যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের কারখানাগুলোয় তৈরি পোশাকের বাড়তি ক্রয়াদেশ দিতে দর–কষাকষি করছে অনেক মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ভারত ও চীনে উচ্চশুল্কের কারণে সেখান থেকে ক্রয়াদেশ সরিয়ে আনতে চায় এসব ক্রেতা।

শুধু তা–ই নয়, দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন ক্রয়াদেশ ধরে রাখার কৌশল হিসেবে ভারতের বড় রপ্তানিকারকেরা তৈরি পোশাক উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এ ছাড়া চীনা বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গত দুই সপ্তাহে দুটি চীনা প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করতে চুক্তিও সম্পাদন করেছে।

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, গত দুই সপ্তাহে মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান আসছে। আগের স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশও ফিরতে শুরু করেছে। তবে যারা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন ক্রেতাদের কাজ করছে, তাদের কাছেই এখন বেশি অনুসন্ধান আসছে। তার একটি বড় অংশ ভারত থেকে স্থানান্তরিত ক্রয়াদেশ।

বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানিতে একক বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৩১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক সংশোধন করে ২০ শতাংশ করেন। তার বিপরীতে চীনা পণ্যে এখন শুল্ক ৩০ শতাংশ। তবে ভারতের পণ্যে শুল্কের হার ২৫ শতাংশ, যা প্রতিযোগী দেশের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। শুধু তা–ই নয়, রাশিয়ার জ্বালানি কেনার ‘অপরাধে’ ভারতের পণ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ২৭ আগস্ট ভারতের বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। যদিও সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক ৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, সব উৎপাদক দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই শুল্ক ভোক্তারা কতটুকু গ্রহণ করে, সেটি দেখতে চাইবে অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ভোক্তারা যদি শুল্কের বিষয়টি ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে, তাহলে ক্রয়াদেশ বাড়বে।

আগামী বসন্তের জন্য আমাদের কাছে ৫-১০ শতাংশ বাড়তি ক্রয়াদেশ রয়েছে। আর গ্রীষ্মের জন্য ১০-১৫ শতাংশ বাড়তি ক্রয়াদেশ আছে। এ জন্য আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৩ ঘণ্টার ওভারটাইম করানোর অনুমতি নিয়েছিশোভন ইসলাম, এমডি, স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রি

বিজিএমইএর সভাপতি আরও বলেন, যেসব মার্কিন ক্রেতা ভারতে কাজ করে, তবে বাংলাদেশে করে না, সেসব ক্রেতার ক্রয়াদেশ নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ, নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড তার মোট উৎপাদনের নির্দিষ্ট অংশ একটি দেশে উৎপাদন করে। ফলে সাময়িকভাবে ক্রয়াদেশ এলেও ভবিষ্যতে না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

কারখানায় ক্রয়াদেশের চাপ

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্নোটেক্স গ্রুপ। বিদায়ী অর্থবছরে ৩০ কোটি ডলারের কাছাকাছি তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গেছে ২৮ শতাংশ পোশাক। ইতিমধ্যে তারা কয়েকটি মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়তি ক্রয়াদেশের অনুসন্ধান পেয়েছে।

জানতে চাইলে স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এম খালেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কারখানায় গত বছর একটি মার্কিন ক্রেতার জ্যাকেটের কাজ হয়েছে ৭ লাইনে। তারা বাড়তি যে ক্রয়াদেশ দিতে চাচ্ছে, তাতে মোট ১৭ লাইন লাগবে। আবার আরেকটি মার্কিন ক্রেতার জন্য গত বছর ২০টি লাইনে পণ্য উৎপাদন করেছি। তারা বাড়তি ১০ থেকে ১৫ লাইনের পণ্য উৎপাদনের ক্রয়াদেশ দিতে চাচ্ছে। এসব ক্রয়াদেশ মূলত চীন ও ভিয়েতনাম থেকে সরিয়ে আনতে চাচ্ছে ক্রেতারা।’

এস এম খালেদ আরও বলেন, ‘বাড়তি ক্রয়াদেশের কাজ করতে আমাদের আড়াই লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ লাগবে। আমাদের প্রত্যাশা, সবকিছু অনুকূলে থাকলে চলতি অর্থবছরে আমাদের রপ্তানি ৩৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’

এদিকে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৬ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। গত অর্থবছর রপ্তানি হয়েছে ৭৫৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

আরেক শীর্ষস্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভারত থেকে ক্রয়াদেশ সরিয়ে আনতে একাধিক মার্কিন ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা চলছে। শুধু তা–ই নয়, পরবর্তী বছরের গ্রীষ্মে ভিয়েতনাম থেকে ক্রয়াদেশ সরিয়ে আনতে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তার কারণ, ওই ক্রেতা চীন থেকে উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাক ভিয়েতনামে সরাচ্ছে। আর ভিয়েতনাম থেকে মাঝারি মূল্যের তৈরি পোশাক সরিয়ে আনছে বাংলাদেশে।

এক প্রশ্নের জবাবে শোভন ইসলাম বলেন, ‘আগামী বসন্তের জন্য আমাদের কাছে ৫-১০ শতাংশ বাড়তি ক্রয়াদেশ রয়েছে। আর গ্রীষ্মের জন্য ১০-১৫ শতাংশ বাড়তি ক্রয়াদেশ আছে। এ জন্য আমরা ক্রেতাদের কাছ থেকে ২ ঘণ্টার পরিবর্তে ৩ ঘণ্টার ওভারটাইম করানোর অনুমতি নিয়েছি। ভারত ও চীন থেকে সরে আসা ব্যবসা ধরে রাখতে সরকারের কাছ থেকে সহায়তা লাগবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।’

আসছে চীনা বিনিয়োগ

চীনা কোম্পানি হান্ডা (বাংলাদেশ) গার্মেন্টস কোম্পানি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের জন্য প্রায় চার কোটি ডলারের বিনিয়োগ করবে। এ জন্য ৩০ জুলাই বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) সঙ্গে জমি ইজার চুক্তি করেছে হান্ডা।

এ ছাড়া চীনের তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান খাইশি গ্রুপ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে। প্রতিষ্ঠানটি চার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে অন্তর্বাসসহ অন্যান্য পোশাক উৎপাদনের কারখানা করবে। এ জন্য গত বুধবার বেপজার সঙ্গে চুক্তি করেছে খাইশি গ্রুপ।

জানা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি চীনা বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বেপজা। গত জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত আটটি চীনা প্রতিষ্ঠান শিল্প স্থাপনের লক্ষ্যে বেপজার সঙ্গে চুক্তি করেছে। তাদের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫ কোটি ডলার। এসব কোম্পানি তৈরি পোশাকের পাশাপাশি ব্যাগ, হালকা প্রকৌশল পণ্য ইত্যাদি উৎপাদন করবে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীনা বিনিয়োগ আসা খুবই ইতিবাচক। কারণ, তারা বিনিয়োগ করার পাশাপাশি ক্রেতাও নিয়ে আসবে। তাতে আমাদের রপ্তানি বাড়বে।’ তিনি আরও বলেন, প্রতিযোগী দেশের তুলনায় শুল্ক কম হওয়ায় আমরা সুবিধাজনক অবস্থান রয়েছি। তবে বাড়তি ক্রয়াদেশ নিতে হলে ব্যাংকের সহযোগিতা, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ ও কাস্টমসের সহযোগিতা লাগবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প রথম আল ক ব ন য় গ কর র জন য এ জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে

বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন বছর বাংলাদেশের মাছ আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাপকভাবে কমেছে সামুদ্রিক ইলিশ, কাঁকড়া ও চিংড়ি আহরণ। সাগর থেকে মাছ ধরার পরিমাণ কমতে থাকায় সার্বিকভাবে দেশের মাছের জোগানের গতিও কমে গেছে। যদিও ভিন্ন চিত্র প্রতিবেশী দেশগুলোর। বছর বছর সাগর থেকে মাছ ধরা বাড়িয়ে মাছ আহরণে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ভারত। এমনকি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারেও প্রতিবছর বাড়ছে সামুদ্রিক মাছ আহরণ।

সাগর থেকে বাংলাদেশের মাছ আহরণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়কে দায়ী করছেন এ দেশের মৎস্য কর্মকর্তারা। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণেও মাছের মজুত কমে আসছে বলে জানান তাঁরা।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট সামুদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৬ হাজার টন। পরের অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার টনে। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ২৮ হাজার টনে। অর্থাৎ ২০২২–২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে মাছ আহরণ প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও কমেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এখনো অনুষ্ঠানিকভাবে গত অর্থবছরের তথ্য প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।

সমুদ্র খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সাগরে অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে মাছের মজুত কমে গেছে। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক শাখার সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ২০ বছর আগেও সাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারের সংখ্যা ছিল এক শর কম। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৫টিতে। তিনি জানান, সাগরের ৪০ মিটারের ভেতরে মাছ না ধরার কথা থাকলেও এসব নৌযান তা মানছে না। আবার ছোট নৌযানের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এসব নৌযানেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাদের ব্যবহার করার কথা নয়। পাশাপাশি অবৈধ জালও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি উপকূলের ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে ডিম থেকে নতুন পোনা তৈরির সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।

বিশ্বে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ভারত ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১–২২ সালে সাগর থেকে দেশটির মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৭ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার টন মাছ আহরণ করেছে ভারত।

মিয়ানমারের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ২০২০-২১ সালে সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৯৫ হাজার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টনে। অর্থাৎ গৃহযুদ্ধের মধ্যেও দেশটির সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়ছে।

এদিকে বাংলাদেশে সাগরে সবচেয়ে বেশি আহরণ কমছে ইলিশ ও চিংড়ির। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে ইলিশ আহরণ তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে। আর চিংড়ির আহরণ কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। কাঁকড়া আহরণও কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি।

সাগর থেকে মাছ আহরণ কমে যাওয়া এবং এ বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকেই চিংড়ি আহরণ কমে যাওয়ার তথ্য পাচ্ছিলাম। তাই সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালায় চিংড়ি ধরার ট্রলারের লাইসেন্স আর না বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করি। ২০২৮ সাল পর্যন্ত এসব ট্রলাররের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।’

সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়াতে হলে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণহীন মৎস্য আহরণকে নজরদারির মধ্যে আনার কথা বলছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি ট্রলারে স্যাটেলাইট ট্রেকার বসিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রলার ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ তাঁর।

এদিকে মাছ আহরণ কমতে থাকায় সাগরের ওপর নির্ভরশীল জেলেরাও বিপাকে পড়ছেন। ঋণের দাদনের টাকা শোধ করে লাভের অঙ্ক মিলছে না তাঁদের। কক্সবাজারে পাঁচ হাজারের বেশি মাছ ধরার কাঠের নৌযান আছে। এসব নৌকায় এখন মাছ ধরা পড়ছে কম। কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টানা ছয় থেকে সাত মাস তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। কয়েক বছর ধরেই মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের জন্য সাগরে গেলে দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু মাছ কম পাওয়ায় দাদন পরিশোধ করাই এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্লু ইকোনমি সেলের পরিচালক মো. সাজদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে এখন ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। সাগরের তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া জেলিফিশের প্রকোপ বেড়েছে। আর অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে মাছের মজুত কমছে। তাই মাছ আহরণ আরও কমিয়ে আনতে হবে।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির এক সভায় গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘ভারতের জেলেরা যাতে বাংলাদেশে এসে মাছ ধরতে না পারেন, সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে সাগর থেকে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টন মাছ ধরা হয়। যার মধ্যে অর্ধেক মাছ আহরণ করেছে এশিয়ার দেশগুলো। ওই বছর বিশ্বের মোট সামুদ্রিক মাছের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশই আহরণ করেছিল চীন, যার পরিমাণ ১ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার টন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া ওই বছর আহরণ করেছে ৬৮ লাখ ৪৩ হাজার টন মাছ। আর ভারত আহরণ করেছে ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার টন। যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল বৈশ্বিক মাছ আহরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়েস্টিন ও শেরাটনের ব্যবসা বেড়েছে 
  • নভেম্বরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ব্যবসা বেড়ে তিন গুণ
  • তিন মাসে ওয়ালটনের মুনাফা ২২১ কোটি টাকা
  • সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে