জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আবেগের চেয়ে বাস্তবতাকে প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, এমন কোনো পদ্ধতির মধ্যে যেন না যাওয়া হয়, যা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারির দাবির প্রেক্ষাপটে আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গণ অধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জনগণের কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার (সাংবিধানিক ক্ষমতা) গণভোটের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে বলেই সংসদ এর বাইরে যেতে পারবে না। এখন যদি আবেগপ্রবণ হয়ে রাজনৈতিকভাবে গণভোট করার জন্য বাক্য ব্যয় করা হয়, বিভিন্ন আদেশ কার্যকর করা হয়, তাহলে এগুলো নিয়ে সামনে প্রশ্ন উঠতে পারে। সেটা না করে সবার ঐক্যের ভিত্তিতে যাতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করা হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

বিএনপিসহ অধিকাংশ দল জুলাই সনদে সই করলেও তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী চায়, সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে তা শাসনতন্ত্রে সন্নিবেশিত হোক। সনদে সই না করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একই দাবি তুলে বলেছে, এই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পেলেই তারা এতে সই করবে।

এনসিপিসহ কয়েকটি দলের সনদে সই না করার বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আশা করা যায়, সুষ্ঠু একটা সমাধান হবে। তারপর তারাও স্বাক্ষর করতে পারবে। তাহলে জুলাই সনদ হবে রাজনীতিতে সমঝোতার একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকারবদ্ধ।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত জাতীয় সংসদই সুনির্দিষ্ট ফোরাম—এ মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখানে কোনো দলের বিশেষ দ্বিমত নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সংসদ যাতে বাধ্য থাকে, সেটার একটি আইনি ভিত্তি রচনার জন্য একটা প্রস্তাব বা সুপারিশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দেওয়া হবে। এরপর কী প্রক্রিয়ায় আইনি ভিত্তি দিতে চাচ্ছে, সেটি জানা যাবে। নোট অব ডিসেন্টসহ যেভাবে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, হুবহু সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে যখন একটি বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হবে, তখন সেখান থেকে জাতীয় সংসদ বা কোনো সংসদ সদস্য সরতে পারবে না।’

আবেগের চেয়ে বাস্তবতাকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অনেকে আবেগের বশে বলে থাকেন, জুলাই অভ্যুত্থানে জনগণের যে অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে, সে অভিপ্রায়ের শক্তিবলে অনেক বৈপ্লবিক আদেশ জারি করা যায়। এগুলো আবেগী বক্তব্য। কারণ, জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্যই সংবিধানের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সাংবিধানিকভাবেই এই সরকার গঠিত হয়েছে। এখনো সাংবিধানিকভাবে এই রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে।’

এনসিপির উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাস্তবতার ভিত্তিতে কথা বলতে হবে। এমন কোনো প্রস্তাব দেওয়া যাবে না, যেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমন কোনো আদেশ দেওয়া যাবে না, যেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। পুরো প্রক্রিয়াকে যাতে কেউ কখনো অবৈধ বলে আওয়াজ দিতে না পারে। ১০-১৫ বছর পরও যাতে কেউ এই প্রশ্ন নিয়ে আদালতে যেতে না পারে। সে রকম একটা ভিত্তি এখনই রচনা করতে হবে। অতি সাবধানে অর্জিত সাফল্যকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’

‘ফ্যাসিবাদের’ প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে সবাইকে এক থাকার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের সভাপতিত্বে এবং মুখপাত্র ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চোখ হারানো শ্রমিকনেতা রুবেল হোসেন, অভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজ হোসেনের বাবা আবদুর রব, ইমাম হাসান ভূঁইয়ার ভাই রবিউল আওয়াল ভূঁইয়া, শহীদ গোলাম নাফিজের মা নাজমা আক্তারও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র র সদস য জনগণ র এনস প এমন ক

এছাড়াও পড়ুন:

মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপির অন্যতম লক্ষ্য হলো দলটি কোনো মেগা প্রকল্পে যাবে না। তারেক রহমান বলেছেন, মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। রাষ্ট্রের অর্থ জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার উন্নয়নের পেছনে খরচ করা হবে।

আজ বুধবার বিকেলে ঢাকার ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এ কথা বলেন। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তিনি। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে যুবদল এবং কৃষক দলের নেতারা অংশ নেন।

বিগত স্বৈরাচারের সময় মেগা প্রকল্প হলেও উদ্দেশ্য সফল হয়নি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিগত স্বৈরাচারের সময় উন্নয়নের নামে বহু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। আইটি পার্কের নামে বহু অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে এখন বিয়েশাদির মতো সামাজিক অনুষ্ঠান হয়। যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে করা হয়েছিল, সেটি সফল হয়নি।

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপির অন্যতম লক্ষ্য হলো আমরা কোনো মেগা প্রকল্পে যাব না। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থ জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নতির পেছনে খরচ করতে হবে। সে জন্যই বিএনপির নতুন আইটি পার্ক বানানোর পরিকল্পনা নেই। যেগুলো আছে, সেগুলো সংস্কার করে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের সুযোগ করে দেবে।’

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, কর্মসংস্থানসহ আটটি বিষয়ে কীভাবে কাজ করবে—এ নিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে বিএনপি। এই অনুষ্ঠান শুক্রবার বাদে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ওলামা দলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন অংশ নেবে। এরপর বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসের বাইরে অন্য কোনো একটি দিনে হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। এ কর্মশালার চতুর্থ দিনে যুবদল এবং কৃষক দলের নেতারা অংশ নেন।

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ‘দল হিসেবে বিএনপির কাছে মানুষ নির্দিষ্ট পরিকল্পনা চায়। ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবে জানতে চায়। আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছি। এমন পরিকল্পনা আর কোনো দল করেনি। এখন আর বসে থাকলে চলবে না। মানুষকে এসব পরিকল্পনার কথা জানাতে হবে। পরিকল্পনার যদি ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে দেশের মানুষের শুভ পরিবর্তন হবে।’

দেশ রক্ষার জন্য আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে জেতাতেই হবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ধানের শীষকে জেতাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ধানের শীষকে জেতানোর মাধ্যমে জণগণের পক্ষের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ধানের শীষকে জেতানোর মাধ্যমে দেশকে রক্ষা করতে হবে। নো কম্প্রোমাইজ।’

নেতা–কর্মীদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা এখনই মাঠে নেমে পড়ুন। মাঠে না নামলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখুন, প্রত্যেকবার দেশকে রক্ষা করেছে বিএনপি। এখন আবার দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়েছে। মানুষের কাছে যান।’

মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারের সময় রাজনৈতিক কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের মানবাধিকার হরণ করা হয়েছিল। দল হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছিল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আগামীতেও ভিন্নমতাদর্শের মানুষ যাতে নিরাপদে মতামত জানাতে পারে, সেই ব্যবস্থা করবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘যার যার মতাদর্শ অনুযায়ী কথা বলবে। সিদ্ধান্ত নেবে জনগণ। আগামী দিনে বিএনপি চায় মতামত প্রকাশের জন্য আবরার ফাহাদের মতো যেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে না হয়।’

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম, যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সঞ্চালনা করেন আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান (সোহেল)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত জেলেনস্কি
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের হাতে ফিরবে: গয়েশ্বর
  • ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের পদত্যাগের চান মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা, সার্ক ফোয়ারা মোড় অবরোধ
  • যেকোনো মূল্যে ধানের শীষকে জেতাতে হবে: তারেক রহমান 
  • মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি: তারেক রহমান
  • আমির বনাম সভাপতি: কক্সবাজার-৪ আসনে ‘হাইভোল্টেজ’ লড়াই 
  • এনইআইআর চালুতে ‘আপস করবে না’ সরকার, কমতে পারে আমদানি শুল্ক
  • বায়ুদূষণ রোধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি
  • সিলেটে পাওনা টাকা নিয়ে তরুণকে অপহরণের পর হত্যা, আরও একজন গ্রেপ্তার
  • ধর্মের নামে ট্যাবলেট বিক্রি করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার পরিকল্পনা চলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ