সাপ আসে, জোয়ারের পানি উঠে , অযত্নে কমিউনিটি ক্লিনিক
Published: 25th, October 2025 GMT
কমিউনিটি ক্লিনিক এখন অযত্ন, অবহেলার শিকার। কোনো কোনোটির ছাদ ও দেয়াল খসে পড়ছে। কোনোটিতে যাওয়া-আসার রাস্তা নেই। আবার কোনোটিতে জোয়ারের পানি ঢোকে। বাস্তবতা হলো, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে মানুষ ঠিকমতো সেবা পাচ্ছে না।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর এ চিত্র ধরা পড়েছে। সাংবাদিকেরা দেখেছেন, অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের গ্লুকোমিটার কাজ করে না। কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী নেই। অন্তত একটি এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনতে হয়।
প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা গত আগস্ট মাসের শেষ দুই সপ্তাহে দেশের ৮ বিভাগের ৮ জেলার ৩২টি ক্লিনিক সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন, অনেক ক্লিনিকে যাওয়ার রাস্তা নেই, কিছু বর্ষাকালে পানিতে ডুবে থাকে, কিছু ক্লিনিক ভাঙাচোরা, কয়েকটি ক্লিনিকের টয়লেট খারাপ, প্রায় সব ক্লিনিকের গ্লুকোমিটার যন্ত্র অলস পড়ে আছে। ক্লিনিকগুলোতে জনবলের সংকট আছে, আছে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ। বস্তুত কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামের মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
এই ৮ জেলা হচ্ছে পঞ্চগড়, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও নওগাঁ। এ ছাড়া খুলনাসহ আরও কিছু জেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকের অবস্থা জানা গেছে মুঠোফোনে কথা বলে।
প্রথম আলোর সাংবাদিকেরা ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা মানুষের মতামত নিয়েছেন, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারের (সিএইচসিপি) সঙ্গে কথা বলেছেন, কিছু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের বক্তব্য নিয়েছেন। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অসন্তুষ্টি দেখা গেছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর এ চিত্র ধরা পড়েছে। সাংবাদিকেরা দেখেছেন, অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিকের গ্লুকোমিটার কাজ করে না। কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী নেই। অন্তত একটি এলাকার মানুষ অভিযোগ করেছেন, কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে টাকা দিয়ে ওষুধ কিনতে হয়।কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার মূল দায়িত্ব সিএইচসিপির। তাঁরা সরকারের রাজস্ব খাতের ১৬তম গ্রেডের কর্মী। সিএইচসিপিকে সহায়তা করেন স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবারকল্যাণ সহকারী। তাঁরাও রাজস্ব খাতের একই গ্রেডের কর্মী। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকে কোনো আয়ার পদ নেই। বিদ্যুৎ বিল সরকার দেয় না। কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনার জন্য ১১ সদস্যের কমিউনিটি গ্রুপ থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, জমিদাতা, সিএইচসিপি এই গ্রুপের সদস্য। গ্রুপটি স্থানীয়ভাবে তহবিল গঠন করে আয়ার বেতন ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে।
মানুষের দোরগোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। ২০০১ সালের পর কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। পরে ২০০৯ সালে আবার চালু হয়। সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৬০।
এসব ক্লিনিক থেকে ২২ ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, দৈনিক গড়ে পাঁচ লাখ মানুষের এসব ক্লিনিক থেকে সেবা পাওয়ার কথা। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে কমিউনিটি ক্লিনিকের নাম পাল্টে ‘গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ করার সুপারিশ করেছে।
প্রথম আলোর পর্যবেক্ষণের বিষয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
তবে গতকাল শুক্রবার খুলনার দাকোপ উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মে মাসের পর ওই উপজেলার ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ পৌঁছায়নি। একটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কাছে প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছু নেই। গ্রামের মানুষ এলে শুধু প্যারাসিটামল দিচ্ছেন, স্বাস্থ্যশিক্ষা দিচ্ছেন আর দুঃখ প্রকাশ করছেন।
চারদিকে পানি জমায় কমিউনিটি ক্লিনিকটিতে যাওয়ার উপায় নেই। ফলে গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে চলে ক্লিনিকের কার্যক্রম। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার কায়েতকান্দা কমিউনিটি ক্লিনিকেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল র স এইচস প
এছাড়াও পড়ুন:
মাহফুজ ও আসিফের বিরুদ্ধে মিছিল, নেতৃত্বে এনসিপি থেকে বহিষ্কৃত মুনতাসির
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এর তদন্ত ও বিচারের দাবিতে ঢাকার সড়কে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। এ বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে বহিষ্কৃত মুনতাসির মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে এই বিক্ষোভ হয়। মিছিলের ব্যানারে আয়োজক হিসেবে লেখা ছিল ‘তৃণমূল এনসিপি’। এর আগে বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে ‘তৃণমূল এনসিপি’ গঠনের ঘোষণা দেন মুনতাসির মাহমুদ।
মিছিলের পর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়। সেখানে মুনতাসির মাহমুদ বলেন, দুজন ছাত্র উপদেষ্টা (মাহফুজ ও আসিফ) জুলাইয়ের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সরকারে গেলেও তাঁরা জুলাইয়ের প্রতিশ্রুতি রাখেননি। তাঁরা ‘সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি’ করেছেন। তাই সুনির্দিষ্ট দাবি হলো, তাঁরা উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে যত নিয়োগ হয়েছে, যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, যেসব টেন্ডার দেওয়া হয়েছে, সেগুলোতে কারা কাজ পেয়েছেন, কিসের বিনিময়ে পেয়েছেন, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
মুনতাসির আরও বলেন, দুই ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করে বলেছেন, তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। কিন্তু জেন-জি প্রজন্ম জানে, দুর্নীতির টাকা কেউ অ্যাকাউন্টে রাখে না। এই টাকা তাঁরা কোথায় পাচার করেছেন, নাকি বিটকয়েনে রেখেছেন, সেটা দুদককে তদন্ত করে বের করতে হবে।
প্রসঙ্গত, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর মুনতাসির মাহমুদ রেড ক্রিসেন্টে উপপরিচালক পদে চাকরি পেয়েছিলেন। আর উপদেষ্টা মাহফুজের ভাই মাহবুব আলম রেড ক্রিসেন্টের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রেড ক্রিসেন্টে মুনতাসির মাহমুদের চাকরিটি ছিল অস্থায়ী। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কয়েক দিন ধরে রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে রাজধানীর মগবাজারে প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভ করছিলেন মুনতাসির।
আরও পড়ুনবিদায়ী দুই উপদেষ্টা সরকারে থেকে কেমন করলেন৯ ঘণ্টা আগেএনসিপির পক্ষ থেকে নিষেধ করার পরও গত ১২ অক্টোবর লোকজন নিয়ে মুনতাসির সেখানে বিক্ষোভ করেন। ওই দিন রেড ক্রিসেন্টের বোর্ড সভায় তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়। বোর্ড সভায় উপদেষ্টার ভাই মাহবুব আলমও ছিলেন। সভার পর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থেকে বের হতে গেলে তাঁকে অবরুদ্ধ করেন মুনতাসির মাহমুদের অনুসারীরা।
সেদিনই মুনতাসিরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও পদ থেকে অব্যাহতির চিঠি ফেসবুকে প্রকাশ করে এনসিপি। এর পর থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বিরুদ্ধে ফেসবুক পোস্টে বিভিন্ন অভিযোগ করছিলেন মুনতাসির। সম্প্রতি এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের বিরুদ্ধেও তিনি দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন ফেসবুকে।
আরও পড়ুনমাহফুজ ও আসিফ কি স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন নাকি কোনো দলে যাচ্ছেন৭ ঘণ্টা আগে