‘রেফারিকে আমরা কখনো গোল দিতে দেখিনি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে...’
Published: 29th, October 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে জুলাই সনদের পূর্ণ প্রতিফলন নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, কমিশনের দেওয়া ৯৪ পৃষ্ঠার দলিলে (সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ) তার হুবহু প্রতিফলন নেই।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। বৈঠকের শিরোনাম—‘ফ্রম রুল বাই পাওয়ার টু রুল অব ল: ট্রানজিশন টু অ্যা ডেমোক্রেটিক বাংলাদেশ’।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে সুপারিশ দেওয়া করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা কিছু সত্য আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এত দিন তাঁরা মনে করতেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু তারা যে সুপারিশ দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, তার মধ্য বস্তুতে একজন দস্তখতকারী প্রধান উপদেষ্টাও আছেন, যিনি কমিশনের সভাপতি। ফলে এটি সরকারের পক্ষ থেকেও একধরনের অনুমোদন বা সমর্থন।
সুপারিশে কিছু দলের প্রস্তাব ও ঐকমত্য কমিশনের চিন্তা-ভাবনা জাতির ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করেছেন বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘রেফারিকে আমরা কখনো গোল দিতে দেখিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ঐকমত্য কমিশন, সরকার এবং আরও দু-তিনটি রাজনৈতিক দল একই পক্ষ। আমি বিপক্ষেই খেলছিলাম মনে হয়। সেই হিসেবে জাতির পক্ষের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি।’
‘জুলাই সনদের হুবহু প্রতিফলন নেই’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, যে দলিলটি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি ৯৪ পৃষ্ঠার। সেখানে ঐকমত্য কমিশনে যেভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছিল, কিংবা যে দলিলটি ১৭ অক্টোবর সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেই দলিলটি এখানে হুবহু নেই। শুধু আছে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব, রাজনৈতিক দলগুলোর সুপারিশ। কিন্তু কীভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো হলো, নোট অব ডিসেন্ট কোথায় আছে, তার কোনো উল্লেখ নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি দফা প্রস্তাব তফসিল আকারে সংযুক্ত করে বলা হয়েছে, এই দফাগুলোর ওপর গণভোট হবে। অথচ এই বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
‘অনৈক্য সৃষ্টি করবে’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু তারা এখন এমন কিছু প্রস্তাব দিয়েছে, যা জাতিকে বিভক্ত করবে, অনৈক্য সৃষ্টি করবে। এর ভিত্তিতে কোনো ঐকমত্য হবে না। তারা কী অর্জন করতে চায়, আমরা জানি না।’
নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বা আরপিওতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, আরপিওতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে জোটভুক্ত কোনো রাজনৈতিক দল চাইলে নিজস্ব প্রতীক বা জোটের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারত। এখন অগণতান্ত্রিকভাবে বলা হয়েছে, জোটভুক্ত হলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। আরেকটি রাজনৈতিক দল তাতে সমর্থন জানিয়েছে।
‘অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা চাই, অন্তর্বর্তী সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় নিরপেক্ষভাবে আচরণ করুক। যাতে জাতি আশ্বস্ত হতে পারে এবং ঐক্য বজায় থাকে। কিন্তু ঐকমত্য কমিশন ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ আমাদের হতাশ করেছে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এবং সরকারের কিছু পদক্ষেপে আমরা আজ গভীর হতাশা প্রকাশ করছি। এগুলোর মাধ্যমে জাতিতে ঐক্যের বদলে বিভাজন তৈরি হচ্ছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ ব ব এনপ র স থ য় প রস ত ব সরক র র কম ট র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন ঘিরে সক্রিয় হবে অনেক পরাশক্তি, নানা এজেন্সি: গোলাম পরওয়ার
জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন পরাশক্তি ও নানা এজেন্সি সক্রিয় হয়ে উঠবে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক করেছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
আজ রোববার গণ অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গোলাম পরওয়ার এ সতর্কবার্তা দিয়ে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বিএনপিসহ ডজনখানেক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করে গোলাম পরওয়ার বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে দেশের ভেতরে অনেক পরাশক্তি এবং নানা এজেন্সি (সংস্থা) সক্রিয় হবে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ, একটি মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অনেক বাধা আসবে। সে জন্য রাজনৈতিক মত-পথের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও দেশ গঠনের মূল ইস্যুতে দলগুলো যেন ঐক্য ধরে রাখতে পারে।
আশঙ্কা থাকলেও তা না ঘটার আশা প্রকাশ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে প্রকৃত মতামতের প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে যেন সরকার গঠিত হয়, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো ভিন্নমত নেই। অনেক জাতীয় ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে যেহেতু ঐকমত্য আছে, দেশ গঠনে পরাশক্তি ও অভ্যন্তরীণ শক্তি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে আশা করা যায়।
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। সেই নির্বাচনের অভিযাত্রা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্যও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
এ অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালালুদ্দীন আহমদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান হামিদী, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ্ কায়সার, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য আকবর খান, এনডিপির চেয়ারম্যান আবু তাহের বক্তব্য দেন। এতে সভাপতিত্ব করেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, সঞ্চালনা করেন দলটির মুখপাত্র ফারুক হাসান।