জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া সনদে সই করবে না এনসিপি। বৃহস্পতিবার সকালে দলটির এমন ঘোষণার পর শুক্রবার বিকেলের অনুষ্ঠানে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও জোরালো হয়েছে।

তবে এনসিপিকে রাজি করাতে বৃহস্পতিবার দিনভর সরকারের দিক থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নানা চেষ্টা ও তৎপরতা চলেছে। সর্বশেষ রাতেও এনসিপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে সরকারের একাধিক উপদেষ্টার আলোচনা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এনসিপি কিছুটা নমনীয় হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন আশা করছে, দলটির নেতারা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং সনদে সই করবেন। তবে এ বিষয়ে রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এনসিপির দিক থেকে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আট মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পর প্রস্তুত করা জুলাই সনদে সই করার জন্য শুক্রবার ১৭ অক্টোবর দিন ধার্য করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর দুই দিন আগে মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়। ওই রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেন এনসিপির শীর্ষ নেতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, এনসিপির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে দীর্ঘ আলাপে যুক্ত ছিলেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। মাহফুজ আনুষ্ঠানিকভাবে দলের কেউ না হলেও তিনি এনসিপির বিষয়ে প্রভাব রাখেন।

এনসিপির নেতাদের কাছে তাঁর গুরুত্ব আছে। তাঁরা দলটির পক্ষ থেকে জানান, ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে সংস্কারপ্রক্রিয়া না এগোলে এনসিপি সনদে সই করবে না। তাঁরা সংস্কার, বিশেষ করে সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে নতুন করে আলোচনা শুরু করার পক্ষেও মত দেন। তাঁরা চান সংবিধান স্থগিত করে বিশেষ আদেশ (প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার) জারি করা হোক এবং সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে জারি করতে হবে।

এনসিপির এমন অবস্থান ও সার্বিক পরিস্থিতিতে সনদ স্বাক্ষর নিয়ে সংশয়ে পড়ে ঐকমত্য কমিশন। তারা ৩০টি দলকে চিঠি দিয়ে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক করে। সন্ধ্যার ওই বৈঠকের আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে।

বুধবার সন্ধ্যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সনদ বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত দলের আগের অবস্থান তুলে ধরেন।

এরপর বৃহস্পতিবার সকালে এনসিপি সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিকতা হবে। তিনি বলেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলে সেটা মূল্যহীন হবে। এ কারণে শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি।

আগের দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে নাহিদ ইসলামের বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার সকালের এমন বক্তব্যে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় সরকারের দিক থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এনসিপির সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়। তাদের জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সম্মত করার চেষ্টা করা হয়।

সরকার-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, সরকারের একজন উপদেষ্টার অনুরোধে দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানও এ বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। সনদে সই না করলে দেশের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, সে বিষয়টাও বোঝানোর চেষ্টা করেন। পরে রাতে সরকারের দুজন উপদেষ্টা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন নাহিদ ইসলামের সঙ্গে। প্রধান উপদেষ্টাও বিষয়টি নিয়ে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

মাহফুজ এনসিপির পদে না থাকলেও দলটির সঙ্গে তাঁর একধরনের যুক্ততা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, দুই উপদেষ্টার সঙ্গে রাতে আলোচনার পর এনসিপির শীর্ষ নেতা কিছুটা নমনীয় হয়েছেন। তবে এনসিপির ভেতরে এ বিষয়ে নানা মত ও চিন্তা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে রাতেই দলটির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আলোচনা করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

অবশ্য এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁরা আশা করছেন, এনসিপিসহ সবাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। এমনকি শুক্রবারের পরও সনদে সই করার সুযোগ থাকবে।

আরও পড়ুনআইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম১২ ঘণ্টা আগে

এদিকে সরকারের সঙ্গে রাতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার বিষয়ে জানতে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবের কাছে জানতে চাইলে তিনি রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারের জায়গা থেকে চেষ্টা আছে জুলাই সনদ স্বাক্ষরটা নির্বিঘ্নে হোক। কিন্তু আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো জুলাই সনদকেও এক দলের সনদে পরিণত করার চেষ্টা দেখছি। জুলাই সনদ স্বাক্ষরে রাজি করাতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে সরকার। এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত আমার কাছে এ রকম কোনো তথ্য নেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র শ র ষ অন ন ষ ঠ ন ক র অন ষ ঠ ন উপদ ষ ট র শ ক রব র সরক র র সন ধ য দলট র ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সিদ্ধান্ত এখনো বিবেচনাধীন: আখতার

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করবে কি করবে না—সেটা এখনো বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘যদি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়গুলো জাতির কাছে অস্পষ্ট থাকে, তাহলে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা যেটা অর্জন করতে চাই; সেটাকে অর্জন হিসেবে সামনের দিকে প্রাপ্ত হওয়া অনিশ্চিত থেকে যাবে। এ কারণেই আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব কি করব না—সে বিষয়গুলো বিবেচনাধীন রেখেছি।’

জুলাই জাতীয় সনদে সই করার ক্ষেত্রে এনসিপির কিছু শর্ত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সরকার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতির সামনে স্পষ্ট পথনকশা উপস্থাপন করবে; আদেশের বিষয়ে কী হবে, গণভোটের প্রশ্ন কী হবে এবং সামনের সংবিধানে এ বিষয়গুলো কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, সে বিষয়গুলো খোলাসা করার দাবি জানিয়েছি।’

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্টের (ভিন্নমত) মতো অনেকগুলো ইস্যু রয়েছে, সেই নোট অব ডিসেন্টগুলোকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে, নোট অব ডিসেন্টের পরিণতি কী হবে, সেগুলোকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে; সে বিষয়গুলো খোলাসা করা হয়নি। একই সঙ্গে যে আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে, সে আদেশ কীভাবে হবে, তা এখনো এনসিপির কাছে স্পষ্ট নয়।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশকে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ’ বা ‘সংবিধান সংস্কার আদেশ’ নামে জারির প্রস্তাব করেছে এনসিপি। এ কথা জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, সে আদেশ যেন সরকারপ্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জারি করা আদেশ হয়, সে দাবি তাঁরা জানিয়েছেন। গণভোটের প্রশ্ন কেমন হবে, তা এখনো এনসিপির কাছে স্পষ্ট নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আখতার হোসেন বলেন, কীভাবে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনগুলোকে সংস্কারকৃত সংবিধানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে—সে বিষয়গুলো খোলাসা করেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হওয়া দরকার বলে তাঁরা মনে করেন।

আগামী শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দিন ধার্য করা হয়েছে। শুক্রবারের আগে মাত্র এক দিনে এনসিপির এসব দাবি পূরণ করা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন বলেন, ‘সময় যদিও অল্প, কিন্তু আমরা মনে করি, এটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার ব্যাপার।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই যোদ্ধাদের আইনি সুরক্ষার দাবিতে রাতে সংসদ ভবনের সামনে বিক্ষোভ
  • জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করল ‘নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরাম’
  • জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বামধারার চার দল
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ল
  • স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশ, তাই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বাম জোট
  • আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম
  • জুলাই সনদ সই হলে বাস্তবায়নের পথ কতটা মসৃণ
  • জুলাই সনদে সই করার বিষয়ে কোন রাজনৈতিক দল কী বলল
  • এনসিপি সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সিদ্ধান্ত এখনো বিবেচনাধীন: আখতার