চার কারণে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস কমিয়েছে আইএমএফ
Published: 17th, October 2025 GMT
চার কারণে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আইএমএফ গত জুন মাসে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৪ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। গত মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি বলেছে, অর্থবছর শেষে এ হার হবে ৪ দশমিক ৯।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটায় ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসনের কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, গত জুনের পূর্বাভাসের তুলনায় অক্টোবরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারের পূর্বাভাস কমাল কেন আইএমএফ?
জবাবে শ্রীনিবাসন চারটি কারণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রথমত, এই সময়ে সরকারের নীতিগত মিশ্রণ বা পলিসি মিক্স তুলনামূলকভাবে কড়াকড়ি হয়েছে; দ্বিতীয়ত, শুল্কনীতি ও বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা বড় ভূমিকা রেখেছে।
আরও দুটি অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ওপর প্রভাব ফেলেছে বলে জানান আইএমএফের এই পরিচালক। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে অনিশ্চয়তা, যা বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশায় প্রভাব ফেলবে। অন্যটি হলো আর্থিক খাতের দুর্বলতা। এ দুর্বলতার কারণে প্রভাব পড়বে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিতে।
আইএমএফ বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হারের পূর্বাভাস জুনে দিয়েছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অথচ অক্টোবরে তা বাড়িয়ে করেছে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। শ্রীনিবাসন এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘এটা হবে মূলত বছরের শুরুর দিকে ঘটে যাওয়া সরবরাহ খাতে ধাক্কা লাগার ফলে। তবে আমি আশা করছি, মূল্যস্ফীতির হারটি ৮ দশমিক ৫ হতে পারে।’
চলমান ঋণ কর্মসূচির আকার এখন ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের এবং এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় যে সংস্কার কার্যক্রমগুলো বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করছে, সেগুলোর অগ্রগতি এখন কী পর্যায়ে—এমন প্রশ্নের জবাবে আইএমএফের পরিচালক শ্রীনিবাসন বলেন, পর্যালোচনার জন্য আইএমএফের একটি দল শিগগির বাংলাদেশ সফর করবে। এবার দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কারের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। একটি হচ্ছে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব খাতে সংস্কার। অন্যটি আর্থিক খাতে কাঠামোগত সংস্কার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইএমএফ র র প রব দ ধ শ র ন ব সন প রব দ ধ র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফির বিজ্ঞাপন বন্ধে সরকারের ৪ নির্দেশনা
অনলাইন জুয়া ও পর্নোগ্রাফির বিজ্ঞাপন বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে চারটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্মবান্ধব রাখতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশনাল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে। এই ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২-এর পরিপন্থি।
এতে বলা হয়, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর ধারা ২০(১) অনুযায়ী, সাইবার স্পেসে জুয়া বা বেটিং সম্পর্কিত পোর্টাল, অ্যাপস বা কনটেন্ট তৈরি, পরিচালনা, প্রচার, বিজ্ঞাপন প্রকাশ বা উৎসাহ প্রদান করা দণ্ডনীয় অপরাধ। একইভাবে, ধারা ২৫(১) অনুযায়ী, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক কনটেন্ট প্রচার, প্রচারে সহায়তা বা প্রচারের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন প্রকাশও অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অনলাইন জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচার প্রতিরোধে রকার ও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ) জরুরি ৪টি নির্দেশনা দিয়েছে-
মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম: দেশের সব পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংস্থাকে কোনোভাবেই জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে বলা হয়েছে। ডিফল্ট অ্যাডসেন্স বা কাস্টমাইজড বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এমন কনটেন্ট দেখানো হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেলিব্রিটি ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর: দেশি মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা কোনোভাবে জুয়া, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক পণ্য-সেবার প্রোমোশনাল কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। এ ধরনের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সাইবার সুরক্ষা আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
দেশি ও বিদেশি ওয়েবসাইট/অ্যাপ: বাংলাদেশে পরিচালিত বা ব্যবহারকারীর জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য কোনো দেশি বা আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা লিংক প্রচার করা যাবে না। জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এসব কনটেন্ট মনিটরিং করবে এবং প্রয়োজনে ব্লকিং, জরিমানা বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম: মোবাইল কোম্পানি, আইএসপি, গুগল অ্যাডসেন্স, মেটা অ্যাডসহ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্থানীয় আইন ও নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পপ-আপ ব্লকিং ও ফিল্টারিং নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
সরকার বলেছে, নৈতিক, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সরকারি সংস্থা, মিডিয়া, প্রযুক্তি কোম্পানি ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত কনটেন্ট দেখতে পান, তারা [email protected] ঠিকানায় তা রিপোর্ট করতে পারবেন।
এতে আরো বলা হয়েছে, শুধু আইনি পদক্ষেপ নয়, সরকারের এই উদ্যোগ তরুণ সমাজের নৈতিক বিকাশ, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক বন্ধন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাইবার নিরাপত্তা, নৈতিকতা এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল আচরণ নিশ্চিত করতে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পযবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এবং বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ফিরোজ