পুঁজিবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক টাকার নিচে লেনদেন হওয়া শেয়ারের জন্য নতুন টিক সাইজ (শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন) নির্ধারণ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। নতুন এই নিয়মে ১ টাকার নিচে মূল্যের শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য পরিবর্তন বা টিক সাইজ নির্ধারণ করা হয়েছে ০.০১ টাকা। বুধবার (২৯ অক্টোবর) থেকে তা কার্যকর হবে।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আরো পড়ুন:

ভুটানের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধিদের ডিএসই পরিদর্শন

৯ সদস্যের নতুন শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল গঠন

বর্তমানে সব ধরনের ইক্যুইটি সিকিউরিটিজের টিক সাইজ ০.

১০ টাকা নির্ধারিত আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কোম্পানির শেয়ারের দাম ১ টাকার নিচে নেমে আসায় বিদ্যমান নিয়ম বাজার বাস্তবতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় লেনদেন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ডিএসই নতুন এই নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ডিএসই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে কয়েকটি ছোট ও মাঝারি কোম্পানির শেয়ারের দাম ১ টাকার কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে এবং ইতোমধ্যেই দুটি কোম্পানির দাম ১ টাকার নিচে নেমে গেছে। পুরোনো ০.১০ টাকা টিক সাইজের কারণে এই শেয়ারগুলো সার্কিট ব্রেকারের সীমায় আটকে পড়েছিল, ফলে লেনদেন কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোনো শেয়ারের দাম ১ টাকা থেকে ০.৯০ টাকায় নেমে আসে, সেটি ১০ শতাংশ দরপতন বোঝায়। কিন্তু শেয়ারদর যদি ০.৯০ টাকায় নেমে যায়, তাহলে ০.০৯ টাকা কমে অর্ডার দিতে পারছিলেন না, যার ফলে বাজারে দামের স্বাভাবিক সমন্বয় ও লেনদেন প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ছিল। এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অটোমেটেড ট্রেডিং রেগুলেশনস, ১৯৯৯ এর ১৮ নম্বর প্রবিধানের অধীনে ডিএসই এই নতুন নিয়ম কার্যকর করছে। নতুন ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীরা এখন ৮৭, ৮৮ বা ৮৯ পয়সার মতো নির্দিষ্ট দামে অর্ডার দিতে পারবেন।

এতে ক্রয়-বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান (বিড-আস্ক স্প্রেড) কমবে, বাজারের তারল্য বাড়বে ও লেনদেন ব্যয়ও কমে আসবে।

ডিএসই জানিয়েছে, এই পরিবর্তনের ফলে দামের সুক্ষ্ম পরিবর্তন সম্ভব হবে, মূল্য নির্ধারণ আরো বাজারবান্ধব হবে এবং আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাজার কাঠামো সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।

সম্প্রতি পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফএসএল) এবং ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার ০.৯০ টাকায় লেনদেন হয়ে বাজারে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

ডিএসই এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১০৪টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার তাদের অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে, যার মধ্যে ৫৫টির দাম ৫ টাকারও নিচে।

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন টিক সাইজের এই উদ্যোগ লেনদেনের স্থবিরতা ভাঙবে এবং বিনিয়োগকারীদের আবার সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দেবে। তবে তারা বলছেন, এই নতুন নিয়ম কার্যকর করতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে তাদের ট্রেডিং সফটওয়্যার ও সিস্টেম আপডেট করতে হবে।

এ বিষয়ে ডিএসই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন সাংবাদিকদের জানান, ১ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া শেয়ারের নতুন টিক সাইজ সম্পর্কে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অবহিত করা হয়েছে। ডিএসইর ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। কারণ আগে কখনো কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম ১ টাকার নিচে নামেনি। এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে ১টাকার নিচে টিক সাইজ পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ট ক স ইজ ক র যকর ল নদ ন ড এসই

এছাড়াও পড়ুন:

পিকাসোর আড়ালে থেকে যাওয়া চিত্রকর্ম বিক্রি হলো ৪৫৫ কোটি টাকায়

আট দশক ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা পাবলো পিকাসোর একটি চিত্রকর্ম ৩ কোটি ২০ লাখ ইউরোতে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৪৫৫ কোটি টাকার বেশি (১ ইউরো সমান ১৪২ টাকা হিসেবে)।

এটি বিশ্ববরেণ্য স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী পিকাসোর দীর্ঘদিনের অনুপ্রেরণা ও সঙ্গী ডোরা মারকে নিয়ে আঁকা এক রঙিন প্রতিকৃতি।

চিত্রকর্মটি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। তবে এটি নিলামে বিক্রি হওয়া পিকাসোর সবচেয়ে দামি শিল্পকর্ম নয়।

‘বাস্ট অব আ উইমেন উইথ আ ফ্লাওয়ারড হ্যাট (ডোরা মার)’ ছবিটি আঁকা হয় ১৯৪৩ সালের জুলাই মাসে।

ডোরা মার নিজেও একজন শিল্পী ও আলোকচিত্রী ছিলেন। তিনি প্রায় সাত বছর ধরে পিকাসোর সঙ্গী ও অনুপ্রেরণা ছিলেন। পিকাসো যখন ছবিটি আঁকেন, তখন তাঁদের সম্পর্ক একটি বেদনাদায়ক পরিসমাপ্তির পথে যাচ্ছিল।

পিকাসোর সঙ্গে ডোরা মারের যখন পরিচয় হয়, তখন তাঁর বয়স ২৯ বছর। দ্রুতই এই তরুণী শিল্পীর প্রেমে পড়েন এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

শিল্পকর্মটি ১৯৪৪ সালে বিক্রি হয়। এরপর এটিকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। চিত্রকর্মটি এত দিন একটি পারিবারিক সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত ছিল। চিত্রকর্মটি পিকাসোর ‘উইমেন ইন আ হ্যাট’ সিরিজের অংশ।

প্যারিসের একটি নিলাম হাউসে ছবিটি বিক্রি হয়। নিলামকক্ষে উপস্থিত এক ব্যক্তি সেটি কিনে নেন। চিত্রকর্মটি বিক্রির পর নিলামকারী ক্রিস্টোফ লুসিয়ঁ বলেন, ‘এটি একটি অসাধারণ সাফল্য।’

তাঁদের গল্প খুব সাধারণ ছিল না। আপনি চিত্রকর্মটির দিকে তাকালে তাঁর চোখে পানি দেখতে পাবেন। কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পিকাসো তাঁকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

এ বছর এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া কোনো শিল্পকর্ম হচ্ছে এটি। লুসিয়ঁ চিত্রকর্মটিকে ‘ভালোবাসার গল্পের ছোট্ট একটি টুকরো’ বলে বর্ণনা করেন।

পিকাসোর সঙ্গে ডোরা মারের যখন পরিচয় হয়, তখন তাঁর বয়স ২৯ বছর। দ্রুতই এই তরুণী শিল্পীর প্রেমে পড়েন এবং তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

পরে আরেক তরুণী ফ্রাঁসোয়া জিলোর জন্য ডোরা মারকে ছেড়ে যান পিকাসো। পিকাসো ছেড়ে যাওয়ার পর ডোরা অন্তরালের জীবন বেছে নেন। তিনি ৮৯ বছর বয়সে মারা যান।

এটি এ বছর এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া কোনো শিল্পকর্ম।

লুসিয়ঁ বলেন, ‘তাঁদের গল্প খুব সাধারণ ছিল না। আপনি চিত্রকর্মটির দিকে তাকালে তাঁর চোখে পানি দেখতে পাবেন। কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, পিকাসো তাঁকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।’

নিলাম শুরুর আগে নিলামকারী লুসিয়ঁ বলেছিলেন, বিশ্বজুড়ে এই চিত্রকর্ম নিয়ে বিপুল আগ্রহ আছে।

আরও পড়ুনপিকাসোর চিত্রকর্ম ১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকায় বিক্রি০৯ নভেম্বর ২০২৩

নিলামে বিক্রি হওয়া পিকাসোর সবচেয়ে দামি চিত্রকর্মটি হলো ‘লেস ফেমিস ডি’আলজার’ (উইমেন অব আলজিয়ার্স)। ২০১৫ সালে নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিস্টি ১৭ কোটি ৯৩ লাখ ডলারে ওই চিত্রকর্ম বিক্রি করেছিল।

১৯৩২ সালে পিকাসোর আঁকা ‘উইমেন উইথ আ ওয়াচ’ চিত্রকর্মটি ২০২৩ সালে নিলামে ১৩ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারে (১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা) বিক্রি হয়েছিল। এটি পিকাসোর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হওয়া কোনো চিত্রকর্ম বলে জানিয়েছিল ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সদবি’স।

পিকাসো ১৮৮১ সালে স্পেনের মালাগায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বড় হয়েছেন বার্সেলোনায়। পরে পিকাসো ১৯০৪ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যান। সেখানেই তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন।

আরও পড়ুনপিকাসোকে ছেড়ে গিয়েছিলেন যে প্রেমিকা ০৯ জুন ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ