বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে উৎসবের আমেজ, প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ
Published: 13th, October 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন আজ সোমবার। রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। দিন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন এলাকাজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ—প্রার্থীদের ব্যস্ততা, শিক্ষার্থীদের ভিড়, আর গান ও স্লোগানে মুখর পুরো এলাকা।
সন্ধ্যার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ভিড় বাড়তে থাকে। কেউ গান গেয়ে, কেউ চরিত্রাভিনয় করে, কেউবা প্রচারপত্র বিলি করে ভোট চান। রাত সাড়ে নয়টার পর শাটল ট্রেন পৌঁছালে স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় জমে যায়। দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেলফি তুলে, হাত মেলাচ্ছেন, স্লোগান দিচ্ছেন—পুরো পরিবেশ এক নির্বাচনী উৎসবে পরিণত হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘আজ স্টেশনটা যেন উৎসবের মাঠে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই চারদিক থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হচ্ছে। প্রার্থীরা দৌড়ে দৌড়ে প্রচারপত্র বিলাচ্ছে, গান গাইছে। মনে হচ্ছে, ক্যাম্পাসে মেলা বসেছে।’
ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম সোহাগ বলেন, ‘স্টেশনে সব প্যানেলের প্রার্থীদের একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। কেউ ভোট চাইছে, কেউ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গেও কুশল বিনিময় করছে—এমন পরিবেশ ভালো লাগছে। আশা করি, নির্বাচনের আমেজ সুন্দরভাবে শেষ হবে।’
শারীরিক শিক্ষা ও স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী নিবেদিত নিতু বলেন, ‘দুপুর থেকেই ভিড় ছিল, কিন্তু রাতে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। শাটল ট্রেন আসার পর স্টেশন যেন উৎসবে পরিণত হয়। প্রার্থীরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মন টানতে চেষ্টা করছে।’
চাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ৫০০ শিক্ষার্থীর ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য ২৬টি ও হল সংসদের জন্য ১৪টিসহ মোট ৪০টি ভোট দেবেন। প্রতিজনের জন্য গড়ে ১০ মিনিট সময় ধরা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আমরা ৭০০টি বুথের পরিকল্পনা নিয়েছি।’
প্রায় তিন দশক পর ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম চাকসু নির্বাচন। একই দিনে হবে হল সংসদ নির্বাচনও। এ পর্যন্ত ১৩টি প্যানেলের মধ্যে ১২টি তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। শুধু ‘সর্বজনীন ছাত্র ঐক্য পরিষদ’ প্যানেল এখনো ইশতেহার ঘোষণা করেনি।
ভোট গ্রহণ হবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপরই শুরু হবে গণনা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এবার দুর্গাপূজায় বড় অঘটন হয়নি, তবে সরকারের পদক্ষেপে আয়োজকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়
এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসাহ–উদ্দীপনায় উদ্যাপিত হলেও কোনো কোনো প্রতিমার অবয়বে অশুভশক্তির প্রকাশে শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অসচেতনতাকে কেন্দ্র করে সরকারের আইনি পদক্ষেপ পূজার আয়োজক ও প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক তৈরি করেছিল বলে জানিয়েছে পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
আজ সোমবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। উপস্থিত ছিলেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সহসভাপতি অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সহসভাপতি গোপাল চন্দ্র দেবনাথ প্রমুখ।
সারা দেশে এবার অত্যন্ত সুন্দরভাবে পূজা উদ্যাপিত হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনের বাসুদেব ধর বলেন, এই উৎসব আয়োজনে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে তাঁদের পাশে ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোরও সক্রিয় সহযোগিতা তাঁরা পেয়েছেন। এই মাটির হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে যে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি পথ দেখিয়েছে, এবারের উৎসব তারই ধারা বহন করতে পেরেছে।
দুর্গোৎসব শুরু হওয়ার আগে অন্তত ১৪টি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে জানিয়ে বাসুদেব ধর বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কারণে কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা ধরাও পড়ে। পূজার পাঁচ দিন দেশের কোথাও বড় মাত্রায় অঘটনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। পূজার পরও সে রকম কোনো খবর আসেনি। সরকারের কঠোর অবস্থান, বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সক্রিয় ও সতর্ক ভূমিকা এই ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
পূজা ‘সুন্দরভাবে’ হলেও কোনো কোনো প্রতিমার অবয়বে অশুভশক্তির প্রকাশে শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অসচেতনতাকে কেন্দ্র করে সরকারের পদক্ষেপে পূজার আয়োজক ও প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি হয়েছিল বলে জানান বাসুদেব।
‘প্রতিমায় যে অবয়ব প্রকাশের কথা বলা হচ্ছে, তা নতুন বা হঠাৎ এ বছরই হয়েছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতে অনেক প্রতিমায় তা শিল্পী বা অয়োজকেরা নানাভাবে প্রকাশ করেছেন। এবার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।বাসুদেব ধর, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতিবাসুদেব ধর বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হওয়ার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ৫ অক্টোবর “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” হানার অজুহাতে শিল্পী, পূজারি ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ঘোষণার পর কিছু পদক্ষেপের কথা জানা যাচ্ছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের ও সরকারি তদন্তের কথা বলা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের পর পূজার আয়োজক ও প্রতিমাশিল্পীদের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে যেকোনো পূজা-পার্বণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
সরকার বিষয়টি নজরে আনার পর সম্ভাব্য অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়াতে পূজা উদ্যাপন পরিষদ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল জানিয়ে বাসুদেব বলেন, ‘সরকার, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি একযোগে সমস্যাটির সমাধান করে। এতে পূজার উৎসবে ভাটা পড়েনি। অথচ পূজা শেষ হওয়ার পর বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নানাভাবে হয়রানি ও নিপীড়নের মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে একসঙ্গে কাজ করার যে নজিরবিহীন ধারাটি তৈরি হয়েছে, তা–ও গতি হারাতে পারে।’এ প্রসঙ্গে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি আরও বলেন, প্রতিমায় যে অবয়ব প্রকাশের কথা বলা হচ্ছে, তা নতুন বা হঠাৎ এ বছরই হয়েছে, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতে অনেক প্রতিমায় তা শিল্পী বা অয়োজকেরা নানাভাবে প্রকাশ করেছেন। এবার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন না।
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ‘অস্বীকারের রাজনীতি’ দেখে আসার কথা জানিয়ে বাসুদেব ধর বলেন, ‘দুঃখজনক হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাস্তবতা এড়িয়ে সমস্যা-সংকটের অবসান হবে না। পরিসংখ্যান অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই ৫৪ বছরে হিন্দু সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ১৮ থেকে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।’
আরও পড়ুনএবার সারা দেশে ৩৩ হাজার ৩৫৫ মণ্ডপ-মন্দিরে দুর্গাপূজা হবে২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫