাকায় সীমান্ত পার

Published: 13th, July 2025 GMT

৩৫ হাজার টাকায় সীমান্ত পার

গত মার্চে ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আগামী বছর নিজে দেশে ঈদ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই সময় প্রধান উপদেষ্টার পাশে ছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। কিন্তু গত ১৩ জুলাই জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে গত দেড় বছরে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন।

সংস্থাটি আরও বলেছে, ২০১৭ সালের পর বাংলাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি। কীভাবে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন রোহিঙ্গারা? অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ‘ঘুষ’ নিয়ে সীমান্ত পার করে দিচ্ছে। সীমান্ত পার করে দেওয়ার বিনিময়ে প্রতিজন থেকে তারা ১২ লাখ কিয়েট (যা বাংলাদেশি ৩৫ হাজার টাকা) নিচ্ছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মিয়ানমারের সিতওয়েতে বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সীমানা পার করে দিচ্ছে আরাকান আর্মি, এটা দেখে বোঝা যায় রাখাইনের অবস্থা দিন দিন জটিল হচ্ছে। এপারে ক্যাম্পে যারা আছেন, এসব শুনলে তাদের মাঝে প্রক্রিয়া দেখা দেবে, যেটা ইতিবাচক কিছু হবে না।’

সম্প্রতি রাখাইনের বুশিডংয়ের শ্যালাপ্রাং গ্রাম থেকে পালিয়ে নৌকায় নাফ নদী পেরিয়ে টেকনাফের নাইট্যংপাড়া সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেন নুরজাহান (৪৫)। তিনি লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। তার সঙ্গে নৌকায় ছিলেন আরও ২৫ জন। নুরজাহান বলেন, ‘রাখাইনে আরাকান আর্মি (মগরা) খুব নির্যাতন করছে। যাদের টাকা আছে, তাদের সীমান্ত পার করে দিচ্ছে। আরাকান আর্মি আমাদের বলছে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ভারতের সীমান্ত খোলা, যার যে দেশে ইচ্ছা সেখানে চলে যাও। আর এখানে তোমরা থাকতে পারবে না। সীমান্ত পার করে দেওয়ার বিনিময়ে তাদের ১২ লাখ কিয়েট (যা বাংলাদেশি ৩৫ হাজার টাকা) দিতে হয়। তবে তারা আমাদের আসতে সুযোগ দিলেও তরুণদের জোরপূর্বক রেখে দিচ্ছে যুদ্ধে ঢাল বানানোর জন্য।’

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা তরুণ মো.

সেলিম বলেন, ‘আরাকান আর্মি আমাকে প্রথম অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ দেওয়ার পর ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন পর আবার আমাকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে ১৭ দিন আটকে রেখে আমাকে অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়। তাদের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে নির্যাতন করা হয়। এভাবে ১৭ দিন পার করি। পরে একদিন সুযোগ বুঝে পালিয়ে চলে আসি।’

টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘সীমান্ত পার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন খবর পেয়েছি। এ ছাড়া ভারত থেকে আসা কয়েকজন রোহিঙ্গাও এখানে স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে।’ 

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলন, ‘তারা (রোহিঙ্গারা) নিজ দেশ থেকে জোরপূর্বক বাস্তুতচ্যুত হয়েছে এবং তাদের ওপর জেনোসাইড করা হয়েছে, তাই এ বিষয়ে তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয় হতে পারে। তবে সব রোহিঙ্গা ক্যাম্প সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে ৩৮ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই ১৯৯১ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। 

টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুদির দোকানে বসে গল্প করছিলেন দুই বন্ধু নুর মোহাম্মদ (৭৯) ও দিল মোহাম্মদ (৭৫)। ৩৪ বছর ধরে ক্যাম্পে আছেন তারা। নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আর কত বছর এ দেশে থাকতে হবে জানা নেই। মৃত্যুর দুয়ারে এসে পৌঁছেছি। হয়তো এপারে মৃত্যু হবেই। অন্তত নতুন প্রজন্ম যাতে আমাদের দেশে (মিয়ানমার) ফিরে যেতে পারে সেই আশায় দিন পার করছি।’ কুতুপালং ক্যাম্পের বসবাসকারী নুর হালিম বলেন, ‘শরণার্থী জীবন আর ভালো লাগে না। এ দেশে আর থাকতে চাই না। নাগরিকত্ব ও জীবনের নিরাপত্তা পেলে এখনই নিজ দেশে ফিরে যাব।’

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রায় আট বছর একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফেরত নেয়নি। তার ওপর সীমান্তে এখনও অনুপ্রবেশ থামেনি। ফলে স্থানীয়দের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের মানুষ নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে রয়েছে।’

বিজিবি সীমান্তে সবসময় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে বিজিবির টেকনাফ ২-ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বহু অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিহত করেছি। তবে বর্তমানে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সীমান্তে আমাদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ম ন ত প র কর আর ক ন আর ম ম হ ম মদ শরণ র থ আম দ র প রব শ র খ ইন ম বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

২৫ রাজনৈতিক দলের যেসব নেতারা অংশ নিলেন

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা যোগ দেন। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারা।

অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের নিম্নোক্ত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
১। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি
ড. রেদোয়ান আহমেদ, মহাসচিব
ড. নেয়ামূল বশির, প্রেসিডিয়াম সদস্য।

আরো পড়ুন:

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি যেসব দল

জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করলেন প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনীতিবিদেরা

২। খেলাফত মজলিস
মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, আমীর, খেলাফত মজলিস
ড. আহমদ আবদুল কাদের, মহাসচিব, খেলাফত মজলিস।

৩। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
হাসনাত কাইয়ুম, প্রধান সমন্বয়ক
সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন, মিডিয়া সমন্বয়ক।

৪। আমার বাংলাদেশ পাটি (এবি পার্টি)
মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু, চেয়ারম্যান
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সাধারণ সম্পাদক।

৫। নাগরিক ঐক্য
মাহমুদুর রহমান মান্না, সভাপতি
শহীদুল্লাহ কায়সার, সাধারণ সম্পাদক।

৬। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)
ববি হাজ্জাজ, চেয়ারম্যান
মোমিনুল আমিন, মহাসচিব।

৭। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহাসচিব
সালাহউদ্দিন আহমেদ, সদস্য, জাতীয় স্থায়ী কমিটি।

৮। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, সিনিয়র নায়েবে আমীর
মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মহাসচিব।

৯। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির
মিয়া গোলাম পরওয়ার, সেক্রেটারী জেনারেল।

১০। গণসংহতি আন্দোলন
জোনায়েদ সাকি, প্রধান সমন্বয়কারী
আবুল হাসান রুবেল, নির্বাহী সমন্বয়কারী।

১১। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)
শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, সাধারণ সম্পাদক
মিসেস তানিয়া রব, সিনিয়র সহ-সভাপতি।

১২। গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)
নুরুল হক নুর, সভাপতি
মো. রাশেদ খাঁন, সাধারণ সম্পাদক।

১৩। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
সাইফুল হক, সাধারণ সম্পাদক
বহ্নিশিখা জামালী, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য।

১৪। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট
ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সমন্বয়ক, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও চেয়ারম্যান, এনপিপি
বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান, সভাপতি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা।

১৫। ১২ দলীয় জোট 
শাহাদাত হোসেন সেলিম, মুখপাত্র, ১২ দলীয় জোট ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ এলডিপি।

১৬। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, প্রেসিডিয়াম সদস্য
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।

১৭। গণফোরাম
বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ অ্যাডভোকেট, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
ডা. মো. মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক।

১৮। জাকের পাটি
আলহাজ্ব শহীদুল ইসলাম ভুইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান
জহিরুল হাসান শেখ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, গাজীপুর জেলা ছাত্রফ্রন্ট।

১৯। জাতীয় গণফ্রন্ট
আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক
মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস, সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি।

২০। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি
মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী, সিনিয়র নায়েবে আমির
মাওলানা মুসা বিন ইযহার, মহাসচিব।

২১। বাংলাদেশ লেবার পার্টি
ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, চেয়্যারম্যান
খন্দকার মিরাজুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
২২। ভাসানী জনশক্তি পার্টি 
বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু), চেয়ারম্যান
ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম), মহাসচিব।

২৩। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, সহ-সভাপতি
মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মহাসচিব।

২৪। ইসলামী ঐক্যজোট
মাওলানা আব্দুল কাদের, চেয়ারম্যান
মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মহাসচিব।

২৫। আমজনতার দল
কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, সভাপতি
মো. তারেক রহমান, সাধারণ সম্পাদক।

এছাড়াও শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান এবং শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/আসাদ/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ