কেউ কেউ শুধু ক্ষমতা চায়, সংস্কার তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়: নাহিদ
Published: 13th, July 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘কেউ কেউ শুধু ক্ষমতা চাইছে। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল শুধু দ্রুত নির্বাচন চাইছে। সংস্কার তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। দেশের সংস্কারের জন্য যদি কেউ না থাকে, আমরা যারা জুলাই আন্দোলনে রাজপথে নেমেছিলাম, আমাদের আহ্বানে আপনারা যাঁরা নেমেছিলেন, যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আমরা রাজপথ থেকে সরে যেতে পারি না।’
আজ রোববার দুপুরে পিরোজপুর শহরের কৃষ্ণচূড়া মোড় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এনসিপির পথসভায় এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
পুরান ঢাকায় এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পথসভায় নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই চাঁদাবাজদের অত্যাচারে ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারছে না। ঢাকায় যে বীভৎসতম ঘটনা ঘটেছে, কীভাবে পাথর মেরে আমাদের এক ব্যবসায়ীকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদ জানাই।’
তাঁরা প্রতিটি জেলায় যাবেন উল্লেখ করে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, স্বৈরাচার সরকার জোর করে ১৬ বছর ক্ষমতায় টিকে ছিল। মানুষের প্রতি এমন কোনো নির্যাতন নেই যে করেনি। গুম, খুন, নির্যাতন, দুর্নীতি, লুটপাট ভোটাধিকার হরণ, সন্ত্রাস—এমন কোনো অপকর্ম নেই যে ফ্যাসিস্ট সরকার করেনি। তিন–তিনবার দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেননি।
সীমাহীন জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিলেন উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শুধু সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, পুলিশসহ রাষ্ট্রের সব বাহিনী যে জুলুম শুরু করেছিল, এই জুলুম থেকে পরিত্রাণের জন্য রাজপথে নেমে এসেছিলাম। গণ–অভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছিলাম রাষ্ট্র সংস্কার লাগবে, আমরা পুরোনো ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। আমরা দুর্নীতির ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই না। আমাদের আন্দোলনের মূল বিষয় ছিল বৈষম্য। বৈষম্যগুলো দূর করতে হবে। এই গণ–অভ্যুত্থানের পর আমরা যে সরকার পেয়েছি, আমাদের সবার উচিত সেই সরকারকে সহযোগিতা করা এবং দেশকে নতুন করে গড়ে তোলা।’
পথসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজবাহ কামাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাহিদা সারওয়ার নিভা, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, মাহমুদা মিতু, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোল্যা রহমাতুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবিনসহ পিরোজপুরের শতাধিক নেতা–কর্মী।
এর আগে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জুলাই আন্দোলনে পিরোজপুরের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের খোঁজখবর নেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম এনস প র আম দ র ব যবস সরক র র জপথ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমানী উদ্যানে আবার স্থাপনার পেছনে লক্ষ্য ‘টাকা কামানো’: বাপা
রাজধানীর ঐতিহাসিক ওসমানী উদ্যান উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নেতারা। তাঁদের ভাষায়, পুরান ঢাকার ফুসফুসখ্যাত এই উদ্যানকে ঘিরে চলছে ‘অর্থ কামাইয়ের উন্নয়ন’, যার সঙ্গে জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের ইতিহাস বা চেতনার কোনো সম্পর্ক নেই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ওসমানী উদ্যান পরিদর্শন করেন বাপার নেতারা। পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ কথাগুলো বলেন সংগঠনটির নেতারা।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের নেতৃত্বে উদ্যান পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন বাপার সহসভাপতি মহিদুল হক খান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা রুহিন হোসেন, বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক আমিনুর, ফরিদুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবির, নির্বাহী কমিটির সদস্য জাভেদ জাহান, জাতীয় কমিটির সদস্য শেখ আনছার আলী প্রমুখ। তাঁদের সঙ্গে গ্রীন ভয়েসের নেতা–কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সাল থেকে ওসমানী উদ্যান সাধারণ মানুষের জন্য বন্ধ। এই সময়ে উদ্যান উন্নয়নের নামে ব্যয় হয়েছে প্রায় শতকোটি টাকা। এখন সেখানে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণে আরও প্রায় ৪৭ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। পরিবেশবিদদের অভিযোগ, এই উদ্যানের আইনগত মর্যাদা উপেক্ষা করে বারবার অবকাঠামো নির্মাণই এখন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘উন্নয়ন’ নামে উদ্যানের ভেতরে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করে আসলে জনগণের সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে।
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘এখানে যেটা করা হইতেছে, এটা টাকা বানানো। এর সঙ্গে জুলাই ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রমাণটা হলো, এখানে যে ওয়াটার বডিজ আছে, ওখানে গেলেই দেখা যায়, ওখান থেকেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। এই স্মৃতি করে লাভটা কী? এই প্ল্যানটা আমি স্মৃতিস্তম্ভ বলি না, এটা স্রেফ মানি মেকিং প্রজেক্ট। আজকে যারা এগুলা (জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ) করছে, এগুলো কিছু মানি মেকিংয়ের জন্য করছে। এর মধ্যে আমি কোনো সঠিক প্ল্যানও দেখছি।’
ওসমানী উদ্যানকে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ‘যেই সরকারই আসুক, তাদের মাথায় থাকে শুধু উন্নয়নের নামে টাকা কামানোর চিন্তা। বহুদিন ধরে উদ্যানটা ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা, জনগণ ঢুকতেই পারে না। এই প্রকল্পে জনগণের টাকা লুটপাট ছাড়া অন্য কোনো কর্মকাণ্ড আমি দেখি না। ওসমানী উদ্যান জনগণের সম্পদ। এই উদ্যান উন্মুক্ত থাকা দরকার। বিশেষ করে মেহনতি, সাধারণ মানুষের হাঁটাচলার ও বিশ্রামের জায়গা হিসেবে। অথচ আজ সেটাকে দখল করে তথাকথিত উন্নয়ন দেখানো হচ্ছে। আসলে এটা পরিবেশ ধ্বংসেরই আরেক নাম।’
ওসমানী উদ্যান পরিদর্শন শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে গিয়ে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ক্ষোভের কথা জানান বাপার নেতারা। এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বাপা নেতাদের বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে ওসমানী উদ্যানে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
আরও পড়ুনওসমানী উদ্যান: ঢাকার ‘ফুসফুসে’ আবার স্থাপনা ১১ অক্টোবর ২০২৫