বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে যাঁরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশের নির্বাচনকে ব্যাহত করতে চান, তাঁরা প্রকারান্তরে আরেকটি দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান। বাংলাদেশে যদি নির্বাচন না হয়, বাংলাদেশের কোনো উন্নয়ন হবে না, বাংলাদেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব থাকবে না।’

গতকাল রোববার বিকেলে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে দুই শহীদ আবদুল কাইয়ুম ও আসিফ হোসেনের কবর জিয়ারত শেষে বরকতউল্লা বুলু এ কথাগুলো বলেন।

ভূরাজনীতির কারণে বাংলাদেশ কঠিন সংকটের মুখে রয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘সংকট থেকে উত্তরণ করতে হলে একটি নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো উপায় নেই। না হলে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থাকবে না, আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর থাকবে না।’

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বরকতউল্লা বুলু এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাইয়ের ৩৬ দিনে ২০ হাজার লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, এ কারণে যদি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়, তাহলে ’৭১–এ যাঁরা আমাদের মা–বোনদের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে উঠিয়ে দিয়েছেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন, পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন, আমাদেরকে হত্যা করেছেন, তাঁদেরও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ আগে হওয়া উচিত।’

বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘যাঁরা নতুন করে এই গণ–অভ্যুত্থানকে বিপ্লব বলে আরেকটি স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে চান ৫ আগস্টকে, তাঁরা প্রকারান্তরে বাংলাদেশকে অস্বীকার করেন, বাংলাদেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করেন। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সংবিধানকে অস্বীকার করেন, তাঁরা বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্য নন। অতএব তাঁদের ভোট চাওয়ারও কোনো অধিকার নেই।’

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড দাবিদারেরা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে মন্তব্য করেন বরকতউল্লা বুলু। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁরা এই মাস্টারমাইন্ড দাবি করেন, যাঁরা মূল দাবিদার বলেন, তাঁরা কিন্তু এই ১৫টি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, হলে ছিলেন; ছাত্রলীগের নামেই তাঁরা ছিলেন। শেখ হাসিনার অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন, কেউ ছাত্রলীগ থেকে ভিপিও হয়েছেন, বিভিন্ন পদে তাঁরা ছিলেন। ৫ আগস্টের পরে তাঁরা হঠাৎ করে বিপ্লবী হলেন। তাঁরা বললেন যে হাসিনা স্বৈরাচার, শেখ মুজিব খুনি, শেখ মুজিবের মরণোত্তর বিচার চাই।’

বুলু আরও বলেন, ‘এই ১৫টি বছর একটি দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে হালুয়া–রুটি–মাখন সব খেয়ে, সরকারি সব ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে, এরপরে বললেন যে ওনারা আরেকটি দলের নেতা–কর্মী। এর থেকে জাতি কী আশা করে, এদের নৈতিকতা কোথায়, আদর্শ কোথায়। যিনি একটি দলের মধ্য থেকে গুপ্ত অবস্থায় রাজনীতি করেছেন, পরে নিজের ভোল পাল্টালেন।’

২০২৪–এর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে যারা অংশ নেয়নি, তারাই আন্দোলনের প্রকৃত রূপকার বলে মন্তব্য করেন বুলু। তিনি বলেন, ‘সারা বাংলাদেশের মেহনতি মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ আন্দোলন যাঁরা দাবি করেন, তাঁরা কেউ একটি লাঠিপেটাও খাননি, কেউ গুলিবিদ্ধ হননি, কেউ শহীদও হননি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল–কলেজের ১৪৭ জন ছাত্র শহীদ হয়েছেন, দুই হাজার মানুষ শহীদ হয়েছেন—রিকশা–শ্রমিক–জনতা।’

বরকতউল্লা বুলুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী শামীমা বরকত, বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাস, সদস্যসচিব মাহফুজুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বরকতউল ল কর ছ ন আম দ র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

গণপিটুনিতে যুবক নিহতের ঘটনায় মামলা

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গণপিটুনিতে ফখরুল ইসলাম (২৫) নামের এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও আটজনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত ফখরুলের বাবা বদিউজ্জামান বাদী হয়ে গতকাল সোমবার রাতে বেগমগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে গতকাল সকালে উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হাজীপুর গ্রামে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ফখরুল ইসলামকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। গতকাল রাতে জানাজা শেষে ফখরুল ইসলামের লাশ চৌমুহনী পৌরসভার পৌর হাজীপুর গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তাঁর দুই বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে।

পুলিশ জানায়, ফখরুলের বিরুদ্ধে বেগমগঞ্জ থানায় চাঁদাবাজির দুটি মামলা এবং সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ছিল।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ বারি প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। এজাহারভুক্ত আসামিরা সবাই পলাতক।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল আনুমানিক আটটার দিকে হাজীপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবদুল মোতালেবের ছেলে মিজানুর রহমান বাড়ি থেকে অটোরিকশায় চৌমুহনী বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে ফখরুল তাঁকে গতি রোধ করে চাঁদা দাবি করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হলে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করা হয়। মুহূর্তের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হয়ে ফখরুলকে গণপিটুনি দেন। এতে ঘটনাস্থলে ফখরুলের মৃত্যু হয়েছে।

আরও পড়ুনমাইকে ঘোষণা দিয়ে গণপিটুনি, এক যুবক নিহত০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

হাজীপুর ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমার ছেলে বাড়ি থেকে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে দোকানে যাচ্ছিল। পথে ফখরুল অটোরিকশা থেকে নামিয়ে কিছু টাকা ছিনিয়ে নেয়। চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে ফখরুলকে গণপিটুনি দেয়।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন নিহত ফখরুলের বাবা বদিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পূর্বশত্রুতার জেরে আমার ছেলে ফখরুলকে ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লক্ষ্মীপুরে অস্ত্র কারখানার মালিক নুর উদ্দিন গ্রেপ্তার
  • গাড়ির ওয়ার্কশপে তৈরি হতো বন্দুক–এলজি
  • গণপিটুনিতে যুবক নিহতের ঘটনায় মামলা