লিভারপুলের টানা চার হার, স্লট বললেন, ‘এটাই সবচেয়ে বাজে’
Published: 26th, October 2025 GMT
গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ের পথে সব মিলিয়ে লিভারপুল হেরেছিল চার ম্যাচ। কিন্তু এবার প্রথম নয় ম্যাচেই চতুর্থ হার দেখে ফেলল দলটি। লিগে প্রথম পাঁচ ম্যাচ জেতার পরই টানা চার ম্যাচ হারল অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি। সর্বশেষ গতকাল শনিবার রাতে ব্রেন্টফোর্ডের মাঠে লিভারপুলের হার ৩-২ গোলে। তবে চার হারের মধ্যে এই ম্যাচের পারফরম্যান্সকে ‘সবচেয়ে বাজে’ বলে মন্তব্য করেছেন লিভারপুল কোচ আর্নে স্লট।
প্রতিপক্ষের মাঠে হারের পর লিভারপুল কোচ স্লট বলেছেন, ‘চার হারের মধ্যে আমার মতে এটাই সবচেয়ে বাজে। প্রথমার্ধে এবং দ্বিতীয়ার্ধের কিছু সময় আমরা স্বাভাবিক কাজগুলোই ঠিকঠাক করতে পারিনি। আমার মনে হয় তারা আমাদের চেয়ে বেশি ডুয়েল জিতেছে।’
ব্রেন্টফোর্ডের মাঠে ম্যাচের ৫ মিনিটেই পিছিয়ে যায় লিভারপুল। কর্নার থেকে বল পেয়ে গোল করে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন ডাংগো ওয়াতারা। এরপর কয়েকবার চেষ্টা করেও সমতা ফেরাতে পারেনি অতিথিরা। উল্টো প্রথমার্ধের শেষ দিকে কেভিন শাডের গোলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে ‘অল রেড’রা। যোগ করা সময়ে অবশ্য মিলোস কেরকেজের গোলে ব্যবধান কমায় লিভারপুল।
আরও পড়ুনএল ক্লাসিকোর আগে রিয়াল ও বার্সেলোনা কোথায় এগিয়ে, কোথায় পিছিয়ে২ ঘণ্টা আগেবিরতির পর ৬০ মিনিটে ইগর থিয়াগোর পেনাল্টি গোলে ব্যবধান ৩-১ করে ব্রেন্টফোর্ড। ম্যাচের শেষ দিকে ৮৯ মিনিটে ৬ ম্যাচের খরা কাটিয়ে গোলে ফেরেন মোহাম্মদ সালাহ। ব্যবধান কমে আসে ৩-২-এ। তবে হার এড়াতে তৃতীয় গোলটির আর দেখা পাননি বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
ব্রেন্টফোর্ডের উদ্যাপন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জ্বলি ন’ উধিম কিত্তেই!
পাহাড়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাগুলো দশকের পর দশক ধরে চলা অমীমাংসিত সমস্যা—ভূমি বিরোধ, দমন-পীড়ন, উচ্ছেদ ও আদিবাসীদের প্রান্তিকীকরণের এক তিক্ত ফসল। ঘটনাগুলো আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে আদিবাসীদের ক্ষেত্রে সুরক্ষাব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর।
১৯৯২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আদিবাসী কবি কবিতা চাকমা এই চলমান সংকট ও সংগ্রামের মর্ম উপলব্ধি করে তাঁর গভীর অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন এভাবে:
‘রুখে দাঁড়াব না কেন।
যা ইচ্ছে তাই করবে—
বসত বিরান ভূমি
নিবিড় অরণ্য মরুভূমি,
সকালকে সন্ধ্যা
ফলবতীকে বন্ধ্যা।
রুখে দাঁড়াব না কেন!
যা ইচ্ছে তাই করবে—
জন্মভূমে পরবাসী
নারীকে ক্রীতদাসী,
দৃষ্টিকে অন্ধ
সৃষ্টিকে বন্ধ।
অবহেলা অপমানে ক্রোধ
ধমনিতে তুমুল রক্তের স্রোত
আঘাতে আঘাতে ভাঙে বিঘ্ন,
চেতনার সমুদ্র তারুণ্যে তীক্ষ্ণ।
—আমার সম্পূরক একমাত্র আমিই
রুখে দাঁড়াব না কেন!’
(কবিতা চাকমা, ১৯৯২, , জ্বলি ন’ উধিম কিত্তেই! রুখে দাঁড়াব না কেন!)
তিন দশক আগের লেখা কবিতাটি আজও প্রবলভাবে প্রাসঙ্গিক। কবিতাটি যেন তাদেরই ক্রোধ, বেদনা ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতিচ্ছবি, যাদের অধিকার বারবার উপেক্ষিত, যাদের ভূমি ও অস্তিত্ব অপরাজনীতির শিকার এবং যাদের কণ্ঠস্বর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিনিয়ত রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সহিংসতা ও প্রাণহানিগত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়িতে এক ১২ বছর বয়সী মারমা স্কুলছাত্রী টিউশন শেষে বাড়ি ফেরার পথে যৌন সহিংসতার শিকার হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর ‘জুম্ম ছাত্র–জনতা’ ন্যায়বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরে বিক্ষোভ করে।
তারা ঘোষণা করে যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব আসামিকে গ্রেপ্তার না করা হলে জেলাব্যাপী অবরোধ করা হবে। ২৬ সেপ্টেম্বরের সংঘটিত ঘটনাগুলো একটি বড় মোড় আনে। প্রতিবাদকারীরা জেলাব্যাপী অবরোধ ঘোষণা করে।
পরদিন আন্দোলন আরও বিস্তৃত হয়ে পড়ে এবং বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করে। একাধিক স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ খাগড়াছড়ি সদর ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। তবু সহিংসতা বন্ধ হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র হামলা চালানো হয় পাহাড়িদের বসতির ওপর। দুজন আদিবাসী গুরুতর আহত হন।
পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ২৮ সেপ্টেম্বর, গুইমারা উপজেলা এলাকায়, যেখানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে, যার ফলে তিনজন তরুণ আদিবাসী নিহত হন এবং আরও অনেকে আহত হন। শতাধিক আদিবাসী মালিকানাধীন বাড়ি, দোকান এবং যানবাহন বাঙালি সেটেলাররা লুটপাট ও আগুনে পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুনহাসিনা সরকারের নীতি পাহাড়ে এখনো বহাল আছে১৮ অক্টোবর ২০২৪তথ্য বিকৃতি, অপপ্রচার ও প্রশ্নবিদ্ধ মেডিকেল রিপোর্টএই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দ্রুত ছড়িয়ে দাবি করা হয় হামলার জন্য বিক্ষোভকারীরাই দায়ী। একই সঙ্গে মেডিকেল রিপোর্টের ফলাফল পত্রিকায় প্রকাশের কয়েক দিন পূর্বেই বাঙালি সেটেলারদের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়, কথিত ধর্ষণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পরবর্তী সময়ে সরকারি মেডিকেল বোর্ড জানায়, ১২ বছর বয়সী মেয়েটির দেহে ‘ধর্ষণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি’। কিন্তু আদিবাসী অধিকারকর্মীরা রিপোর্ট সাজানো বলে প্রত্যাখ্যান করেন এবং স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের দাবি জানান।
১ অক্টোবর একটি ফেসবুক পোস্টে চাকমা সার্কেলের রানি ইয়েন ইয়েন যেসব প্রশ্ন তুলেছেন তার মধ্যে কয়েকটি প্রশ্ন ছিল: মেডিকেল রিপোর্টে নেগেটিভ আসবে সেটি সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার তিন দিন আগে এনারা জানলেন কীভাবে? কারা তাদের সে আশ্বাস দিয়েছিল? মেডিকেল রিপোর্ট কি গতকাল সাংবাদিকদের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেছে? তাদের সে এখতিয়ার আছে? না পুলিশ করেছে? করে থাকলে থানার রিসিভ করার কোনো সিল নেই কেন? আর পুলিশ করুক বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ভুক্তভোগীর ছবি নামসহ ব্যক্তিগত পরিচয়–সংবলিত রিপোর্ট প্রকাশ করা আইনত দণ্ডনীয় নয় কি?
রানি ইয়েন ইয়েন এর মতে, যারা পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী নারী এবং শিশুদের ধর্ষণ–পরবর্তী রাষ্ট্রযন্ত্রের ধর্ষণ ঘটনার সত্যতা ধামাচাপা দেওয়ার বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না, তাদের জেনে রাখা উচিত এই মেডিকেল রিপোর্ট বিনা প্রশ্নে সত্য বলে গ্রহণ করার কোনো অবকাশ নেই। ছাত্রনেতা অলিক মৃসহ সচেতন অনেকেই ইতিমধ্যে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভেতর সোহানি জাহান তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা ঘটনায় তাঁর মেডিকেল রিপোর্টেও ধর্ষণের আলামত উধাও করে দেওয়া হয়েছিল। কেবল ধর্ষণ বাদ দিলেও জুলাই শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছয়বার বদলাতে বাধ্য করা হয়েছিল।
এটি লিখলাম কেবল মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য যে নিপীড়ককে বাঁচানোর জন্য রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও সংস্থাগুলো চাইলে অনেক কিছু করতে পারে, মিথ্যা মেডিকেল রিপোর্ট তৈরি করা সহজ কাজগুলোর মধ্যে একটি।
আরও পড়ুনপাহাড়ে কেন এখনো সংঘাতময় পরিস্থিতি০২ ডিসেম্বর ২০২১ন্যায়বিচার ও জবাবদিহির জন্য সুপারিশঅন্যান্য অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের মতো মানবাধিকার সংগঠন ফিয়ান ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল চিটাগাং হিল ট্র্যাক্টস কমিশন, ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্ক গ্রুপ অন ইন্ডিজিনাস অ্যাফেয়ার্স এবং মাইনরিটি রাইটস গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল আদিবাসীদের ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ এবং তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এবং চলমান প্রাতিষ্ঠানিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। সেগুলো হলো:
১. ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সব ব্যক্তিকে দ্রুত শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও বিচার করতে হবে।
২. ভুক্তভোগীর জন্য নিরাপত্তা, জরুরি চিকিৎসা ও মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দিতে হবে।
৩. পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসীদের ওপর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দায়মুক্তির সংস্কৃতি এবং যৌন সহিংসতার রাজনৈতিক ব্যবহারের অবসান ঘটাতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী এবং বাঙালি সেটেলারদের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সব মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে দ্রুত, নিরপেক্ষ ও কার্যকর ফৌজদারি তদন্ত, বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
পাহাড়ি কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণে জড়িতদের বিচার দাবিতে খাগড়াছড়িতে সড়ক অবরোধ। চেঙ্গী স্কয়ার, খাগড়াছড়ি, ২৫ সেপ্টেম্বর