জুলাই যোদ্ধাদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভ করছেন কিছু তরুণ। তাঁরা নিজেদের জুলাই যোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, জুলাই জাতীয় সনদে জুলাই যোদ্ধাদের আইনি সুরক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এই দাবির বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছ থেকে শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যে সিদ্ধান্ত চান বিক্ষোভকারীরা। তা না হলে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রতিহত করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে দেখা যায়, একদল ব্যক্তি বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের কেউ দাঁড়িয়ে কেউ রাস্তায় বসে স্লোগান দিচ্ছেন। নিজেকে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দেওয়া মোয়াজ্জেম হোসেন নামের এক তরুণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই সনদ যে ঘোষণা করা হচ্ছে, এখানে জুলাই যোদ্ধাদের কোনো ধরনের আইনি সুবিধা (সুরক্ষা) বা জুলাই যোদ্ধাদের কোনো প্রাধান্য দেওয়া হয়নি।’

মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমাদের সকল জুলাই যোদ্ধারা, সারা বাংলাদেশের জুলাই যোদ্ধারা এখানে উপস্থিত হচ্ছেন। অলরেডি (ইতিমধ্যে) দেখতে পাচ্ছেন, বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের লোক এখানে চলে আসছে। আমরা একটি আলটিমেটাম দিয়েছি যে সকাল ১০টার ভেতরে ঐকমত্য কমিশন এবং যাঁরা যাঁরা প্রতিনিধি, আমাদের সঙ্গে এখানে এসে (তাঁদের) কথা বলতে হবে। আমাদের প্রতিনিধি দল যাবে না, ওনারা এসে কথা বলবেন। এটার (সনদে আইনি সুরক্ষা) জন্য কি ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) নিয়েছেন, যদি কোনো ডিশিসন না নেওয়া হয়, আগামীকালকের (শুক্রবার) জুলাই সনদ প্রোগ্রাম (স্বাক্ষর অনুষ্ঠান) করতে আমরা দেব না। এটা আমাদের স্পষ্ট বার্তা।’

বিক্ষোভকারীদের কেউ দাঁড়িয়ে কেউ রাস্তায় বসে স্লোগান দিচ্ছেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ঢাকা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটায় তোলা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র স রক ষ র আইন

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্র সংস্কার কি সরকারের কাছে শুধুই ফাঁকা বুলি, প্রশ্ন টিআইবির

‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন করায় গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জবাবদিহির বাইরে রাখার মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার কেবলই ফাঁকা বুলি কি না, এ প্রশ্নও তুলেছে টিআইবি।

আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত দুদকের উত্তরণের লক্ষ‍্যে ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ করা হয়েছিল। এই সুপারিশ বাদ দেওয়া শুধু হতাশাজনক নয়, সরকারের অভ্যন্তরে প্রায় সব ক্ষেত্রে সংস্কারবিরোধী মহলের ষড়যন্ত্রের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের অভীষ্টের জিম্মিদশারও পরিচায়ক।

জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মতির পরও চূড়ান্ত অধ্যাদেশে এই সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের অনাগ্রহের ইঙ্গিত বলে মনে করে টিআইবি।

দুদককে প্রকৃত অর্থে একটি জবাবদিহিমূলক, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার এই কৌশলগত সুপারিশটি অনুধাবনে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বলে উল্লেখ করে টিআইবি আরও বলেছে, রাষ্ট্র সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের জন্য এটি স্ববিরোধী ও সংস্কারপরিপন্থী নজির।

ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও ১১টি সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা দুদককে জবাবদিহির বাইরে রাখার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলসহ দেশবাসীকে কি এই বার্তা দিতে চাইছেন যে রাষ্ট্র সংস্কার কেবলই ফাঁকা বুলি—এ প্রশ্নও বিবৃতিতে তুলেছে টিআইবি।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিগত দুই দশকের অভিজ্ঞতা, অংশীজনদের মতামত, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় দুদক যাতে ক্ষমতাসীনদের হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে চলমান না থাকে, সে লক্ষ‍্যে দুদক সংস্কার কমিশন ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের সুপারিশ করেছিল। জন্মলগ্ন থেকে দুদক যেভাবে জন–আস্থার সংকটে ভুগছে এবং স্বার্থান্বেষী মহলের ক্রীড়নক হিসেবে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা আর প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, তা থেকে উত্তরণ ঘটাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তাবটি করা হয়েছিল।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন, ‘নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে অন্তত সাতজন উপদেষ্টা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। অথচ তাঁরা জানেন যে এই প্রস্তাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। জুলাই সনদ লঙ্ঘনের এরূপ উদাহরণ সৃষ্টি করার আগে সরকার কেন ভাবছে না যে এর মাধ‍্যমে রাজনৈতিক দলকে তারা নিজেরাই জুলাই সনদ লঙ্ঘনে উৎসাহিত করছে? তাহলে কেন এত রক্তক্ষয়ী আত্মত্যাগ? দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণের উপায় রুদ্ধ করে কীসের রাষ্ট্র সংস্কার?’

অধ‍্যাদেশটির যে খসড়াটি টিআইবির দেখার সুযোগ হয়েছিল, তা অনেকাংশে বিদ্যমান আইনের তুলনায় উন্নত মানের হওয়ায় টিআইবি সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যানুযায়ী, চূড়ান্ত অধ্যাদেশে উল্লিখিত বিষয়টির পাশাপাশি আরও কিছু ঐকমত্য-অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দেওয়া হয়েছে, যা সরকারের অভ্যন্তরে স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতি-সহায়ক ও সংস্কার-পরিপন্থী অবস্থান ছাড়া আর কিছু হতে পারে না বলে উল্লেখ করেছে টিআইবি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র সংস্কার কি সরকারের কাছে শুধুই ফাঁকা বুলি, প্রশ্ন টিআইবির