নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব না দিলে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে: ইকবাল হাবিব
Published: 29th, July 2025 GMT
তরুণদের অধিকার, বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত করতে উন্মুক্ত স্থান, খেলার মাঠ, পার্ক এবং পরিবেশকে সনদে জায়গা দিতে হবে। যেন আগামী নির্বাচিত সরকার বা যারা নির্বাচন করবে, তাদের প্রত্যেকের ইশতেহারে যেন এটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে থাকে। আর তা যদি না হয়, নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি দলকে আমাদের মুখোমুখি হতে হবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস আয়োজিত সমাবেশে নগরবিদ ও পরিবেশবাদী ইকবাল হাবিব এ কথা বলেন। সারা দেশের খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণে ‘পদযাত্রা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান’ শীর্ষক সমাবেশটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ১৯টি সংগঠন এতে অংশ নেয়।
স্মারকলিপি প্রদান প্রসঙ্গে ইকবাল হাবিব বলেন, ‘আমরা সংস্কারের নামে আলোচনা দেখি, সমঝোতা দেখি, সনদ দেখি। কিন্তু এই সংস্কার আর সনদের সব কর্মকাণ্ডের মধ্যে পরিবেশ, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানের কোনো স্থান হলো না। যে যুবক, যে তারুণ্যের হাত ধরে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, সেই তারুণ্যকে প্রহসনের মধ্য ঠেলে দেওয়ার এই অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানানোর জন্য এবং এই নতুন সনদ বা বন্দোবস্তের মধ্যে পরিবেশ, মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ককে যুক্ত করার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ সমঝোতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আজকে এই স্মারকলিপি দেওয়ার আয়োজন।’
নারী ফুটবল দল একের পর এক সম্মানের মুকুট আনলেও নগরগুলোতে তাদের খেলার জন্য এক ইঞ্চি জায়গা নেই উল্লেখ করে এই স্থপতি বলেন, এসব ভয়াবহ অসংগতি, ভয়াবহ বৈষম্য। সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই অন্তর্ভুক্তিতার লড়াই, অন্তর্ভুক্তিতার সংগ্রাম। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সনদ, সংস্কার, বন্দোবস্তের গল্প বলা হচ্ছে। আজকের এই স্মারকলিপিকে আমলে নিয়ে সব দল, মত, প্রধান উপদেষ্টা যেন সনদে স্বাক্ষর করেন। সেটা না হলে তরুণ সম্প্রদায়কে এভাবে খেলাচ্ছলে প্রতারণা ও প্রহসনের চেষ্টা যেন না করা হয়।
সরকার আইন বানিয়ে নিজেরাই ভঙ্গ করে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি (বাপা) অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার। তিনি প্রশ্ন করেন, সরকারি হাউজ বিল্ডিংয়ের কোনো ক্যাম্পাসে কি খেলার মাঠ আছে? যেভাবে মানুষ বেড়েছে, ঠিক সেই হারে খেলার মাঠ কমেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। মাঠ শুধু খেলোয়াড়দের জন্যই দরকার নয়, মাঠের পাশে পার্ক প্রবীণদের অবকাশ বা বিশ্রামের জন্যও দরকার। সরকার বদল হলে শুধু সাইনবোর্ড বদলানো নয়, সবাই কাজ দেখারও আশা করে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সম্মিলিতভাবে মোট ৫৪টি নিবন্ধিত পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান রক্ষণাবেক্ষণ করে। এগুলো ৩০৫ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। অর্থাৎ প্রতি ১০০০ জন নগরবাসীর জন্য মাত্র শূন্য দশমিক ০২ একর উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। যা ঢাকা সিটি করপোরেশনের মোট এলাকার মাত্র শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ। এই উন্মুক্ত স্থানগুলোর একটি বড় অংশ অননুমোদিত ও অবৈধ ব্যবহারের কারণে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, দেশে তথাকথিত উন্নয়নের নামে খালি টাকা কামাইটা প্রধান হয়ে গেছে। ফাঁকা জায়গা মানে জনগণের জায়গা। এসব রক্ষা করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন না করার কারণে সেগুলো দখলদারি বা মাদকের আখড়ায় রূপান্তরিত হয়। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে উন্মুক্ত জায়গা সাধারণ মানুষের জন্য, বিশেষ করে তরুণদের জন্য খেলার মাঠের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
সারা দেশে খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের দাবিতে পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সমাবেশ। আজ সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও উন ম ক ত স থ ন স ম রকল প র জন য পর ব শ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।