রাঙামাটিতে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল শুরু, যান চলাচল বন্ধ
Published: 20th, November 2025 GMT
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় কোটাবৈষম্য ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে হরতাল পালন করছে তিনটি সংগঠন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৩৬ ঘণ্টার এ হরতাল শুরু হয়। আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন সংগঠন তিনটির নেতারা।
এর আগে গতকাল বেলা তিনটায় কোটাবিরোধী ঐক্যজোট, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিকবৃন্দ নামের তিনটি সংগঠন এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। তিনটিই পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের সংগঠন। আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে এ কর্মসূচি ডাকা হয়েছে। হরতাল সমর্থনকারীরা এ পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ পরীক্ষায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা বাতিলের দাবি করছেন।
আজ সকাল সাড়ে আটটায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরের কলেজগেট,ভেদভেদি, তবলছড়ি, দোয়েল চত্বর, বনরূপা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষিপ্তভাবে পিকেটিং করছে হরতাল সমর্থনকারীরা। শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে শুরু করে দূরপাল্লার গাড়ি ও নদীপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এসব যান চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন অফিস–আদালতে কাজে যাওয়া মানুষ ও সাধারণ পথচারীরা।
হরতাল সমর্থনকারীদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, জরুরি সেবা যেমন হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও ওষুধের দোকান তাঁদের কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে। রাঙামাটি দোয়েল চত্বরে পিকেটিং করা শিক্ষার্থী রিয়াজুল দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা হরতালের আওতার বাইরে থাকবে।’
সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধের চেষ্টা করছেন হরতাল সমর্থনকারীরা। এ সময় বিভিন্ন গাড়ির চালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ সকালে রাঙামাটি শহরের বনরূপা এলাকায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশাসনের আশ্বাসে মাদারগঞ্জে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার
জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি প্রশাসনের আশ্বাসে প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার রাতে স্থানীয় প্রশাসন ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলোচনার পর সাত দিনের জন্য এ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে টানা সাত দিন ধরে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, থানায় স্থানীয় প্রশাসন, বড় দুটি সমিতির মালিকপক্ষের লোকজন ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় আগামী সাত দিনের মধ্যে বড় বড় সমিতির মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে টাকা ফেরতের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন। পরে সাত দিনের জন্য কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলোচনায় বসার আহ্বান জানান। আমরাও তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। আলোচনায় টাকা উদ্ধারে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রশাসন আমাদের জানিয়েছে, আগামী সাত দিনের মধ্যে বড় বড় সমিতি থেকে টাকা উদ্ধারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তাঁদের কথায় আমরাও আশ্বস্ত হই। তবে আগামী সাত দিনের মধ্যে টাকা উদ্ধারে কোনো অগ্রগতি দেখাতে না পারলে, আবারও ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ বলেন, ‘আলোচনায় টাকা উদ্ধারের কিছু অগ্রগতি আন্দোলনকারীদের দেখানো হয়েছে। এতে তাঁরা সন্তুষ্ট। ইতিমধ্যে বড় দুটি সমিতির মালিকপক্ষ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং দুটি সমিতির কেনা অনেক জমির দলিল দিয়েছেন। ওইসব জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের মধ্যে টাকা দেওয়া হবে। চেষ্টা করব, সাত দিনের মধ্যে যাতে টাকা উদ্ধারে আরও অগ্রগতি বাড়ে।’
১১ নভেম্বর থেকে ‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’র ব্যানারে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হচ্ছিল। এতে ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নেন। এক বছর ধরে এই ব্যানারে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, মশালমিছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও একাধিকবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু কোনো গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।
জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোয় ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরে কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।