ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে, এমন কিছুতে যাওয়া ঠিক হবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
Published: 26th, October 2025 GMT
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আবেগের চেয়ে বাস্তবতাকে প্রাধান্য দেওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, এমন কোনো পদ্ধতির মধ্যে যেন না যাওয়া হয়, যা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারির দাবির প্রেক্ষাপটে আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গণ অধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জনগণের কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার (সাংবিধানিক ক্ষমতা) গণভোটের মাধ্যমে প্রকাশিত হবে বলেই সংসদ এর বাইরে যেতে পারবে না। এখন যদি আবেগপ্রবণ হয়ে রাজনৈতিকভাবে গণভোট করার জন্য বাক্য ব্যয় করা হয়, বিভিন্ন আদেশ কার্যকর করা হয়, তাহলে এগুলো নিয়ে সামনে প্রশ্ন উঠতে পারে। সেটা না করে সবার ঐক্যের ভিত্তিতে যাতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করা হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিএনপিসহ অধিকাংশ দল জুলাই সনদে সই করলেও তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী চায়, সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে তা শাসনতন্ত্রে সন্নিবেশিত হোক। সনদে সই না করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একই দাবি তুলে বলেছে, এই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পেলেই তারা এতে সই করবে।
এনসিপিসহ কয়েকটি দলের সনদে সই না করার বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আশা করা যায়, সুষ্ঠু একটা সমাধান হবে। তারপর তারাও স্বাক্ষর করতে পারবে। তাহলে জুলাই সনদ হবে রাজনীতিতে সমঝোতার একটি ঐতিহাসিক দলিল, যা বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো অঙ্গীকারবদ্ধ।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচিত জাতীয় সংসদই সুনির্দিষ্ট ফোরাম—এ মন্তব্য করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখানে কোনো দলের বিশেষ দ্বিমত নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় সংসদ যাতে বাধ্য থাকে, সেটার একটি আইনি ভিত্তি রচনার জন্য একটা প্রস্তাব বা সুপারিশ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দেওয়া হবে। এরপর কী প্রক্রিয়ায় আইনি ভিত্তি দিতে চাচ্ছে, সেটি জানা যাবে। নোট অব ডিসেন্টসহ যেভাবে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, হুবহু সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে যখন একটি বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হবে, তখন সেখান থেকে জাতীয় সংসদ বা কোনো সংসদ সদস্য সরতে পারবে না।’
আবেগের চেয়ে বাস্তবতাকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অনেকে আবেগের বশে বলে থাকেন, জুলাই অভ্যুত্থানে জনগণের যে অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়েছে, সে অভিপ্রায়ের শক্তিবলে অনেক বৈপ্লবিক আদেশ জারি করা যায়। এগুলো আবেগী বক্তব্য। কারণ, জনগণের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্যই সংবিধানের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। সাংবিধানিকভাবেই এই সরকার গঠিত হয়েছে। এখনো সাংবিধানিকভাবে এই রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে।’
এনসিপির উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বাস্তবতার ভিত্তিতে কথা বলতে হবে। এমন কোনো প্রস্তাব দেওয়া যাবে না, যেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এমন কোনো আদেশ দেওয়া যাবে না, যেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হবে। পুরো প্রক্রিয়াকে যাতে কেউ কখনো অবৈধ বলে আওয়াজ দিতে না পারে। ১০-১৫ বছর পরও যাতে কেউ এই প্রশ্ন নিয়ে আদালতে যেতে না পারে। সে রকম একটা ভিত্তি এখনই রচনা করতে হবে। অতি সাবধানে অর্জিত সাফল্যকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
‘ফ্যাসিবাদের’ প্রত্যাবর্তন ঠেকাতে সবাইকে এক থাকার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা।
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকের সভাপতিত্বে এবং মুখপাত্র ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে চোখ হারানো শ্রমিকনেতা রুবেল হোসেন, অভ্যুত্থানে শহীদ মিরাজ হোসেনের বাবা আবদুর রব, ইমাম হাসান ভূঁইয়ার ভাই রবিউল আওয়াল ভূঁইয়া, শহীদ গোলাম নাফিজের মা নাজমা আক্তারও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র র সদস য জনগণ র এনস প এমন ক
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি মাসেই ২০০ আসনের প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে বিএনপি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে ২০০ আসনে প্রার্থী বাছাই করে তাদের সবুজ সংকেত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এই মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কম-বেশি ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়তো আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব। সেই প্রক্রিয়ায় আছি, আমরা শেষের দিকে। যাতে নির্বাচন মাঠে প্রার্থী হিসেবে তারা কাজ করতে পারে।’
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
অনেকে বলে বেড়াচ্ছেন তারেক রহমানের কল পেয়েছেন, তাঁদের প্রার্থিতা নিশ্চিত...এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিনরাতই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এটি নতুন কিছু নয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নির্বাচনের আগে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা হওয়াই স্বাভাবিক।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে জোট গঠিত হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক ফোরামের এই নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে যোগাযোগ আছে, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। জোটবদ্ধ হব কি না—তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
সরকারের দুজন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে—এমন খবরে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ওই দুই উপদেষ্টার বিষয়ে আমরা সরাসরি কিছু বলিনি। তাঁরা যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের সরকার থেকে সরে আসা উচিত। তবে যদি তাঁরা নির্বাচনে না আসেন এবং কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দেন, তাহলে তাঁদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা সম্ভব।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা সরাসরি কাউকে পদত্যাগ করতে বলিনি। যাঁরা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছেন, তাঁরা যদি কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দেন বা নির্বাচনে অংশ না নেন, তাহলে সেটি তখন বিবেচনা করা যাবে।’
নির্বাচনে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী যদি দলের বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়ান, তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে বিএনপি—এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন,‘ আশা করি কেউ দাঁড়াবে না। আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সিঙ্গেল (একক) প্রার্থী নির্ধারণ করতে পারব। তারপরও যদি কেউ দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, তো শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য যে ব্যবস্থা আমরা নিয়ে থাকি, সাংগঠনিকভাবে তা-ই হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, বিএনপির মনোনয়নে সাবেক ছাত্রনেতা, সাবেক যুবনেতা, বর্তমান ছাত্রনেতা, বর্তমান যুবনেতা, একটা অংশ থাকবে তারুণ্যের প্রতিনিধিত্বকারী অংশ হিসেবে। সেটা তাঁরা আগেও করেছেন। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় যাঁর গ্রহণযোগ্যতা বেশি এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক যাঁর বেশি, নির্ধারিত এলাকায় যাঁর জনসমর্থন বেশি, পরিচিতি বেশি এবং মেধা জ্ঞানগরিমা আছে, সেসব বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করবে বিএনপি।