নিউইয়র্কের ইহুদি ভোটারদের মন জয় করতে কী কৌশল নিচ্ছেন জোহরান মামদানি
Published: 30th, October 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে গত মাসে প্রগতিশীল ইহুদি উপাসনালয় সিনাগগ কোলট চায়েনুতে প্রার্থনা সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক দলীয় মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি। ইহুদিদের নববর্ষ রোশ হাসানাহ উপলক্ষে এ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় ব্যাপক করতালি ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় জোহরানকে স্বাগত জানান ইহুদিরা। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ইহুদি জনবসতিপূর্ণ এই শহরে তাঁর জন্য এটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ এক রাজনৈতিক মুহূর্ত।
ওই প্রার্থনা সভা ছাড়াও সম্প্রতি বিভিন্ন সিনাগগে এবং ইহুদিদের মহা পবিত্র দিনগুলোর উৎসবে অংশ নিয়েছেন জোহরান। এটি স্পষ্টভাবে তাঁর রাজনৈতিক কৌশলেরই অংশ।
আগামী ৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগেই জোহরান এমন এক সূক্ষ্ম ভারসাম্যের পথে হাঁটছেন, যেখানে একদিকে রয়েছে তাঁর দীর্ঘদিনের ইসরায়েলবিরোধী ও ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান, অন্যদিকে তিনি বিশাল ইহুদি জনগোষ্ঠীর সমর্থন আদায়েও কাজ করে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বোডোইন কলেজে পড়ার সময় জোহরান সেখানে ‘স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন’ নামের একটি সংগঠনের শাখা চালু করেছিলেন। এর প্রায় এক দশক পর তিনি পরিচিতি পেতে শুরু করেন। দীর্ঘদিনের নির্ভীক ও প্রকাশ্য ফিলিস্তিনিপন্থী অবস্থান তাঁর রাজনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে তা বিরোধীদের কাছে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুও হয়ে দাঁড়ায়।
জোহরানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে একাধিক প্রগতিশীল ইহুদি সংগঠন। যেমন বেন্ড দ্য আর্ক, জিউইশ ভয়েস ফর পিস (জেভিপি) অ্যাকশন এবং জিউস ফর রেসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস (জেএফআরইজে)। এসব সংগঠন প্রকাশ্যে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের ভূমিকার সমালোচনা করেছে এবং জোহরানের প্রচারে মাঠে নেমেছে।
আগামী ৪ নভেম্বর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগেই জোহরান এমন এক সূক্ষ্ম ভারসাম্যের পথে হাঁটছেন, যেখানে একদিকে রয়েছে তাঁর দীর্ঘদিনের ইসরায়েলবিরোধী ও ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান, অন্যদিকে তিনি বিশাল ইহুদি জনগোষ্ঠীর সমর্থন আদায়েও কাজ করে যাচ্ছেন।অন্যদিকে, বর্জন, বিনিয়োগ প্রত্যাহার ও নিষেধাজ্ঞা (বিডিএস) আন্দোলনে প্রকাশ্য সমর্থন এবং ইসরায়েলকে ইহুদি রাষ্ট্র বলতে অস্বীকৃতি জানানোয় উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক কর্মী, কংগ্রেসের ইহুদি ডেমোক্র্যাট ও জায়নবাদী অধিকারগোষ্ঠীগুলোর সমালোচনার মুখে পড়ছেন এই মেয়র প্রার্থী।
জোহরানকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও জরিপে দেখা যাচ্ছে, নিউইয়র্কে বসবাসরত ইহুদি ভোটারদের মধ্যে জোহরান মামদানিই সবচেয়ে এগিয়ে আছেন।
গত জুলাইয়ে জেনিথ রিসার্চ পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, জোহরান ইহুদি ভোটারদের মধ্যে ১৭ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। এমনকি বিভিন্ন ইহুদি উপগোষ্ঠীর মধ্যেও এগিয়ে আছেন তিনি।
গবেষক অ্যাডাম কার্লসন বলেন, ‘ইহুদি সমাজের মধ্যে ধর্ম, বয়স, রাজনীতিসহ নানা বিভাজন রয়েছে। আমাদের জরিপে দেখা গেছে, নিউইয়র্কের ইহুদি ভোটারদের একটি বড় অংশের মধ্যে জোহরানের প্রতি সমর্থন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।’
জোহরানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে একাধিক প্রগতিশীল ইহুদি সংগঠন। যেমন বেন্ড দ্য আর্ক, জিউইশ ভয়েস ফর পিস (জেভিপি) অ্যাকশন এবং জিউস ফর রেসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস (জেএফআরইজে)। এসব সংগঠন প্রকাশ্যে গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের ভূমিকার সমালোচনা করেছে এবং জোহরানের প্রচারে মাঠে নেমেছে।জিউইশ ভয়েস ফর পিস (জেভিপি) অ্যাকশনের রাজনৈতিক পরিচালক এবং সিনাগগ কোলট চায়েনুর সদস্য বেথ মিলার বলেন, রোশ হাসানাহর প্রার্থনা সভায় জোহরান উপস্থিত হওয়ায় মানুষ এত খুশি হয়েছিলেন যে তাঁরা প্রার্থনা শেষে তাঁকে ঘিরে ভিড় করেন। সেলিব্রিটি হওয়ার কারণে নয়, বরং তাঁরা উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন এই ভেবে যে তিনি মেয়র হলে হয়তো সবাই মিলে নতুন কিছু গড়ে তোলা যাবে।
নিউইয়র্কে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন জোহরান মামদানি। পাশে মা মিরা নায়ার (বাঁয়ে), বাবা মাহমুদ মামদানি ও স্ত্রী রমা দুওয়াজি। যুক্তরাষ্ট্র, ২৫ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ন উইয়র ক র প রক শ য র জন ত ক ইসর য় ল স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
বামপন্থীদের সমর্থন পেলেন জোহরান মামদানি
নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানিকে গত রোববার ভোটারদের এক সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী বামপন্থী নেতারা সমর্থন জানিয়েছেন। ডেমোক্রেটিক সমাজতন্ত্রী ও ডোনাল্ড ট্রাম্পবিরোধী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত জোহরান মামদানি এখন নিউইয়র্ক শহরের সর্বোচ্চ পদে পৌঁছানোর দোরগোড়ায়।
রোববার কুইন্সের একটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেস সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ মামদানিকে সমর্থন দেন। মামদানি একসময় ছিলেন একেবারে প্রান্তিক প্রার্থী কিন্তু এখন মেয়র পদের প্রতিযোগিতার শীর্ষে উঠে এসেছেন এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির বামপন্থী ধারার অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন।
নিউইয়র্কে মেয়র পদে আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পরদিন কুইন্সের এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো। ৮৫ লাখ জনসংখ্যার শহরটিতে মূল ভোট হবে ৪ নভেম্বর। নতুন মেয়র দায়িত্ব নেবেন আগামী বছরের শুরুতে।
ওকাসিও-কর্টেজ বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জোরালো বার্তা দেব যে তাঁর কর্তৃত্ববাদ এখানে চলবে না।’ তাঁর বক্তব্যে সমর্থকেরা ‘এওসি, এওসি’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠেন।
ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ‘মঙ্গলবার এখানে কী ঘটতে যাচ্ছে, সারা বিশ্বের মানুষ তা নজরে রাখছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা কোনো স্বাভাবিক সময় নয়। এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন আমাদের একজন প্রেসিডেন্ট আছেন, যিনি শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীদের এক ট্রিলিয়ন ডলারের করছাড় দিয়েছেন।’
বার্নি স্যান্ডার্স আরও বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নির্বাচনের দিকেও গভীরভাবে নজর রাখছেন।
আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজকে নিয়ে মামদানি বলেন, তিনি সাধারণ পরিশ্রমী মানুষের পক্ষে আছেন।
বার্নি স্যান্ডার্সকে নিয়ে মামদানি বলেন, ‘সিনেটর (স্যান্ডার্স) দীর্ঘ সময় একা দাঁড়িয়ে সাহস দেখিয়েছেন। আমি আজ ডেমোক্রেটিক সমাজতন্ত্রের ভাষায় কথা বলতে পারছি, কারণ তিনিই প্রথম সেই ভাষায় কথা বলেছিলেন।’
ভিক্টরি ইনসাইটসের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, মামদানি পক্ষে ৪৭ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে। এর পরের অবস্থানে রয়েছেন সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়া কুমোর সমর্থন ২৯ শতাংশ। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া ১৬ শতাংশ সমর্থন নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন।