ঋণের সাড়ে ৩ লাখ বায়নানামায় হলো ৮১ লাখ টাকা!
Published: 13th, October 2025 GMT
স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা। সেই স্বাক্ষর ব্যবহার করে বায়নানামা বানিয়ে জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৮১ লাখ ৮২ হাজার টাকা! এমনই প্রতারণার অভিযোগ থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার মঠবাড়ী এলাকার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ বিপ্লব গমেজ।
ভুক্তভোগী বিপ্লব কালীগঞ্জের নাগরী ইউনিয়নের মঠবাড়ী গ্রামের সুনীল গমেজের ছেলে। অভিযুক্ত মো.
বিপ্লব গমেজের অভিযোগ, পারিবারিক প্রয়োজনে গত ১১ মার্চ তিনি পূর্বপরিচিত সাইদুল ইসলামের কাছ থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। শর্ত ছিল—প্রতি মাসে ওই টাকার ওপর ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। তখন সাইদুল জানিয়েছিলেন, অর্থ লেনদেনে স্বচ্ছতার জন্য স্ট্যাম্পে লিখে রাখা হবে।
বিপ্লব বলেন, “সেদিন দক্ষিণ মঠবাড়ীর বেনুর বাড়ির ভাড়াটিয়া শুকুমারের কক্ষে সাইদুল নগদ টাকা দেন। আমি না পড়েই স্ট্যাম্পে সই করে দিই। বুঝতেই পারিনি, এর ভেতর এমন প্রতারণার ফাঁদ লুকানো ছিল।”
তিন মাস পর টাকা ফেরত দিতে গেলে সাইদুল নানা অজুহাত দেখাতে শুরু করেন। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে বিপ্লব জানতে পারেন, তার নামে জমি বিক্রির বায়নানামা দলিল তৈরি হয়েছে।
গত ২৩ জুলাই কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দলিল (নম্বর ২৩৯২/২৫) সংগ্রহ করে তিনি জানতে পারেন, সাইদুল ইসলাম প্রতারণার মাধ্যমে ১১ মার্চ একটি দলিল সম্পাদন করেছেন। সেখানে উল্লেখ আছে— বিপ্লব গমেজ মঠবাড়ী মৌজার ৯ শতাংশ জমি ৮১ লাখ ৮২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন এবং ৭০ লাখ টাকা নগদ নিয়েছেন!
বিপ্লবের দাবি, “আমি কোনো জমি বিক্রি করিনি। মাত্র ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। আমার সই ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে তারা আমার জমির দলিল করেছে।”
এ ঘটনায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ২৪ জুলাই এক সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বিপ্লব ঋণ মেটাতে মোট ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করবেন। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে তিনি ৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হন।
বিপ্লব বলেন, “আমি নগদ ৭ লাখ টাকা নিয়ে সাইদুলের বাড়িতে যাই। কিন্তু, সে টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। উল্টো আমাকে ভয়-ভীতি দেখায়।”
তিনি আরো বলেন, “এ ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত। পরিকল্পিতভাবে প্রতারণা করে আমার জমির ওপর দলিল সম্পাদন করেছে তারা। আমি প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার চাই।”
বিপ্লবের ছোট ভাই তুষার গমেজ বলেন, সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আগেও এরকম প্রতারণার অভিযোগ আছে। ধার দেওয়ার নামে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে পরে সেটিকে বায়নানামায় রূপান্তর করার একটি চক্র এলাকায় কাজ করছে।”
ঋণ নেওয়ার সময় সাক্ষী ছিলেন সেনপাড়া গ্রামের আহামত শেখের ছেলে মতিন শেখ, কেটুন গ্রামের নারায়ণ করের ছেলে সঞ্চয় কর ও মঠবাড়ী গ্রামের যতীন্দ্র করের ছেলে রিপন কর।
রিপন কর বলেন, “বিপ্লব ভাই পারিবারিক প্রয়োজনে টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সিকিউরিটি হিসেবে জমির কাগজ রাখেন সাইদুল। কথা ছিল, টাকা ফেরত দিলে কাগজ ফেরত দেবে। কিন্তু, পরে সাইদুল প্রতারণা করে জমি বায়না দেখিয়েছে। এটা সত্যিই দুঃখজনক।”
তবে, সাইদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমি টাকা দিয়ে তার কাছ থেকে জমি কিনেছি। হয়ত এখন অন্য কোথাও বেশি দাম পাচ্ছেন, তাই এমন অভিযোগ করছেন। অনেক আগেই জমিটি নিয়েছি, এখন অভিযোগ তোলার কারণ বুঝতে পারছি না।”
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেছেন, “অভিযোগটি আমরা পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/রফিক সরকার/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্লট না নিলেও টিউলিপের সাজা যে কারণে
শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে পূর্বাচলের ছয়টি প্লট নিয়ে ছয়টি মামলা হয়েছে; এর একটি প্লটও তাঁর ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের নামে নেই। কিন্তু তিনটি মামলায় তিনি আসামি, এর একটিতে তাঁর কারাদণ্ড হলো।
আজ সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক মো. রবিউল আলমের দেওয়া রায়ে টিউলিপকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে তাঁকে। অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাঁকে আরও ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য, সাবেক মন্ত্রী টিউলিপকে সাজা দেওয়ার কারণ হলো, তিনি তাঁর মা শেখ রেহানার নামে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দে তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছিলেন।
টিউলিপকে ‘প্রিভেনশন অব করাপশন অ্যাক্ট ১৯৪৭’–এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, আসামি টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব সালাহ উদ্দিনকে মোবাইল, ইন্টারনেটের বিভিন্ন অ্যাপসহ সরাসরি যোগাযোগ করে প্রভাবিত করেছেন বলে সাক্ষীদের জবানবন্দির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পূর্বাচলে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা নিজের নামে একটি প্লট নেওয়ার পাশাপাশি তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, ভাগনি আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামেও প্লট বরাদ্দ হয়। ২০২২ সালে তাঁরা প্লটগুলো গ্রহণ করেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন এই প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে। তারপর গত জানুয়ারিতে ছয়টি প্লট নিয়ে ছয়টি মামলা করে। তাতে অভিযোগ করা হয়, আবেদনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর এই প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া তাদের নামে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বাড়ি থাকায় তাঁরা আইনত নতুন করে প্লট বা ফ্ল্যাট পেতে পারেন না।
আরও পড়ুনটিউলিপের ২, রেহানার ৭ ও হাসিনার ৫ বছর কারাদণ্ড৫ ঘণ্টা আগেশেখ রেহানার প্লট দুর্নীতির মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আজ সোমবার ঢাকার আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল