দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের লক্ষ্যে প্রায় আট মাস ধরে তিন ধাপে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা শেষে তৈরি করা ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। এদিন বিকেলে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই সনদ সই হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সদস্যরা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দুজন করে প্রতিনিধি এই সনদে সই করবেন।

গত বছর আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশনের (সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন) সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম পর্বে ৩৩টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দুই পর্বের আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়।

গত ১৬ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে ওই খসড়ায় কিছু ত্রুটি থাকায়, তা সংশোধন করে নির্ভুল খসড়া পাঠানো হয়। এরপর গত ২০ আগস্ট ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটির ওপর যেকোনো ধরনের মতামত দেওয়ার সময় ২২ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর আবারও জুলাই সনদের নানা বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কমিশনের আলোচনা হয়।

সব দলের মতামত পর্যালোচনা এবং নির্ভুল আকারে জুলাই সনদ লিখিত আকারে চূড়ান্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সনদের চূড়ান্ত কপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে তুলে দেওয়া হয়। জুলাই সনদের চূড়ান্ত এই কপি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ব্লক-১, এমপি হোস্টেল, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, শেরে-বাংলা নগর, ঢাকা।

১৪ অক্টোবর, ২০২৫

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

ব্লক-১, এমপি হোস্টেল, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, শেরে-বাংলা নগর, ঢাকা।

ই-মেইল: [email protected]

জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫

সুদীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিক ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের এক ঐতিহাসিক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জোট ও শক্তিসমূহের পারস্পরিক ও সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি :

১। পটভূমি

প্রায় দুশো বছরের বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে নিপীড়িত জনগণের দীর্ঘ লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং পূর্ব-বাংলা তার অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর স্বৈরশাসন, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব-বাংলার জনগণ সংক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং তৎপরবর্তী ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধিকার-সংগ্রামের বাস্তব প্রতিফলন ঘটে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে হানাদার বাহিনী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ জনগণের উপর বর্বরোচিত গণহত্যা শুরু করলে পরদিন ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরিণতিতে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই স্বাধীন দেশের অভ্যুদয় ঘটে। মহান স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন‌্যায়বিচারের নীতিকে ধারণ করে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের যে আকাঙ্ক্ষা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। শাসন ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারা বারবার হোঁচট খেয়েছে। ১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে একদলীয় বাকশাল কায়েম করা হয়। ওই বছরই এক সামরিক অভ্যুত্থানের ফলে সংঘটিত রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থার পতন ঘটে। নানামুখী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব‌্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের উদ‌্যোগের ফলে ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ‌্য দিয়ে দেশ আবারও গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করে। কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যে কারণে বিগত পাঁচ দশকে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোপুরি টেকসই ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করা যায়নি এবং এগুলো অত্যন্ত ন্যুব্জ ও দুর্বলভাবে কাজ করেছে।

২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে লগি-বৈঠা তাণ্ডবে দেশে কয়েকটি নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় এবং সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি ও একটি অস্বাভাবিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১/১১ সরকার নামে পরিচিত। যার ফলে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। বিগত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে ক্রমান্বয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করতে থাকে। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সমালোচকদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার হরণ, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ন-নির্যাতন, মামলা ও হামলার মাধ্যমে একটি নৈরাজ্যকর ও বিভীষিকাময় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সংঘটিত হয় এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে স্বৈরতান্ত্রিকভাবে বিশেষ ব্যক্তি, পরিবার ও গোষ্ঠী বন্দনার জন্য নিবেদিত রাখা হয়। দেড় দশকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার জনস্বার্থের বিরুদ্ধে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানের বিকৃতি সাধন, বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে পরপর তিনটি বিতর্কিত ও প্রহসনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস এবং বিচার বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও জনপ্রশাসনকে দলীয়করণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের ব্যবস্থা কায়েম করে। বস্তুতপক্ষে, রাষ্ট্রকাঠামোতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অবারিত সুযোগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ‌্যে বিগত ১৬ বছরে দলীয় প্রভাবকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর, জবাবদিহিতাবিহীন ও বিচারহীনতার সহায়ক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল।

এই পটভূমিকায় রাজনৈতিক দলগুলোর তথা জনগণের দীর্ঘ ১৬ বছরের ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সরকারি চাকরিতে কোটা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের এক দফা আন্দোলনে বিপুল সংখ‌্যক ছাত্র-শ্রমিক-নারী-পেশাজীবী তথা ফ্যাসিস্ট বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সকল স্তরের জনতার অংশগ্রহণের ফলে এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে রেমিট্যান্স বন্ধ করাসহ অব্যাহতভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সফল এই অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত লগ্নে সশস্ত্র বাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের তাৎপযপূর্ণ ভূমিকা স্বৈরাচারের পতনকে ত্বরান্বিত করে। এতে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিহিংসার শিকার হয়ে শিশু ও নারীসহ সহস্রাধিক নিরস্ত্র নাগরিক নিহত এবং বিশ হাজারের বেশি মানুষ গুরুতর আহত হয়। তাদের আত্মাহুতি, ত্যাগ এবং জনগণের সম্মিলিত শক্তি ও প্রতিরোধের মুখে ফ‌্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দোসররা পরাজিত হয়ে অনেকেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

বর্ণিত প্রেক্ষাপটে, জনগণের মননে রাষ্ট্র-কাঠামো সংস্কারের এক প্রবল আকাঙ্ক্ষার স্পষ্ট প্রকাশ ঘটে; বিশেষত সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, ধ্বসে পড়া নির্বাচনি ব্যবস্থা, আইনি ও বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনিক ও পুলিশি ব্যবস্থা এবং দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহির ব্যবস্থায় সর্বত্র ব্যাপক সংস্কারের জোরালো আওয়াজ ওঠে । এই প্রেক্ষাপটেই গণঅভ্যুত্থানের সরকার প্রথম দফায় বিষয়ভিত্তিক ৬টি পৃথক সংস্কার কমিশন গঠন করে।

২। সংস্কার কমিশন গঠন

গণঅভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর নেতৃত্বে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে ৩ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জারীকৃত পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পাঁচটি সংস্কার কমিশন যথা, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন এবং এরপর ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে জারীকৃত অপর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে। উক্ত কমিশনগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লিখিত মতামত এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধিসহ অংশীজনদের সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রস্তুতকৃত সুপারিশসহ প্রতিবেদন ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাখিল করে।

৩। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন

সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়াকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে সহ-সভাপতি এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধানগণ এবং বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের একজন সদস‌্যকে সদস্য করে একটি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। পরবর্তীতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের পরিবর্তে উক্ত কমিশনের একজন সদস‌্যকে জাতীয় ঐকমত‌্য কমিশনের সদস‌্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে কমিশন কিছুটা পুনর্গঠন করা হয়। তাছাড়া, রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তথা সরকারের নিবিড় যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রধান উপদেষ্টা একজন বিশেষ সহকারী (ঐকমত‌্য গঠন) নিয়োগ দেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্ব ছিল ‘আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ‌্যে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহের সঙ্গে আলোচনা করা এবং এ মর্মে পদক্ষেপ সুপারিশ করা’। প্রাথমিকভাবে কমিশনের মেয়াদ ছিল কার্যক্রম শুরুর তারিখ থেকে ছয় মাস। পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক জারীকৃত প্রজ্ঞাপনের মাধ‌্যমে বিগত ১১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে একবার এবং ১৫ সেপ্টেস্বর ২০২৫ তারিখে আরেকবার ১ মাস করে দুই দফায় কমিশনের মেয়াদ মোট ২ মাস (১৫ অক্টোবর, ২০২৫ পর্যন্ত) বৃদ্ধি করা হয়।

৪। কমিশনের কার্যক্রম

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখের মধ্যে ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদনের ছাপানো অনুলিপি সব রাজনৈতিক দলের কাছে প্রেরণ করা হয়। এরপর ৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে পুলিশ সংস্কার কমিশন ব্যতীত অপর পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ স্প্রেডশিট আকারে ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। এর মধ্যে সংবিধান সংস্কার বিষয়ক ৭০টি, নির্বাচন ব‌্যবস্থা সংস্কার বিষয়ক ২৭টি, বিচার বিভাগ সংস্কার বিষয়ক ২৩টি, জনপ্রশাসন সংস্কার বিষয়ক ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার বিষয়ক ২০টি সুপারিশ ছিল। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো সরাসরি প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় সেগুলো স্প্রেডশিটে রাখা হয়নি। অপরদিকে, সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্য পাঁচটি কমিশনের আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোর তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মোট ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে প্রেরণ করে, অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও প্রদান করে। মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৪টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কিছু দলের সঙ্গে কমিশনের একাধিকবার বৈঠক হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষে কমিশন মৌলিক সাংবিধানিক সংস্কার বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ মোট ২০টি বিষয় নিয়ে দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় মিলিত হয়। এ পর্যায়ে ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত ৩০টি দল ও জোটের প্রতিনিধিগণ একত্রিত হয়ে ব্যাপকভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেন। এ পর্বে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ২৩টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনার ভিত্তিতে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত এই সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার ফলাফলস্বরূপ নিম্নলিখিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ কিছু বিষয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের ভিন্নমতসহ সর্বসম্মতভাবে প্রণীত হয়।

৫। ঐকমত‌্যের ঘোষণা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে, আমরা অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা স্ব-স্ব দলের পক্ষ থেকে—

(ক) বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থা তথা সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে নিম্নলিখিত কাঠামোগত, আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছি;

(খ) এসব বিষয়কে এই জাতীয় সনদে (কিছু বিষয়ে ভিন্নমতসহ) সন্নিবেশিত করতে সম্মত হয়েছি; এবং

(গ) ২০০৯ সাল পরবর্তী ১৬ বছরে ফ‌্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ, গ্রেফতার ও কারাবরণকারীদের প্রতি সহমর্মিতা এবং উক্ত গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতার স্মারক হিসেবে আমরা এই সনদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ হিসেবে ঘোষণা করছি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই জ ত য় সনদ ২০২৫ গণঅভ য ত থ ন র র ধ র ব হ কত য় স স ক র ব ষয়ক গণত ন ত র ক ২০২৫ ত র খ ২০২৪ স ল র র ব যবস থ জ ল ই সনদ র লক ষ য সরক র র গ রহণ র র মত মত গঠন কর জনগণ র র জন য অন ষ ঠ ন র জন সনদ র আগস ট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ ও নোট অব ডিসেন্টের রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থার এক বছরের বেশি হয়ে গেল। এর মধ্যে আমরা অনেক কমিশন দেখলাম, দেখলাম তাদের নানা সুপারিশ। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে অধরা ঐক্য গড়তে গঠিত হলো ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনও সরকারের কাছে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করল।

সংস্কারের কতটা বাস্তবায়িত হলো বা অধরা ঐক্য কতটা অর্জিত হলো, সে এক প্রশ্ন। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার দিকে তাকালে প্রত্যাশিত ঐক্য তৈরি না হলেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সেটি বলা যায়। যদিও আমরা জানি, ভিন্নমত থাকবেই আর মতভিন্নতার মধ্য দিয়েই ঐক্য তৈরি হবে।

কিন্তু যদি ঐক্য গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া অপ্রত্যাশিতভাবে দীর্ঘ হয়, তাহলে সেটি জনগণের জন্য সুখকর নয়। বিশেষত বাংলাদেশ যখন জুলাই–পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যখন মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল, এই দেশকে নতুন করে ঢেলে সাজাবে, তেমনই একটি বাস্তবতায় আমরা যদি আরও বিভাজিত হয়ে পড়ি, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও নির্বাচন নিয়ে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোয় ও জনমনে একধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে, যার দ্রুত সমাধান বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য জরুরি। কেননা, বাংলাদেশ এখন এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক সেই সময়ে জুলাই সনদ আমাদের সুশাসন ও সংস্কারের স্বপ্ন যেমন দেখিয়েছে, তেমনি আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর আধুনিকায়ন ও কার্যকর হয়ে ওঠার একটি ব্লুপ্রিন্ট হিসেবে আমাদের সামনে আবির্ভূত হয়েছে।

আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রাখলে জুলাই সনদ হবে মূল্যহীন০৩ নভেম্বর ২০২৫

জুলাই সনদকে আশা-আকাঙ্ক্ষার একটি দলিল হিসেবে দেখলেও এটি যে শুধু রাজনৈতিক দল কিংবা তার নেতৃত্বকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার একটি দলিলে পরিণত হয়েছে, সেটিও দেশের মানুষ বুঝতে পারছে বৈকি। এর সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তোলার প্রচেষ্টা।

এই আলাপ-আলোচনা যেমন রুদ্ধদ্বার বৈঠকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে, সিদ্ধান্তগুলোও তেমনি রুদ্ধদ্বার প্রক্রিয়ায়ই হয়েছে, যেখানে জনগণের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ তো নেই, বরং তাদের সঙ্গে খুব একটা কনসালটেশন বা পরামর্শমূলক সভা করা হয়নি। অন্যদিকে সাংবিধানিক চর্চা সব সময়ই জনগণকে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে একটি সংসদীয় ব্যবস্থায় তর্কবিতর্কের মধ্য দিয়ে পরোক্ষ হলেও নীতি ও অন্যান্য বিষয়ে অংশগ্রহণের একধরনের সুযোগ তৈরি করে দেয়, যা জুলাই সনদ তৈরির পেছনে দেখতে পাইনি।

বরং এই সনদ প্রণয়নে প্রথাগত এলিট গোষ্ঠীর কাছে খুবই জনপ্রিয় ‘ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া’ দৃষ্টিভঙ্গির বহুল ব্যবহার আমরা দেখতে পাই, যা একটি গণবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ার মধ্যে খেটে খাওয়া মানুষের অংশগ্রহণ থাকে না এবং তাদের অংশগ্রহণের কথা বিবেচনাও করা হয় না। বরং এর মধ্য দিয়ে শাসক ও শাসিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমাগত দূরত্ব সৃষ্টি হয়, যা আমাদের বর্তমান পটভূমিতে ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য শঙ্কার বিষয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলাদলি, নেপোটিজম, পারিবারিক প্রাধান্য, রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত আমলাতন্ত্র ও প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের যে বহুল চর্চা, তেমন বাস্তবতায় রাজনৈতিক শুদ্ধাচার বা শিষ্টাচার কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, সেটি এক বিরাট প্রশ্ন, যার উত্তর জুলাই সনদে নেই।

এটি জুলাই সনদের অন্যতম সীমাবদ্ধতা হলেও দেশের মানুষ জাতীয় স্বার্থে এ বিষয় নিয়ে তাদের শঙ্কা সেভাবে প্রকাশ করেনি বা একে একটি সংকট হিসেবেও দেখেনি। কারণ, দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল যে এই পুরো প্রক্রিয়ার শেষে আমরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব, যার মধ্য দিয়ে আমরা ধীরে ধীরে একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ফিরে আসতে পারব।

আমরা যদি জুলাই সনদের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব এর বিষয়বস্তু আদর্শগত জায়গা থেকে খুবই চমৎকার এবং দেশের সুশাসনের জন্য তা তাত্ত্বিকভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কিন্তু এই বিষয়গুলো, যে ধরনের রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বাস্তবায়নযোগ্য, সেটি বাংলাদেশের রয়েছে কি না, সেগুলো আমাদের বিবেচনায় নিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলাদলি, নেপোটিজম, পারিবারিক প্রাধান্য, রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত আমলাতন্ত্র ও প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্কের যে বহুল চর্চা, তেমন বাস্তবতায় রাজনৈতিক শুদ্ধাচার বা শিষ্টাচার কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে, সেটি এক বিরাট প্রশ্ন, যার উত্তর জুলাই সনদে নেই। এর সঙ্গে এটিও মাথায় রাখতে হবে, বিগত সময়ে যে শোষণমূলক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলেছি, সেটি গড়ে উঠতে যেমন একটা লম্বা সময় লেগেছে, তা থেকে বের হয়ে আসার জন্যও একটি দীর্ঘমেয়াদি পথনকশা বা কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন০২ নভেম্বর ২০২৫

জুলাই সনদকে তেমনই একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে রাতারাতি বদলের কোনো সুযোগ নেই। এখানে যেমন স্বল্পমেয়াদি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করার জন্য কিছু টার্গেট থাকবে এবং কিছু বিষয় থাকবে, যেগুলো আমরা সংসদীয় একটি ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিদের তর্কবিতর্কের মধ্য দিয়ে অর্জন করব। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জনগণও অংশগ্রহণের মাধ্যমে তার অংশীদারত্ব অনুভব করবে।

তাই সংস্কার বিষয়ে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ আসতে পারে সেই বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে, যা জুলাই সনদে এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা আপত্তির মধ্য দিয়ে তারা যে ভিন্নমতের জায়গাগুলো তৈরি করেছে, সেই ভিন্নমতের মীমাংসার প্রক্রিয়া হতে পারে পরবর্তী সংসদীয় ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।

সেদিক বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলো যতটুকু ঐকমত্যে পৌঁছেছে, আমরা যদি সেটিকে ইতিবাচক একটি সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করি, তাহলে অন্তত এতটুকু দাবি করতে পারব যে আমরা বিচ্ছিন্নভাবে সব সিদ্ধান্ত এককভাবে নিইনি, বরং অনেক মৌলিক বিষয় জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সংসদীয় একটি ব্যবস্থায় নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। যে প্রক্রিয়া আরও বেশি অংশগ্রহণমূলক ও অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠবে, যা জুলাই সনদের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর বাস্তবায়নের সাফল্য নিয়ে আসবে এবং লম্বা সময় টিকে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে০১ নভেম্বর ২০২৫

এমনিতেই জুলাই সনদের বেশ কিছু ব্লাইন্ড স্পট রয়েছে, যেগুলোকে বিশেষজ্ঞরা তাঁদের বিশ্লেষণে নিয়ে এসেছেন। যেমন জুলাই সনদ কীভাবে আমাদের আর্থসামাজিক, শিক্ষা খাতসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে এবং সেসব খাতের উন্নয়নের রূপরেখাবিষয়ক কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি। যদিও কিছু কমিশন গঠিত হয়েছিল, কিন্তু সেই কমিশনের সুপারিশমালা জুলাই সনদে কতটা স্থান পেয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

সেই অর্থে জুলাই সনদ শুধু কিছু রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক বিষয় সামনে রেখে গঠিত হয়েছে। তবে যে বিষয়গুলো স্থান পায়নি, সেগুলোকে রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকারের মধ্য দিয়ে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে মীমাংসা করার একটা সুযোগ রয়েছে, যাকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখতে পারি।

তাই আপত্তি থাকা মানেই স্রোতের বিপরীতে হাঁটা এবং রাজনৈতিক ঐক্য না চাওয়া নয়। আপত্তি না থাকা মানে একটি এলিট ব্যবস্থার একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রবণতাকে নির্দেশ করে। সেদিক দিয়ে দেখলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ কেবল বিএনপিকে নয়, বরং জনগণকে একটি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে, যা দেশের জনগণের জন্য শাসকগোষ্ঠীর সিদ্ধান্তকে প্রশ্ন করার সুযোগ তৈরি করে, পরবর্তীকালে যার মুখোমুখি বিএনপিও ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলও হতে পারে। তাই জনবান্ধব একটি ব্যবস্থা গড়ে উঠুক, যেখানে জনগণ তার বয়ানকে যেন রাজনৈতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে পারে এবং তা যেন প্রাধান্য পায়। জনগণকে উপেক্ষা ও শোষণমূলক ব্যবস্থায় বসবাসে বাধ্য করলে কী হতে পারে, সেটি আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেখেছি।

বুলবুল সিদ্দিকী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মতৈক্য হবে না, কারণ দলগুলো বিভিন্ন মহলের স্বার্থ দেখে: ফরহাদ মজহার
  • ঐকমত্যের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই: আমীর খসরু
  • জুলাই সনদ ও নোট অব ডিসেন্টের রাজনীতি
  • ঐকমত্য কমিশনের মোট ব্যয় ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা 
  • ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে
  • ঐকমত্য কমিশনের আপ্যায়ন ব্যয় ৪৫ লাখ টাকা
  • ঐকমত্য কমিশনের ব্যয়ের যে হিসাব দিল অন্তর্বর্তী সরকার
  • ঐকমত্য কমিশন কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না: আমীর খসরু
  • কমিশনে কী হলো না হলো কিছু আসে যায় না, ৩১ দফা বাস্তবায়ন হবে: আমীর খসরু
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ রাজনীতিতে অনৈক্য ও বিভক্তি বাড়িয়েছে: রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর