দেশে কার্ডভিত্তিক লেনদেন দিন দিন বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে দেশে নতুন কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। এ সময়ে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে তিন গুণের বেশি।

কার্ডের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ জুলাই মাসের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহার, লেনদেনের প্রবণতা ও বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের ধরনের চিত্র তুলে ধরা হয়।

বর্তমানে দেশের ৫৬টি ব্যাংক ও ১টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফসি) কার্ড সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে ৪৮টি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড, দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড ও প্রিপেইড কার্ড সেবা দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের আগস্ট শেষে দেশে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ২২ লাখ। ২০২৫ সালের জুলাই শেষে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৬৯ লাখ। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বছরে কার্ডের সংখ্যা বেড়েছে ১৫৬ শতাংশ বা আড়াই গুণের বেশি। দেশে সর্বাধিক প্রচলিত তিন ধরনের কার্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা। পাঁচ বছরে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি (১২০ শতাংশ) বেড়েছে। সেই তুলনায় ক্রেডিট কার্ডের বৃদ্ধি কম, ৯৪ শতাংশ। সর্বশেষ পাঁচ বছরে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনও ২৩২ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের আগস্টে মোট কার্ডভিত্তিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূলত বেতন ভাতা, নগদ উত্তোলন ও দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ডেবিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও এখনো এটির ব্যবহার শহরকেন্দ্রিক। শহুরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে প্রিপেইড কার্ডের ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাঁচ বছরে বেড়েছে প্রায় ১৬ গুণ। মূলত অনলাইন কেনাকাটা, ভ্রমণ ব্যয় ও নির্দিষ্ট লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রিপেইড কার্ড জনপ্রিয়।

* ২০২০ সালের আগস্ট শেষে দেশে কার্ডের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ২২ লাখ, যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৬৯ লাখ।
* ২০২০ সালের আগস্টে কার্ডে লেনদেন হয়েছিল ১৪ হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ৪৭৯ কোটি টাকা খরচ করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর রয়েছে যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার অবস্থান। একসময় ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি খরচ হতো ভারতে, কিন্তু ভিসা জটিলতায় ভারতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমে যাওয়ায় দেশটি এখন ৬ নম্বরে নেমে এসেছে। আর ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা ডেবিট কার্ড বিদেশে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। এরপর ব্যবহার হয় যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, চীন ও ভারতে। প্রিপেইড কার্ডও সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় যুক্তরাজ্যে।

গত জুলাই মাসে দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকের ইস্যু করা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ৩ হাজার ৮৪ কোটি টাকা খরচ করেছেন গ্রাহকেরা। এর মধ্যে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া খুচরা বিক্রয়কেন্দ্র; বিদ্যুৎ, গ্যাসের মতো বিভিন্ন পরিষেবা বিল; ওষুধ ও ফার্মেসি, নগদ উত্তোলন, পরিবহন ও তহবিল স্থানান্তর হিসেবে ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ লেনদেন হয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে দেশে মোট ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। তবে জুনের তুলনায় জুলাইয়ে ভোক্তা ব্যয়ে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনাকাটা বৃদ্ধি, ব্যাংকের বিভিন্ন প্রচারণামূলক অফার, দৈনন্দিন কেনাকাটায় ডিপার্টমেন্ট স্টোরের সুবিধাজনক ভূমিকা ও এসব প্রতিষ্ঠানে কার্ড ব্যবহারের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির কারণে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়।

অন্যদিকে জুলাই মাসে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, প্রায় এক–চতুর্থাংশ অর্থ খরচ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকেরা। এরপর বিদেশিদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, ভারত, মোজাম্বিক, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের নাগরিকেরা বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন ক্রেডিট কার্ডে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২০ স ল র আগস ট ২০২৫ স ল র জ ল ই ক র ড র ব যবহ র ড প র টম ন ট য ক তর জ য ল নদ ন র কর ছ ন চ বছর সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বুধবার (২২ অক্টোবর) দিন শেষে ৩২ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। 

তবে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহাবিলের (আইএমএফ) ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম ৬) পদ্ধতি অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৬ দশ‌মিক ০৮ বিলিয়ন ডলার।

আরো পড়ুন:

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ করার স্বাধীনতা দিতে হবে’

আতিউর-বারাকাতসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত জুন মাস শেষে রেমিট্যান্সে আয়ের প্রবৃদ্ধি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার হয়। এরপর গত জুলাইর প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ২০২ কোটি ডলার পরিশোধ করে বাংলাদেশ। তখন গ্রস রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী তা ছিল ২৪ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার। এরপর প্রবাসী আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রিজার্ভ বাড়ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রাখায় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল। বিশেষ করে ডলারের দাম ১২২-১২৩ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রাখে। বিপরীত দিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। ফলে মাঝে মধ্যে বাজার থেকে ডলার ক্রয় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেইসঙ্গে দাতা সংস্থার অনুদান রিজার্ভ বাড়ায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলারে। করোনা পরবর্তী সময়ে সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে। ফলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে রিজার্ভ। যা অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

ঢাকা/নাজমুল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খাগড়াছড়িতে পাটাতন দেবে সেতুতেই আটকা কাভার্ড ভ্যান, যান চলাচল ব্যাহত
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে
  • অ্যাডিলেডে রোমাঞ্চকর জয়ে সিরিজ জিতল অস্ট্রেলিয়া
  • লিটন ফিরলেন টি-টোয়েন্টিতে, সৌম‌্য-সাইফ উদ্দিন নেই
  • দাউদ ইব্রাহিমের প্রেমে পড়েন এই নায়িকা, এরপর...
  • সিরাজগঞ্জে বাড়ছে এইডস রোগী, ২৬ জনের মৃত্যু
  • প্রকাশ্যে গুলি ছোড়েন কিশোর গ্যাং নেতা, রয়েছে নিজস্ব টর্চার সেল
  • শামসুর রাহমানের অবদান ও অপরিহার্যতা
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে