মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় আখক্ষেতে পেতে রাখা বৈদ্যুতিক ফাঁদে শাহিন (১৪) নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার (১৩ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে গজারিয়া উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কলসেরকান্দী গ্রামের সাইদুর রহমানের আখক্ষেত থেকে ওই কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতের কোনো একসময়ে বিদ্যুৎস্পর্শে মারা যায় শাহিন। সে উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ইসমানিরচর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে।

আরো পড়ুন:

কুষ্টিয়ায় বজ্রপাতে ২ কৃষকের মৃত্যু

নৌকায় বিস্ফোরণে দগ্ধ আরো একজনের মৃত্যু

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিয়ালসহ অন্যান্য প্রাণী থেকে আখক্ষে‌ত রক্ষায় বৈদ‌্যু‌তিক ফাঁদ তৈ‌রি ক‌রেন জমির মালিক সাইদুর রহমান সেন্টু। মঙ্গলবার রাতের কোনো একসময়ে শাহিন ওই ফাঁদে বিদ‌্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আখক্ষেতে প‌ড়ে থা‌কে। সকালে কয়েকজন পথচারী স্থানীয় সড়ক দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় শাহিন‌কে পড়ে থাক‌তে দেখে তার পরিবার ও পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহিনের মরদেহ উদ্ধার করে। 

এদিকে, শাহিনের মরদেহ উদ্ধারের পর জমির মালিক সাইদুর রহমান সেন্টু বাড়ি থেকে পালিয়েছেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কিরণ সরদার জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছে শাহিন।

গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ার আলম আজাদ জানিয়েছেন, ওই কিশোরের মরদেহ সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।

ঢাকা/রতন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

ধারদেনা করে শুরু, এখন তিনি কোটিপতি পোনাচাষি

একসময় পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর পূর্ব পাড়ার আবদুর রশিদের জীবন ছিল অভাবে ভরা। কখনো অন্যের জমিতে কাজ করে, কখনো ফেরি করে মাছ বিক্রি করে দিন চলত তাঁর। সেই অবস্থা থেকে এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক আবদুর রশিদ।

আবদুর রশিদ জানান, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) মাছ চাষের একটি বিজ্ঞাপন দেখে তাঁর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের শুরু। ওই বিজ্ঞাপনে অনুপ্রাণিত হয়ে গরু বিক্রি ও ধার–দেনা করে সাত হাজার টাকা জোগাড় করেন। সেই টাকায় শুরু করেন মাছের পোনা উৎপাদন। এরপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি এলাকার পোনাচাষিদের কাছে অনুপ্রেরণা। তবে তাঁর এই ব্যবসার প্রসার ঘটে ২০০৭ সালের পর থেকে।

আবদুর রশীদ জানান, বিয়ের এক বছরের মাথায় সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু সেই সময় সন্তানের দুধ কেনার আর্থিক সামর্থ্যও ছিল না তাঁর। একমাত্র সম্বল ছিল একটি ছাপড়া টিনের ঘর। তখন বিটিভিতে রেণু পোনা চাষের বিজ্ঞাপন তাঁকে নতুন স্বপ্ন দেখায়। তিনি তখন এলাকার একজনের কাছ থেকে ৮ শতাংশ জমির একটি পুকুর ইজারা নেন দেড় হাজার টাকায়। এরপর বাবার কাছ থেকে গরু বিক্রি ও ধার–দেনা করে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে ওই পুকুরে ডিমপোনা ছাড়েন। তাতে মাত্র পাঁচ মাসেই প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয় তাঁর।

প্রথম বছরের লাভের টাকা দিয়ে আরও তিনটি পুকুর ইজারা নিয়ে পোনা চাষ শুরু করেন রশিদ। তাতে মাস ছয়েক পর তিনি সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেন ৫৫ হাজার টাকা। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা প্রোগ্রামস ফর পিপলস ডেভেলপমেন্টের (পিপিডি) পরামর্শে ও সহযোগিতায় এভাবেই তিনি ধাপে ধাপে পোনা চাষের খামার বা পুকুরের আওতা বাড়ান। এখন তাঁর নিজস্ব মালিকানায় আছে তিনটি পুকুর। আর ইজারা নিয়েছেন আরও ২২টি পুকুর। নিজের ও ইজারায় নেওয়া মোট ২৫টি পুকুরে বছরে পাঁচ থেকে সাত ধাপে ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি কার্প জাতীয় মাছের ডিমপোনা ছাড়েন তিনি। প্রতি কেজি ডিমপোনার দাম পড়ে প্রায় ৫ হাজার টাকা। এক মাসেই এসব পোনা এক থেকে দেড় ইঞ্চি আকারের হয়। তখন থেকেই শুরু হয় বিক্রি। পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের খামারিরা আবদুর রশিদের কাছ থেকে সারা বছরজুড়ে পোনা কেনেন।

আবদুর রশিদ জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার পোনা বিক্রি করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে তাতে বছরে তাঁর লাভ থাকে ২৫ লাখ টাকার মতো। সেই অর্থে সংসার খরচ মিটিয়ে প্রতিবছর কিছু কিছু জমি কেনেন। এখন তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকার। একসময়ের ছাপড়া টিনের ঘরের মালিক আবদুর রশিদ তিন বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন বাড়ি। আর কৃষিজমি আছে পাঁচ বিঘা। নিজের পাঁচ সন্তান এখন তাঁর এই পোনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে জানান আবদুর রশিদ নিজেই।

সম্প্রতি কথা হয় আবদুর রশিদের দুই ছেলে নাজমুল হোসেন ও সেলিম হোসেনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এখন আমরাও খামারের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। পোনা চাষ আমাদের পরিবারের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।

আর আবদুর রশিদ বলেন, ‘খালি হাতে শুরু করিছিলাম। পরিশ্রম বৃথা যায়নি। মাছের পোনা চাষে পরামর্শ নেওয়ার জন্য এখন এলাকার অনেকেই আমার কাছে আসেন। আমি তাঁদের সাধ্যমতো সহায়তা করার চেষ্টা করি। পোনা বিক্রি করে এখন আমার প্রতিবছর ভালো লাভ হয়। সেই লাভের টাকায় জমি কিনি।’

আবদুর রশিদ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা পিপিডির মৎস্য কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘একটি ছোট পুকুর দিয়ে পোনা চাষ শুরু করেছিলেন। এখন ২৫টি পুকুরে চাষ করেন। শুরু থেকেই আমরা তাঁকে এই কাজে পরামর্শ দিয়েছি। নানা প্রশিক্ষণেও অংশ নিয়েছেন। এখন তিনি এলাকার একজন সফল উদ্যোক্তা। স্থানীয়ভাবে অনেকেই তাঁর দেখানো পথে পোনা চাষে এগিয়ে এসেছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধারদেনা করে শুরু, এখন তিনি কোটিপতি পোনাচাষি