জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪ সালের ডিগ্রি (পাস) ও সার্টিফিকেট কোর্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা আগামী ১৮ নভেম্বর থেকে নিচের সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. এনামুল করিম স্বাক্ষরিত এ সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা হবে। বিশেষ প্রয়োজনে বোর্ড কর্তৃপক্ষ সময়সূচি পরিবর্তন করতে পারবে।
* পরীক্ষা কোড: ১১০১, প্রতিটি পরীক্ষা আরম্ভের সময়: দুপুর ১টা।
* কোন পরীক্ষা কবে হবে—

আরও পড়ুনসুইডেনে ৭৫০টি ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ, আবেদন স্নাতকোত্তরে, জীবনযাপন খরচ–ভ্রমণ ব্যয়সহ নানা সুযোগ১০ ঘণ্টা আগে

# ১৮ নভেম্বর: স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (১১১৫০১) —আবশ্যিক।
# ১৯ নভেম্বর: বাংলা সাহিত্য (ঐচ্ছিক) (১১১০০১)/ ইংরেজি (ঐচ্ছিক) (১১১১০১)/ আরবি (১১১২০১) / সংস্কৃত (১১১৩০১)/ পালি (১১১৪০১)/ বেসিক হোম ইকোনমিকস (১১৬০০১)/ ড্রামা অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ (১১৫১০১)—প্রথম পত্র।
# ২০ নভেম্বর: রসায়ন (১১২৮০১)/ ভূগোল ও পরিবেশ (১১৩২০১)/ গার্হস্থ্য অর্থনীতি (১১৩৫০১)/ গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান (১১৩৮০১)—প্রথম পত্র।
# ২৩ নভেম্বর: সমাজবিজ্ঞান (১১২০০১)/ সমাজকর্ম (১১২১০১)—প্রথম পত্র।
# ২৪ নভেম্বর: ইতিহাস (১১১৫০৩)/ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (১১১৬০১)/ হিসাববিজ্ঞান (১১২৫০১)/ পদার্থ (১১২৭০১) )—প্রথম পত্র।
# ২৫ নভেম্বর: অর্থনীতি (১১২২০১)/ উদ্ভিদবিজ্ঞান (১১৩০০১)/ অ্যাপ্লাইড হোম ইকোনমিকস (১১৬০০৯) —প্রথম পত্র।
# ২৬ নভেম্বর: ইসলামিক স্টাডিজ (১১১৮০১)/ মার্কেটিং (১১২৩০১)/ ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং (১১২৪০১)/ পরিসংখ্যান (১১৩৬০১)/ রবীন্দ্রসংগীত (১১৪৫০৩)/ নজরুলসংগীত (১১৪৫০৫)/ লোকসংগীত (১১৪৫০৭)/ কম্পিউটার সায়েন্স (১১৫০০১) —প্রথম পত্র।
# ২৭  নভেম্বর: গণিত (১১৩৭০১)/ উচ্চাঙ্গ সংগীত (১১৪৫০১) —প্রথম পত্র।
# ৩০ নভেম্বর: রাষ্ট্রবিজ্ঞান (১১১৯০১)/ ব্যবস্থাপনা (১১২৬০১)/ প্রাণিবিজ্ঞান (১১৩১০১) / জেনারেল সায়েন্স ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন (১১৬০০৫) —প্রথম পত্র।
# ১ ডিসেম্বর: মনোবিজ্ঞান (১১৩৪০১)/ ক্রীড়াবিজ্ঞান (১১৪৬০১)—প্রথম পত্র।
# ২ ডিসেম্বর: দর্শন (১১১৭০১)/ মৃত্তিকা বিজ্ঞান (১১৩৩০১) —প্রথম পত্র।
# ৩ ডিসেম্বর: ইতিহাস (১১১৫০৫)/ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (১১১৬০৩)/ পদার্থ (১১২৭০৩)/ হিসাববিজ্ঞান (১১২৫০৩) —দ্বিতীয় পত্র।
# ৪ ডিসেম্বর: দর্শন (১১১৭০৩)/ মৃত্তিকাবিজ্ঞান (১১৩৩০৩)—দ্বিতীয় পত্র।
# ৭ ডিসেম্বর: অর্থনীতি (১১২২০৩)/ উদ্ভিদবিজ্ঞান (১১৩০০৩)/ অ্যাপ্লাইড হোম ইকোনমিকস (১১৬০১১) —দ্বিতীয় পত্র।
# ৮ ডিসেম্বর: সমাজবিজ্ঞান (১১২০০৩)/ সমাজকর্ম (১১২১০৩)—দ্বিতীয় পত্র।
# ৯ ডিসেম্বর: রাষ্ট্রবিজ্ঞান (১১১৯০৩)/ ব্যবস্থাপনা (১১২৬০৩)/ প্রাণিবিজ্ঞান (১১৩১০৩)/ জেনারেল সায়েন্স ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন (১১৬০০৭) —দ্বিতীয় পত্র।
# ১০ ডিসেম্বর: ইসলামিক স্টাডিজ (১১১৮০৩)/ মার্কেটিং (১১২৩০৩)/ ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং (১১২৪০৩)/ পরিসংখ্যান (১১৩৬০৩)/ রবীন্দ্রসংগীত (১১৪৫০৪)/ নজরুলসংগীত (১১৪৫০৬)/ লোকসংগীত (ব্যবহারিক) (১১৪৫০৮)/ কম্পিউটার সায়েন্স (১১৫০০৩)—দ্বিতীয় পত্র।
# ১১ ডিসেম্বর: রসায়ন (১১২৮০৩)/ ভূগোল ও পরিবেশ (১১৩২০৩)/ গার্হস্থ্য অর্থনীতি (১১৩৫০৩)/ গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান (১১৩৮০৩)—দ্বিতীয় পত্র।
# ৪ জানুয়ারি: মনোবিজ্ঞান (১১৩৪০৩)/ ক্রীড়াবিজ্ঞান (১১৪৬০৩)—দ্বিতীয় পত্র।
# ৫ জানুয়ারি: গণিত (১১৩৭০৩)/ উচ্চাঙ্গ সংগীত (১১৪৫০২) —দ্বিতীয় পত্র।
# ৬ জানুয়ারি: বাংলা সাহিত্য (ঐচ্ছিক) (১১১০০৩)/ ইংরেজি (ঐচ্ছিক) (১১১১০৩)/ আরবি (১১১২০৩)/ সংস্কৃত (১১১৩০৩)/ পালি (১১১৪০৩)/ বেসিক হোম ইকোনমিকস (১১৬০০৩)/ ড্রামা ও মিডিয়া স্টাডিজ (ব্যবহারিক) (১১৫১০২) —দ্বিতীয় পত্র।

আরও পড়ুনকানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে ধস: সরকারি নীতির প্রভাবে বছরে কমল ৪৩ শতাংশ৮ ঘণ্টা আগে

দরকারি তথ্য
১.

কলেজের অধ্যক্ষরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ems.nu.ac.bd থেকে কলেজের ‘পাসওয়ার্ড’ ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীদের ‘প্রবেশপত্র’ ডাউনলোড ও প্রিন্ট করে বিতরণ করবেন। বিতরণের আগে প্রবেশপত্রের অধ্যক্ষের নির্ধারিত স্থানে সংশ্লিষ্ট কলেজ অধ্যক্ষ ‘স্বাক্ষর বা ফ্যাক্সিমিলি’ করবেন। পরীক্ষা শুরুর অন্তত পক্ষে ‘তিন দিন’ আগে প্রবেশপত্র বিতরণের কাজ শেষ করতে হবে।

২. ব্যবহারিক পরীক্ষার স্থান, তারিখ ও সময় পরে জানানো হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষার স্থান, তারিখ ও সময় পরীক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্বে জেনে নেবেন। ব্যবহারিক পরীক্ষার্থীদের ব্যবহারিক বিষয়ের ‘কেন্দ্র ফি’ সংশ্লিষ্ট ব্যবহারিক পরীক্ষা কেন্দ্রে জমা দিতে হবে।

৩. পরীক্ষার হলে হাজিরা গ্রহণের সময় মূল ‘রেজিস্ট্রেশন কার্ড’ ও প্রবেশপত্র দেখাতে হবে।
# বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট

আরও পড়ুন২০২৬ সালে ক্যাডেট কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আবেদন শুরু ১ নভেম্বর২৫ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র ক পর ক ষ পর ক ষ র ড স ম বর সময়স চ র সময় ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি ও শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা

সম্প্রতি বার্ষিক পরীক্ষার সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এক গভীর নৈতিক সংকট সামনে এনেছে। সমাজের যে পেশাজীবী শ্রেণি জ্ঞান, আদর্শ ও নৈতিকতার প্রতীক হিসেবে মর্যাদা পায়, তাদের কাছ থেকে দায়িত্বহীন আচরণ কেবল হতাশাজনকই নয়, বিপজ্জনকও বটে। কারণ, শিক্ষকতা আর দশটা চাকরির মতো নয়; এটি একধরনের নৈতিক প্রতিশ্রুতি, এক সামাজিক চুক্তি।

এ পেশায় শিক্ষক নিজের আচরণের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেন। শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবইয়ের পড়া না শিখিয়ে কীভাবে সদাচরণ করতে হয়, কীভাবে কর্তব্যনিষ্ঠ হতে হয়, তা শেখানোই হচ্ছে শিক্ষকতা পেশার প্রকৃত কাজ। অতএব প্রাথমিকের শিক্ষকদের একাংশের পরীক্ষার মতো সংকটময় সময়ে শিক্ষার্থীদের বেকায়দায় ফেলে নিজেদের দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নিঃসন্দেহে পেশাগত নীতিভ্রষ্টতা।

বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন পেশাজীবীর ক্ষেত্রে যেমন দাবি আদায়ের অজুহাতে হঠাৎ রাস্তায় নামা বিশেষ নিয়মে পরিণত হয়েছে, শিক্ষকদের এ কর্মবিরতিও সেই সামগ্রিক অবক্ষয়েরই আরেকটি দৃষ্টান্ত। ফলে কেবল শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে না, গোটা সমাজেও নৈতিক নেতৃত্বের এক গভীর সংকট তৈরি হয়।

শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষক যে আদর্শ বা আচরণগত দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন, তা কেবল কোনো নৈতিক পরামর্শ নয়, বরং একটি গভীর সামাজিক সত্য, যার ধারাবাহিকতা মানবসভ্যতার ইতিহাসেই দৃশ্যমান। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শিক্ষককে সমাজে নৈতিক দিশারি, আলোক প্রদর্শক এবং মূল্যবোধের বাহক হিসেবে দেখা হয়েছে। এ কারণেই শিক্ষকতা পেশায় ব্যক্তিগত আচরণের প্রশ্ন কেবল ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকে না; তা শিক্ষার্থীর চিন্তা, চরিত্র ও ভবিষ্যৎ নাগরিক পরিচয়কে নির্ধারণ করে।

এ অবস্থায় কোনো শিক্ষক যদি বছর শেষে কোর্স সমাপনী পরীক্ষার মতো সংবেদনশীল মুহূর্তে নিজ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সচেতনভাবে কর্মবিরতিতে গিয়ে রাষ্ট্রকে চাপ দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেন, তবে তা শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন শেখানো দায়িত্ববোধ, সময়ানুবর্তিতা ও নৈতিকতার মৌলনীতিরই সরাসরি পরিপন্থী। কারণ, শিক্ষক নিজেই যদি নৈতিক আচরণের মানদণ্ড অমান্য করেন, তবে শিক্ষার্থীর কাছে নীতি ও দায়িত্বশীলতা কেবল মুখের কথা হয়ে দাঁড়ায়।

দর্শনের ভাষায় বলা যায়, শিক্ষকের ব্যক্তিগত আচরণই শিক্ষার্থীর জন্য প্রথম ও জীবন্ত পাঠশালা। আর এখানেই পেশাজীবী হিসেবে তাঁর সামাজিক দায়িত্ববোধ সর্বাধিক। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের মতে, চরিত্র গঠনের প্রধান উপায় হলো ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুকরণ’। সুতরাং শিক্ষক যদি অনুকরণের যোগ্য নৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ব্যর্থ হন, তবে তা কেবল ব্যক্তিগত বিচ্যুতিই নয়, সমাজের মানুষগুলোর নৈতিক কাঠামোর ভিতকেও দুর্বল করে দেয়।

পরীক্ষার তারিখ পেছানো বা পরীক্ষার অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ওপর তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এই অপ্রত্যাশিত মানসিক চাপ তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আত্মবিশ্বাসকে সরাসরি বিঘ্নিত করে।

মাসের পর মাস অধ্যবসায়ের পর হঠাৎ পরীক্ষার স্থগিতাদেশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হতাশা ও বিভ্রান্তি তৈরি করে, তা শুধু তাৎক্ষণিক সমস্যা নয়; বরং দীর্ঘ মেয়াদে তাদের শিক্ষার ধারাবাহিকতা ও মনোবলকে দুর্বল করে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সময়সূচি, বৃত্তির আবেদন কিংবা পরবর্তী ক্যারিয়ার-পরিকল্পনার প্রতিটি ধাপই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার প্রয়োজন হয়। এই সময়সীমা ভেঙে গেলে একটি সম্পূর্ণ ব্যাচের জীবন-পরিকল্পনা ব্যাহত হয় এবং সেই ক্ষতি অনেক সময় পূরণ করা সম্ভব হয় না।

মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘শিক্ষাগত অনিশ্চয়তা’ উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আত্মবিশ্বাসহীনতা এবং হতাশা বাড়ায়, যা বিভিন্ন গবেষণায় সুপ্রতিষ্ঠিত। যে শিক্ষকেরা এই মানসিক ও ভবিষ্যতের ক্ষতির পরোয়া না করে কেবল নিজেদের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় পরীক্ষার সময় কর্মবিরতিতে যান, তাঁরা প্রকৃত অর্থে জাতিগঠনের দায়িত্ববোধসম্পন্ন শিক্ষকতার নৈতিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নন। বরং তাঁরা শিক্ষার স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করে ভবিষ্যৎ নাগরিক গঠনের পথকেই বিপন্ন করে তোলেন, যার ফলে সমাজের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির ভিত্তি দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইতিহাসের দৃষ্টান্ত অনুসারে, যে সমাজে শিক্ষকেরা নৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেখানে জ্ঞানবুদ্ধি, নিয়ম–শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়েছে; আর যেখানে শিক্ষকেরা দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেখানেই সমাজে শৃঙ্খলা ভেঙেছে, নৈতিক ভিত্তি ক্ষয় হয়েছে এবং মূল্যবোধের অধঃপতন ঘটেছে।

যাঁরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের চেয়ে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন, তাঁদের হাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার মতো মহৎ দায়িত্ব অর্পণ করা রাষ্ট্র ও জাতির জন্য নিঃসন্দেহে আত্মঘাতী। কারণ, রাষ্ট্রের জন্য সুনাগরিক তৈরির প্রধান প্রতিষ্ঠান হলো বিদ্যালয়, আর বিদ্যালয়ের প্রাণশক্তিই শিক্ষক।

ইতিহাসের দৃষ্টান্ত অনুসারে, যে সমাজে শিক্ষকেরা নৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেখানে জ্ঞানবুদ্ধি, নিয়ম–শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়েছে; আর যেখানে শিক্ষকেরা দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেখানেই সমাজে শৃঙ্খলা ভেঙেছে, নৈতিক ভিত্তি ক্ষয় হয়েছে এবং মূল্যবোধের অধঃপতন ঘটেছে।

প্লেটো তাঁর ‘রিপাবলিক’-এ যে আদর্শ রাষ্ট্রের ভাবনা তুলে ধরেছেন, তার কেন্দ্রস্থল ছিল নৈতিক শিক্ষা, আর সেই নৈতিক শিক্ষার মেরুদণ্ড ছিল শিক্ষক-নেতৃত্ব। ফলে একজন শিক্ষক যখন ইচ্ছাকৃত দায়িত্ব বর্জনের উদাহরণ তৈরি করেন, তখন তিনি কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিক্ষার পরিবেশকে দূষিত করেন না, বরং জাতির সামগ্রিক নৈতিক কাঠামোকে দীর্ঘ মেয়াদে দুর্বল করে দেন। সমাজতত্ত্বের একটি মৌলিক শিক্ষা হলো, বর্তমান প্রজন্মে যে মূল্যবোধ রোপিত হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মে তার প্রতিফলন দেখা দেয়। তাই শিক্ষকের দায়িত্বহীন আচরণ ভবিষ্যৎ নাগরিক সৃষ্টির ভিতকে দুর্বল করে, যার পরিণতি রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি ও মানবিক উন্নয়ন—উভয় ক্ষেত্রেই গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আমাদের শিক্ষকসমাজকে সর্বাগ্রে মনে রাখতে হবে, ‘আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শিখাও’—এটি কেবল একটি প্রবাদ নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রায়োগিক শিক্ষাধারায় নৈতিক শিক্ষারও মৌলনীতি এবং শিক্ষকতার সামগ্রিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু। সমাজ যাঁদের নৈতিকতার জীবন্ত প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে, তাঁদের কাছ থেকে প্রত্যাশাও থাকে অধিক সংযম, অধিক দায়িত্ববোধ এবং অধিক মানবিকতার।

আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের সাধারণ মানুষকে অসহায় অবস্থায় ফেলে কোনো দাবি আদায় কখনো ন্যায়সংগত হতে পারে না; এটি ন্যায়, নীতি, আইনকানুন ও মানবিকতার মৌলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শিক্ষক যদি নিজেই ন্যায় ও মানবিকতার অবস্থান ত্যাগ করতে শুরু করেন, তাহলে জাতির নৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে, যে সমাজে শিক্ষকের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে, সেখানে শৃঙ্খলা, মূল্যবোধ ও মানবিকতার ভিত্তিও ক্রমে দুর্বল হতে হতে একসময় ভেঙে পড়েছে। তাই শিক্ষকতা পেশায় মহৎ দায়িত্ব পালনে সততা, সংবেদনশীলতা ও পেশাগত নীতিনৈতিকতা রক্ষা শুধু একটি পেশাগত বাধ্যবাধকতা নয়, বরং এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে নৈতিকতা ও মানবিকতার আলো পৌঁছে দেওয়ার জাতীয় প্রতিশ্রুতি।

ড. মাহরুফ চৌধুরী ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য। ই-মেইল: [email protected]

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেট্রোরেল নির্ধারিত সময় অনুযায়ী চলবে
  • নির্বাচনের তফসিলে ভোটের তারিখ ছাড়াও যা যা থাকে
  • বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ রেখে কর্মবিরতি ও শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা