ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালাতে সিআইকে অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প
Published: 16th, October 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নিকোলাস মাদুরোর সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধে রাজি হয়েছেন মোদি: ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ‘এরিয়া ৫১’ সম্পর্কে জানলে চমকে যাবেন
প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালাতে সিআইকে অনুমোদন দিয়েছেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত খবরটির সত্যতা স্বীকার করেছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে ট্রাম্প বলেন, আমি দুটি কারণে সিআইএকে অনুমতি দিয়েছি। প্রথমত, ভেনেজুয়েলা তাদের কারাগারগুলো খালি করে সব বন্দিকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। দ্বিতীয় কারণ, মাদক। অনেক মাদক আসে ভেনেজুয়েলা থেকে, বিশেষ করে সমুদ্রপথে। এবার আমরা স্থলপথেও তা বন্ধ করবো।
বিবিসি বলছে, মার্কিন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে ট্রাম্পের এমন প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি নজিরবিহীন ঘটনা, কারণ গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম সাধারণত গোপনীয়তার আড়ালে ঢাকা থাকে।
এই অঞ্চলের মাদক ব্যবসায় ভেনেজুয়েলার বড় ভূমিকা রয়েছে। সিআইএ-এর লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে উৎখাত করা কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো উত্তর দেননি ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “এটা আমার উত্তর দেওয়ার মতো প্রশ্নই নয়, এটা কতটা হাস্যকর প্রশ্ন ভাবুন তো।”
এদিকে, বুধবার (১৫ অক্টোবর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মাদুরো বলেন, “না হবে কোনো সরকার পরিবর্তন, না হবে সিআইএ-নিয়ন্ত্রিত কোনো অভ্যুত্থান। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া- এসব ব্যর্থ যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে বলি- আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।”
বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভেনেজুয়েলার উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় সন্দেহভাজন মাদক বহনকারী নৌকাগুলোতে মার্কিন বাহিনী ইতিমধ্যেই কমপক্ষে পাঁচটি হামলা চালিয়েছে, যাতে ২৭ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।
বুধবার হোয়াইট হাউজে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে মাদক পাচারকারীদের উপর আরো হামলার কথা বিবেচনা করছে।
গত বছরের বিতর্কিত নির্বাচনের পর ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর বৈধতা আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত হয়। ট্রাম্প প্রশাসনও মাদুরোর সরকারকে ভেনেজুয়েলার ‘বৈধ সরকার’ বলে মনে করে না। মার্কিন কর্মকর্তারা মাদুরোর বিরুদ্ধে ‘কার্টেল অব দ্য সানস’ নামের একটি মাদকচক্র পরিচালনার অভিযোগ এনে তার গ্রেপ্তারে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। তবে মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে একে ‘আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছেন।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, ট্রাম্পের অনুমোদনের ফলে সিআইএ ভেনেজুয়েলায় একতরফাভাবে অথবা যেকোনো বৃহত্তর মার্কিন সামরিক কার্যকলাপের অংশ হিসেবে অভিযান পরিচালনা করতে পারবে।
তবে সিআইএ ভেনেজুয়েলায় অভিযানের পরিকল্পনা করছে কিনা, নাকি সেই পরিকল্পনাগুলো আকস্মিক পরিস্থিতি হিসেবে রাখা হচ্ছে তা এখনও অজানা, তবে দক্ষিণ আমেরিকায় এই গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে আটটি যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন ও কয়েকটি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছেন। হোয়াইট হাউজের ভাষ্য, এটি মাদক পাচার দমনের অংশ। তবে এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধির ফলে ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে রাজধানী কারাকাসের পেতারে ও পার্শ্ববর্তী মিরান্দা রাজ্যে সামরিক মহড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। টেলিগ্রামে দেওয়া বার্তায় তিনি জানান, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বেসামরিক মিলিশিয়াকে তেলসমৃদ্ধ দেশটির প্রতিরক্ষায় প্রস্তুত করা হচ্ছে।
ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবাজ ও উসকানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই। সিআইএ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে সামরিক মোতায়েন স্পষ্টতই আগ্রাসন, হুমকি ও হয়রানির নীতি।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র প রক শ কর ছ ন স আইএ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালাতে সিআইএকে অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিশ্চিত করেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) অনুমোদন দিয়েছেন। গতকাল বুধবার এ কথা বলেন তিনি। ট্রাম্পের বক্তব্যে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহে মার্কিন বাহিনী ক্যারিবীয় অঞ্চলে সন্দেহজনক মাদকবাহী নৌকার দোহাই দিয়ে অন্তত পাঁচটি হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় ২৭ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা একে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাযজ্ঞ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
হোয়াইট হাউসে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলা অঞ্চলের মাদক পাচার ঠেকাতে স্থলভাগেও অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
গত বছর বিতর্কিত নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিকভাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়ে। মাদুরো ইতিমধ্যে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
অঞ্চলটিতে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় কারাকাসের মানুষের মধ্যে সম্ভাব্য হামলার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের অনুমোদনের কারণে সিআইএ একতরফাভাবে বা যেকোনো বিস্তৃত মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালাতে পারবে।
সিআইএ ভেনেজুয়েলায় অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে কি না, কিংবা এসব পরিকল্পনাকে বিকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে কি না, তা জানা যায়নি। তবে গোয়েন্দা সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে তৎপরতা চালাচ্ছে।
আরও পড়ুনআমেরিকার পরের টার্গেট কি ভেনেজুয়েলার সরকার পতন০৫ অক্টোবর ২০২৫গতকাল বুধবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্পকে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো এফবিআইয়ের পরিচালক কাশ প্যাটেল এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি কেন সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন?’
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘দুটি কারণে আমি অনুমতি দিয়েছি। ১ নম্বর কারণ হলো, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে সেখানকার বাসিন্দাদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিয়েছে। আরেকটি বিষয় হলো মাদক। ভেনেজুয়েলা থেকে প্রচুর মাদক যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে। আপনারা দেখে থাকবেন, ভেনেজুয়েলার মাদকের একটি বড় অংশ সমুদ্রপথে আসে। তবে আমরা তাদের স্থলপথেও আটকাব।’
সিআইএর লক্ষ্য মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা কি না, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি ট্রাম্প। তবে আগে থেকেই মাদুরোকে গ্রেপ্তারে সহায়ক তথ্য দিতে পারলে পাঁচ কোটি ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আরও পড়ুনভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে গ্রেপ্তারে সহায়ক তথ্য দিলে ৫ কোটি ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র০৮ আগস্ট ২০২৫সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে একটি নৌকাকে লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ছয়জন নিহত হন।
নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এ নিয়ে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘গোয়েন্দারা নিশ্চিত করেছেন, নৌকাটি মাদক পাচার করছিল, অবৈধ মাদক চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিল এবং মাদক পাচারের করিডর হিসেবে পরিচিত পথ দিয়ে চলাচল করছিল।’
আগের ঘটনাগুলোর মতো এ ক্ষেত্রেও মার্কিন কর্মকর্তারা স্পষ্ট করেননি, নৌকাটি কোনো মাদক পাচারকারী সংগঠন পরিচালনা করছিল বা নৌকায় থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় কী।
গতকাল বুধবার রাতে টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে মাদুরো উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
সমাজতান্ত্রিক এ নেতা বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনকে না বলুন, যা আমাদের আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ার যুদ্ধের মতো অসংখ্য ব্যর্থ যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। সিআইএ-নিয়ন্ত্রিত অভ্যুত্থানকে না বলুন।’
মাদুরো আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে বলছি, আমার কথা শুনুন। যুদ্ধকে না বলুন। শান্তিকে হ্যাঁ বলুন।’
গতকাল মাদুরো কারাকাসের পিতারে উপশহরে এবং পার্শ্ববর্তী মিরান্দা রাজ্যে সামরিক মহড়ার নির্দেশ দেন।
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় মাদুরো বলেন, তেলসমৃদ্ধ দেশটিকে রক্ষার জন্য তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বেসামরিক মিলিশিয়াকে প্রস্তুত করছেন।