সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটক ড্যাফোডিলের ১১ শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর
Published: 27th, October 2025 GMT
সংঘর্ষের জের ধরে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটকে রাখা হয়েছিল ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১১ শিক্ষার্থীকে। সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটার দিকে তাদেরকে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়ার।
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর বলেছেন, আমরা তো তাদেরকে আটকে রাখিনি। তারা এখানে ঘুরে-ফিরেই বেড়াচ্ছিল। তারা অনেকটা আটকা পড়ে গিয়েছিল, যেহেতু রাতের বেলা ছিল তো। আমরা মূলত তাদের সেফ করার চেষ্টা করেছি। কেউ যেন তাদেরকে আঘাত করতে না পারে, এজন্য একটা নিরাপত্তার মধ্যে আমরা রেখেছিলাম।
শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ছাত্রদের ছেড়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো—তাদেরকে পিটিয়ে আধমরা করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, মূলত, ইউজিসি তাদেরকে মুক্ত করেছে। ইউজিসির প্রতিনিধিদলের কাছে শিক্ষার্থীদের হস্তান্তর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম, শিক্ষকরাও ছিল। এখন ওই শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের এখন আমরা হাসপাতালে পাঠাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। তাদেরকে ব্যাপক মারধর করা হয়েছে।
ঢাকা/সাব্বির/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন ভ র স ট ত দ রক
এছাড়াও পড়ুন:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দুর্দশা লাঘবের উপায় কী
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের এবারের আন্দোলন সংবাদমাধ্যমে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। সবাই অন্তত এটা বুঝতে পেরেছেন, তাঁদের প্রাপ্ত বেতন-ভাতা খুবই কম এবং তা দিয়ে সংসার চালানো দুরূহ প্রায়। আন্দোলন করে তাঁরা যা পেতে চেয়েছেন, সেটিও আসলে জীবনমান পরিবর্তনের বিবেচনায় কিছুই নয়। দেশের শিক্ষকদের প্রধান অংশ কতটা অবহেলিত, এই আন্দোলনের ফলে সেটি নতুন করে আবার বোঝা গেল।
আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা তিন দফা দাবি নিয়ে ঢাকায় জমায়েত হয়েছিলেন। তাঁদের প্রথম দাবি ছিল বাড়িভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ করতে হবে এবং সেটি যেন কমপক্ষে তিন হাজার টাকা হয়। দ্বিতীয় দাবি ছিল চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করার। আর তৃতীয় দাবি উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ করার। অতি যৌক্তিক তিনটি দাবিতে তাঁরা ১২ অক্টেবর থেকে আন্দোলন শুরু করেন।
আন্দোলনের দশম দিনে এসে সরকার মূল বেতনের ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করে। সেই প্রস্তাব আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা মেনে নেন। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে জানানো হয়, এই বাড়িভাড়া কার্যকর হবে দুই ধাপে। ১ নভেম্বর থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে এবং আগামী বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে কার্যকর হবে। তবে মূল বেতন কম থাকলেও কারও বাড়িভাড়া দুই হাজার টাকার কম হবে না।
অনিয়ম কমিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে কিছু অংশ শিক্ষকদের দেওয়া যায় কি না, ভাবা যেতে পারে। তা ছাড়া সামগ্রিক শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমাতে পারলে বেতন-ভাড়া বাড়াতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর প্রকৃত হারে যদি বাড়িভাড়া দেওয়া না-ই যায়, তবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন শিক্ষককে তাঁর উপজেলার নিকটবর্তী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত করা যায়।সারা দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন প্রায় ৪ লাখ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন আরও প্রায় ২ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। তাঁদের বেতন–ভাতা কত ভাগ বাড়াতে বাড়তি কত অর্থ ব্যয় হবে, সেটি অর্থ মন্ত্রণালয় হিসাব কষে দেখিয়েছে। কিন্তু তারা এই হিসাব করে দেখায়নি, এই বেতন দিয়ে একজন শিক্ষক কীভাবে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করবেন।
শিক্ষার হালহকিকত ভালো নেই—এমনটি আমরা সব সময় বলে আসছি। কিন্তু যাঁদের হাতে শিক্ষার প্রকৃত সফলতা নির্ভর করে, সেই শিক্ষকদের মানবেতর জীবনে বাধ্য করে আমরা কীভাবে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আশা করতে পারি। বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সবকিছু আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, সেটি আমরা মানি। কিন্তু কিছু কিছু উদ্যোগ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দুর্দশা খানিক কমাতে পারে।
আরও পড়ুনএমপিও শিক্ষকদের সঙ্গে বেতন-ভাতা নিয়ে আর কত ‘তামাশা’ ১১ অক্টোবর ২০২৫শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যেকোনো বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। মোট বাজেটের যেটুকু অংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকে, তা–ও আবার ঠিকমতো বণ্টন করা হয় না। উচ্চশিক্ষা স্তরে গবেষণা খাতে এমন কিছু বড় বরাদ্দ আছে, যেসব গবেষণা প্রায় ক্ষেত্রেই অর্থের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। আবার সংস্কার ও উন্নয়নের নামে যেসব বরাদ্দ থাকে, সেগুলোর সামান্য অংশই প্রকৃত কাজে খরচ হয়, সিংহভাগই লুটপাট হয়। এসব দিকে নজর দিতে না পারলে শিক্ষায় মোট বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ হবে না।
সবার আগে দরকার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলার মধ্যে আনা। দেশে প্রচুর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো কখনো এমপিওভুক্ত কিংবা সরকারি হতে চায় না। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় অবিশ্বাস্যভাবে বেশি এবং তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাবের জন্যও কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। এমনকি সরকারের যেকোনো ধরনের অডিট বা আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষাকে তারা নিজেদের কৌশলে ‘বৈধ’ করে নিতে পারে।
সমস্যা হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও অনিয়ম থেকে মুক্ত নয়। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্র থেকেই অর্থকড়ির ভাগ–বাঁটোয়ারা শুরু হয়। স্কুল-কলেজের গভর্নিং বডি বিভিন্ন ফান্ডের টাকা কীভাবে কোন খাতে খরচ করে, তার খবর রাখার সুযোগ কারও নেই। এখানেও অডিট ফাঁকি দেওয়ার কৌশল রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়নকাজে কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যা খরচ হয়, বাস্তবে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি খরচ দেখানো হয়। তা ছাড়া এক ফান্ডের টাকা আরেক ফান্ডে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপার তো আছেই।
আরও পড়ুনমাধ্যমিক শিক্ষার প্রতি এত অবহেলা কেন২৩ অক্টোবর ২০২৫বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি রাজনৈতিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি হলে সমস্যা আরও বাড়ে। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কাজ, এমনকি একাডেমিক কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। বর্তমান সরকার সভাপতি পদে নবম গ্রেড বা তদূর্ধ্ব গ্রেডভুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের রাখার বিধান করেছে। এটি এই ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হাইকোর্ট সেটা রুল আকারে স্থগিত করেছেন।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে এখন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এটি একটি ভালো পদক্ষেপ। তবে এর মধ্যেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন বর্তমান প্রক্রিয়ায় শিক্ষকদের বদলির ব্যাপারটি সহজ নয়। আরও অবাক করা ব্যাপার হলো, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষককে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পোস্টিং দেওয়া হবে বা যুক্ত করা হবে, তার কোনো নীতিমালা নেই। ফলে বাড়ি বগুড়া হলেও নিয়োগ পাওয়ার পর তাঁকে হয়তো পিরোজপুরে পোস্টিং দেওয়া হয়। এর ফলে বাড়িভাড়া বাবদ বিপুল অঙ্কের টাকা তাঁকে গুনতে হয়।
অনিয়ম কমিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফান্ড থেকে কিছু অংশ শিক্ষকদের দেওয়া যায় কি না, ভাবা যেতে পারে। তা ছাড়া সামগ্রিক শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমাতে পারলে বেতন-ভাড়া বাড়াতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর প্রকৃত হারে যদি বাড়িভাড়া দেওয়া না-ই যায়, তবে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন শিক্ষককে তাঁর উপজেলার নিকটবর্তী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যুক্ত করা যায়।
তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক