যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের বিরুদ্ধে সরকারি গোপন তথ্য অন্যের কাছে প্রকাশ করে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, বোল্টন গোপন সরকারি তথ্য নিজের দুই স্বজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, নিজের একটি বইয়ে তথ্যগুলো ব্যবহারের জন্য তিনি এমনটা করেছেন।

সম্প্রতি ট্রাম্প সমালোচকদের বিরুদ্ধে মার্কিন বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে অপরাধের অভিযোগ আনতে দেখা যাচ্ছে। বোল্টন হলেন সে কাতারে যুক্ত হওয়া তৃতীয় ব্যক্তি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, বোল্টন তাঁর দুই স্বজনকে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে তথ্যগুলো পাঠিয়েছিলেন। এর মধ্যে এমন সব তথ্য ছিল, যা তিনি উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক, বিদেশি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা এবং গোয়েন্দা ব্রিফিং থেকে সংগ্রহ করেছিলেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে ওই দুই স্বজনের সঙ্গে আলাপচারিতায় বোল্টন কিছু তথ্য তাঁর বইয়ের জন্য ব্যবহার করার কথা আলোচনা করেছিলেন। বার্তায় বোল্টন ওই দুজনকে ‘সম্পাদক’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

অভিযোগে ওই দুই স্বজনের পরিচয় বলা হয়নি। তবে এ বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন দুই ব্যক্তি বলেছেন, অভিযোগে বোল্টনের যে দুই স্বজনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁরা তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে।

এক বিবৃতিতে বোল্টন বলেন, ‘আমি আমার কর্মকাণ্ডকে বৈধ বলে প্রমাণ করতে এবং তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহারের দিকটি প্রকাশ করার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’

বোল্টনের আইনজীবী অ্যাবে লোয়েলের দাবি, তাঁর মক্কেল অবৈধভাবে কোনো তথ্য বিনিময় করেননি।

২০২২ সালে বোল্টনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। অর্থাৎ ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেই তদন্তটি শুরু হয়েছে।

মেরিল্যান্ডের ফেডারেল আদালতে বোল্টনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত তথ্য পাচারের আটটি অভিযোগ এবং জাতীয় প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত গোপনীয় তথ্য নিজের কাছে রেখে দেওয়ার ১০টি অভিযোগ আনা হয়েছে। সব কটি অভিযোগই গুপ্তচরবৃত্তির আইন লঙ্ঘনসংক্রান্ত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বোল্টনকে আদালতে হাজির করার বিষয়ে কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।

বোল্টন দোষী সাব্যস্ত হলে প্রতিটি অভিযোগে তাঁর সর্বোচ্চ ১০ বছর করে সাজা হতে পারে। বিভিন্ন বিষয় বিবেচনার ভিত্তিতে বিচারক তাঁর সাজার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

গত বুধবার হোয়াইট হাউসে বোল্টনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি একজন খারাপ মানুষ।’

বোল্টন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। পরে তিনি প্রেসিডেন্টের অন্যতম সমালোচক হয়ে ওঠেন। বোল্টন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের দূত হিসেবেও কাজ করেছেন। গত বছর প্রকাশিত আত্মজীবনীতে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন বোল্টন।

অভিযোগে কৌঁসুলিরা বলেছেন, বোল্টন ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর দৈনন্দিন কাজকর্ম–সম্পর্কিত এক হাজারের বেশি পৃষ্ঠার তথ্য দুজন অননুমোদিত ব্যক্তির সঙ্গে ভাগাভাগি করেছিলেন। এর মধ্যে সরকারের অত্যন্ত গোপনীয় তথ্যও ছিল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ল টন র ব র দ ধ দ ই স বজন র কর ছ ল ন ব যবহ র প রক শ কর ছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্লট না নিলেও টিউলিপের সাজা যে কারণে

শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে পূর্বাচলের ছয়টি প্লট নিয়ে ছয়টি মামলা হয়েছে; এর একটি প্লটও তাঁর ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের নামে নেই। কিন্তু তিনটি মামলায় তিনি আসামি, এর একটিতে তাঁর কারাদণ্ড হলো।

আজ সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক মো. রবিউল আলমের দেওয়া রায়ে টিউলিপকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে তাঁকে। অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাঁকে আরও ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য, সাবেক মন্ত্রী টিউলিপকে সাজা দেওয়ার কারণ হলো, তিনি তাঁর মা শেখ রেহানার নামে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দে তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছিলেন।

টিউলিপকে ‘প্রিভেনশন অব করাপশন অ্যাক্ট ১৯৪৭’–এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, আসামি টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব সালাহ উদ্দিনকে মোবাইল, ইন্টারনেটের বিভিন্ন অ্যাপসহ সরাসরি যোগাযোগ করে প্রভাবিত করেছেন বলে সাক্ষীদের জবানবন্দির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পূর্বাচলে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা নিজের নামে একটি প্লট নেওয়ার পাশাপাশি তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, ভাগনি আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামেও প্লট বরাদ্দ হয়। ২০২২ সালে তাঁরা প্লটগুলো গ্রহণ করেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন এই প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে। তারপর গত জানুয়ারিতে ছয়টি প্লট নিয়ে ছয়টি মামলা করে। তাতে অভিযোগ করা হয়, আবেদনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর এই প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া তাদের নামে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বাড়ি থাকায় তাঁরা আইনত নতুন করে প্লট বা ফ্ল্যাট পেতে পারেন না।

আরও পড়ুনটিউলিপের ২, রেহানার ৭ ও হাসিনার ৫ বছর কারাদণ্ড৫ ঘণ্টা আগেশেখ রেহানার প্লট দুর্নীতির মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আজ সোমবার ঢাকার আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ