জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বক্তৃতায় সনদের গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে অনেক অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনেছেন। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তৃতায় আলংকারিক বাহুল্য ও শ্রেষ্ঠত্ববাদী অহমিকার চর্বিতচর্বণ ছাড়া আর কিছুই নেই। মোটাদাগে তাঁর এই অন্তঃসারশূন্য বক্তব্য জাতিকে আশার আলো দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।

আজ রোববার সকালে এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এসব কথা বলে।

অনৈক্যের প্রভাব খোদ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা এমন এক আপত্তিজনক ও বিতর্কিত বিষয়ের অবতারণা করেছেন, যা রাজনৈতিকভাবে তো বটেই, সমাজতাত্ত্বিক ও দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল। তিনি দুইবার তাঁর বক্তৃতায় ‘বর্বরতা’ ও ‘সভ্যতা’র যে মেরুকরণ করেছেন, তা নিন্দনীয় ও বিদ্বেষমূলক হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এ সনদ প্রণীত হয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই সনদে নারী, লৈঙ্গিক পরিচয়ে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ব্যাপারে কোনো আশার আলো নেই। এ সনদ স্বাক্ষর দিবসে সব রাজনৈতিক দল উপস্থিত না থাকলেও সরকার ও ঐকমত্য কমিশন সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এই আয়োজন করতে ব্যতিব্যস্ত ছিল বলে মনে হয়েছে। এমতাবস্থায় জুলাই সনদ ঐক্যের ডাক দিতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছে, যা অদূর ভবিষ্যতে নতুন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করবে।

বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, মহাসমারোহে ‘জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর’ আয়োজনের ঢাকঢোল পেটানো হলেও শুরু থেকেই জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়া ও পরিসর নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ছিল। তাই এই অনুষ্ঠান নিয়ে মানুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আগ্রহ ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশন প্রতিষ্ঠা, সংস্কার নিয়ে আলাপচারিতা ও সর্বোপরি জুলাই সনদ প্রস্তুত করার লক্ষ্যে যেভাবে অগ্রসর হয়েছে, তা অভ্যুত্থানের বহু অংশীজনকেই আশাহত করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সরকার এতটাই জনবিমুখ হয়ে পড়েছে যে বহু অংশীজনের স্বর এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতসহ জনগণের আকাঙ্ক্ষা উঠে আসেনি সংস্কারের সুপারিশমালা ও চূড়ান্ত জুলাই সনদে। বিশেষত, নারী, লিঙ্গীয় পরিচয়ে সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ব্যাপারে এই সনদে কোনো আশার আলো নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেছে, নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে খুশি করতে গিয়ে বিভিন্ন পক্ষকে এই সনদ চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় দূরে রাখা হয়েছে। অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় অংশীদার শিক্ষার্থীদের অভিপ্রায়কে (চাওয়া) গুরুত্ব না দিয়ে যে ‘ঐক্যে’র কথা প্রচার করা হয়েছে, সেখানে যে ফাঁক রয়েছে, তা সনদ স্বাক্ষরের দিনই দেখা গেছে। জুলাই যোদ্ধাদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং পুলিশ তাঁদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক মনে করে, ব্রিটিশ ও পশ্চিমা ঔপনিবেশিক আধিপত্যবাদীরা উপনিবেশিত জাতিগুলোকে ‘অসভ্য’ ও ‘বর্বর’ সাব্যস্ত করে তাদের ওপর তথাকথিত ‘মর্ডানিটি’ (আধুনিকতা) ‘এনলাইটমেন্ট’ (আলোকায়ন), ‘সিভিলাইজেশন’ (সভ্যতা), ‘হোয়াইট সুপ্রিমেসি’ (শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ) চাপিয়ে দিয়েছিল। তেমনি প্রধান উপদেষ্টা ক্ষমতার মসনদে বসে অবিবেচনাপ্রসূত ঔপনিবেশিক অপরায়নের ছাঁচেই কথা বলেছেন। মনে রাখা দরকার, তিনি একটি সরকারের প্রধান নির্বাহী হলেও এটি তাঁর অস্থায়ী পরিচয়। সারা বিশ্বেই তিনি একজন স্বনামধন্য একাডেমিশিয়ান ও সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে সমাদৃত। এমন এক বর্ণিল একাডেমিক পরিচয় থাকার পরও তিনি কী করে উপনিবেশজাত শব্দসম্ভারে তাঁর বক্তৃতা রাখতে পারলেন, তা আমাদের কাছে বিস্ময়কর লেগেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক এমন শব্দচয়নের বিরোধিতা করে তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ র জন ত ক র বক ত বক ত ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফাঁকা বুলির রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন আসছে কেন

সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত শব্দটি সম্ভবত ‘সংস্কার’। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু হয় সংস্কার নিয়ে আলোচনা ও তৎপরতা। গঠিত হয় অনেকগুলো কমিশন, টাস্কফোর্স ও কমিটি। এসব কমিশন, টাস্কফোর্স ও কমিটি থেকে শত শত সুপারিশ ও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ১৫ মাসের মাথায় এসে দেখা যাচ্ছে, মৌলিক আর্থসামাজিক বিষয়ের সংস্কারগুলো আলোচনাতেই নেই।

রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সহস্রাধিক সুপারিশ থেকে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হয়েছে মাত্র ১৬৬টি নিয়ে। এর মধ্যে আবার অনেক মৌলিক সংস্কার বিষয়েই রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আর যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নেও প্রত্যাশিত অগ্রগতি নেই। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো রহস্যজনকভাবে বাদ পড়ে যাচ্ছে বা বদলে দেওয়া হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ পুলিশ ও দুদক সংস্কারের কথা বলা যেতে পারে।

আরও পড়ুনগণ–অভ্যুত্থানের পরও কেন আমলাতন্ত্রের সংস্কার হলো না০৩ নভেম্বর ২০২৫

পুলিশ বাহিনীকে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবমুক্ত রেখে পেশাদারির সঙ্গে পরিচালনার জন্য অনেক দিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে স্বাধীন পুলিশ
কমিশন গঠনের বিষয়টি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই পুলিশ কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ঠিকই; কিন্তু যেভাবে তা গঠিত হচ্ছে, তাতে এই কমিশন বর্তমান দুদকের মতোই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও আমলাতন্ত্রের বশীভূত নখদন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠান হবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পুলিশের মূল সমস্যা হলো অবৈধ আদেশ ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার। এ প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয় নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও পদায়ন ঘিরে। যদি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের মাধ্যমে এ কাজগুলো করা যায়, তাহলে পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব কমে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ কমিশন গঠনের জন্য যে অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে, সেখানে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষমতা পুলিশ কমিশনকে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়নি।

অর্থাৎ এগুলো আগের মতোই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে। কমিশনের কাজ হবে এ–সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও সুপারিশ করা। তবে সেগুলো বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে অধ্যাদেশে কিছু নেই। এমনকি আইজিপি নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য কমিশনকে তিন সদস্যের একটি প্যানেল গঠনের ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রস্তাব করেছিল আইন উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন কমিটি, সেটিও খসড়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ কমিশনের সদস্য বাছাইয়ের জন্য যে কমিটি করা হবে, তার সভাপতি হবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফলে বাছাই কমিটি কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশকে আগের মতোই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন রাখার মাধ্যমে কার্যত পুলিশ কমিশনকে ‘নখদন্তহীন’ করে রাখার তৎপরতা চলছে আমলাদের দিক থেকে। কোনো কোনো রাজনৈতিক মহলও তা–ই চাইছে। (পুলিশ কমিশনের খসড়ায় আমলাতন্ত্রের ‘হস্তক্ষেপ’, প্রথম আলো, ৩০ নভেম্বর ২০২৫)

পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও আমলাতন্ত্রের বাধার বিষয়টি উঠে এসেছিল। সেখানে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পক্ষ থেকে পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করা হয়েছে।

পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত থেকে দেখা যায়, সেখানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন করলে নিয়ন্ত্রণকারী কোনো কর্তৃপক্ষ থাকবে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা এবং পুলিশ বাহিনীকে যৌক্তিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যাবে না। সুতরাং স্বাধীন পুলিশ কমিশন করার প্রস্তাবের সঙ্গে জননিরাপত্তা বিভাগ যৌক্তিক কারণে দ্বিমত পোষণ করছে।’ (পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, সংলগ্নী-৯) সম্ভবত এ দ্বিমতের প্রতিফলনই ঘটেছে পুলিশ কমিশনবিষয়ক খসড়া অধ্যাদেশে।

পরিস্থিতি এ রকম যে একদিকে বহু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না, অন্যদিকে যেসব সংস্কার বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেগুলোর অনেকগুলো দায়সারাভাবে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

যেনতেনভাবে কোনো কমিশন গঠন করলেই যে উদ্দেশ্য সফল হয় না, তার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একসময় দেশে দুর্নীতি দমনের জন্য বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে কাজ করত দুর্নীতি দমন ব্যুরো। এই ব্যুরো নির্বাহী বিভাগের অধীন থাকায় এর স্বাধীনতা, কার্যকারিতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে ছিল ব্যাপক সংশয় ও জন-অসন্তোষ।

এ রকম একটি পটভূমিতেই দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪–এর মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের অধীন ব্যুরোর পরিবর্তে স্বাধীন কমিশন হিসেবে দুদক গঠন করা হয়। আইন অনুসারে দুদক একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন হলেও বাস্তবে তা গঠিত হওয়ার পরের দুই দশক স্রেফ ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে। এর অন্যতম কারণ হলো বর্তমানে বাছাই কমিটির মাধ্যমে যেভাবে দুদকের কমিশনার নিয়োগ করা হয়, তাতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সুস্পষ্ট প্রভাব থাকে।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত দুদক সংস্কার কমিশন এ সমস্যার সমাধানে কমিশনার নিয়োগে বিদ্যমান ‘বাছাই কমিটি’র বদলে একটি ‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’ গঠনের সুপারিশ করেছিল, যেখানে সরকারের নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি বিরোধী দল ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে অভিজ্ঞ নিরপেক্ষ ব্যক্তির অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছিল। এই কমিটি সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসরণ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ কমিশনার বাছাই করবে। সেই সঙ্গে দুদকের কাজের ষাণ্মাসিক পর্যালোচনা, গণশুনানি আয়োজন ও পরামর্শ প্রদান করবে।

আরও পড়ুনরাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে সংস্কার ছাড়া দুর্নীতি দমন অসম্ভব০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

এ বিষয়ে জুলাই সনদে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্যও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) অভিযোগ করেছে, অন্তর্বর্তী সরকার বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে।

জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মতির পরও চূড়ান্ত অধ্যাদেশে এ সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার বিষয়টি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের অনাগ্রহের ইঙ্গিত বলে উল্লেখ করেছে টিআইবি। বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি ছাড়াও চূড়ান্ত অধ্যাদেশে আরও কিছু ঐকমত্য অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে টিআইবি, যা সরকারের অভ্যন্তরে স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতি-সহায়ক ও সংস্কার পরিপন্থী অবস্থান ছাড়া আর কিছু হতে পারে না বলে মনে করে টিআইবি। (রাষ্ট্র সংস্কার কি সরকারের কাছে শুধুই ফাঁকা বুলি, প্রশ্ন টিআইবির, প্রথম আলো, ২৮ নভেম্বর ২০২৫)

এভাবে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির ক্ষমতা ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাছাই কমিটির সুপারিশে গঠিত পুলিশ কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে না। একইভাবে বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি–সংক্রান্ত সুপারিশ বাস্তবায়িত না হলে দুদকে আগের মতোই ক্ষমতাসীনদের কথায় চলবে। অন্যদিকে পুলিশ ও দুদক সংস্কার হয়ে গেছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হবে। এভাবে চালাকি করে ওপরে ওপরে সংস্কার করে বাহবা নেওয়া গেলেও তা গণতান্ত্রিক রূপান্তরে কোনো ভূমিকা রাখবে না।

পরিস্থিতি এ রকম যে একদিকে বহু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না, অন্যদিকে যেসব সংস্কার বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেগুলোর অনেকগুলো দায়সারাভাবে করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

শুধু সংখ্যা নয়, সংস্কারের গুণগত মান নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। সুপারিশে ঠিক কী ছিল আর বাস্তবায়ন ঠিক কতটুকু হয়েছে, সেটিও পরিষ্কার করতে হবে। এ জন্য সরকারকে সব কমিশন, টাস্কফোর্স ও কমিটিগুলোর দেওয়া সব সুপারিশের তালিকার পাশে কোনটা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে, একটা কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে তার বিস্তারিত প্রকাশ করতে হবে।

কল্লোল মোস্তফা বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ ও উন্নয়ন অর্থনীতিবিষয়ক লেখক

ই–মেইল: [email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফাঁকা বুলির রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্ন আসছে কেন