অনিশ্চয়তা কাটুক, স্বাক্ষর হোক আজ
Published: 17th, October 2025 GMT
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই নাগরিকদের প্রত্যাশা রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মতামত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে তৈরি করা জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে দেশ নির্বাচনী যাত্রায় প্রবেশ করবে। কিন্তু সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতার কারণে জুলাই সনদ সই নিয়ে শেষ সময়ে যে অনিশ্চয়তা ও নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে, তা কারও কাছেই প্রত্যাশিত ছিল না।
রাষ্ট্র, সংবিধান, শাসনতন্ত্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। কমিশনগুলো প্রতিবেদন দেওয়ার পর ছয়টি সংস্কার কমিশন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করে জুলাই সনদ। কিন্তু সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও নির্বাচনের দিন, না তার আগে গণভোট হবে, তা নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির মধ্যে মতভিন্নতা তৈরি হয়।
গত মঙ্গলবার রাতে জুলাই সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠায় ঐকমত্য কমিশন। এরপর এ নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হলে বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন জরুরি বৈঠকে বসে, প্রধান উপদেষ্টা এনসিপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও করেন। জরুরি বৈঠকের পরও অচলাবস্থা কেটেছে এমন বলা যাচ্ছে না। দলগুলো তাদের আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে। বৈঠক শেষে বিএনপি জানিয়েছে, জুলাই সনদ স্বাক্ষরে তারা প্রস্তুত, জামায়াত বিষয়টি স্পষ্ট করেনি আর এনসিপি সই করবে কি না, সেটা বিবেচনাধীন বলে জানিয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ জুলাই সনদ স্বাক্ষর ও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। আমরা মনে করি, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক অস্থিরতা ও জাতীয় নিরাপত্তার মতো সংবেদনশীল এবং অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যখন জড়িত, তখন ঘোষিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে দেশ যদি নতুন কোনো সংকটে পড়ে, তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু হতে পারে না। কোনো রাজনৈতিক দল বা শক্তির দায়িত্বহীনতা, হঠকারিতা বা ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ এর পেছনে কাজ করে থাকলে তা জনগণের জানা–বোঝার বাইরে থাকবে না। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিলে তার মূল্য শুধু জনগণকে নয়, সেই দলগুলোকেও দিতে হবে।
একই সঙ্গে আমরা মনে করি, জুলাই সনদ স্বাক্ষর ও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠান—এই দুই গুরুদায়িত্ব বাস্তবায়নে ধারাবাহিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের যতটা শক্ত ও জোরালো অবস্থান ও ভূমিকা রাখা দরকার, সেখানে ঘাটতি রয়েছে। শুধু মুখে উৎসবমুখর নির্বাচনের কথা বললে হবে না, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত পূরণ করার মূল দায়িত্ব সরকারের। অবস্থাদৃষ্টে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে অন্তর্বর্তী সরকার যেন ঐকমত্য কমিশনের কাছে দায়িত্ব দিয়ে নিজে ভারমুক্ত থেকেছে। জুলাই সনদ স্বাক্ষর নিয়ে যখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে, যখন এ নিয়ে দেশ একটি জটিল ও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, তখন প্রধান উপদেষ্টা কোন বিবেচনায় ইতালি সফরে গেলেন, তা এক বড় প্রশ্ন। বরং দেশের এমন একটি সংকটময় সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা কমিয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অধ্যাপক ইউনূসের আরও সক্রিয় ভূমিকা ও উদ্যোগ প্রত্যাশিত ছিল।
সবকিছুর পরও আমরা আশা করি, জনগণের দীর্ঘ লড়াই ও আত্মত্যাগের সঙ্গে থেকে যে রাজনৈতিক দলগুলো শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে এবং একসঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ তৈরি করেছে, তারা বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থে নিজেদের মধ্যকার দূরত্ব অবসান করে আজ জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফেও ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে জুলাই সনদ প্রশ্নে জোরালো পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ল
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ তৃতীয় দফায় বাড়ানো হয়েছে। এই কমিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৭ সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই হিসেবে গত ১৫ আগস্ট এই কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কমিশনের কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় এর আগে দুই দফায় এর মেয়াদ এক মাস করে বাড়ানো হয়। এখন তৃতীয় দফায় কমিশনের মেয়াদ ১৫ দিন বাড়াল সরকার।
আরো পড়ুন:
জুলাই সনদে স্বাক্ষর শুক্রবার, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক চলছে
ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত্যে এসেছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সই করা কথা রয়েছে।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ