চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে প্রাইভেট কার ছিটকে পড়ে একজনের মৃত্যু
Published: 20th, November 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি (প্রাইভেট কার) ছিটকে নিচে পড়ে গেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নগরের নিমতলা এলাকায় বন্দর থানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার উপপরিদর্শক মো. মাসুদ। তিনি বলেন, হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ছিটকে সড়কে পড়ে যায়। এতে একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিটি সাইকেল আরোহী ছিলেন। তিনি এক্সপ্রেসওয়ের নিচ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
মো.
সহকারী পুলিশ কমিশনার (বন্দর) মাহমুদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িটি যে স্থান থেকে ছিটকে পড়েছে, সেখানে বাঁক রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের রেলিংয়ের ওপর দিয়ে তীব্র গতিসম্পন্ন গাড়িটি নিচে পড়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গাড়িটি বেপরোয়া গতিতে চলছিল।
এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা এবারই প্রথম নয়। গত বছরের আগস্ট মাসে পরীক্ষামূলক চালুর পর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী। চলতি নভেম্বর মাসেই দুটি প্রাইভেট কার উল্টে যায় এই উড়ালসড়কে। মূলত ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বাঁক, চালকদের গতিসীমা না মানা এবং বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে সিডিএ বলছে, এগুলো স্বাভাবিক বাঁক। চলাচলে কোনো ঝুঁকি নেই। গতিসীমা না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিন ঘুরে ও যানবাহনচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নির্ধারিত গতিসীমা মানা হচ্ছে না। ফাঁকা পেলেই সেখানে দ্রুতগতিতে চলছে যানবাহন। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলছে মোটরসাইকেল। এ নিয়ে গতকাল বুধবার প্রথম আলোয় ‘বেপরোয়া গতিতে চলে গাড়ি, বাড়ছে ঝুঁকি’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সিডিএ সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা নিষিদ্ধ। পরীক্ষামূলক যান চলাচলের সময় সাময়িকভাবে ট্রাক, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে চলছে মোটরসাইকেল।
সরেজমিন দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলরত গাড়ির অধিকাংশই সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল। এ ছাড়া বড় একটি অংশ কার ও মাইক্রোবাস। চলাচলের সময় অধিকাংশ গাড়িই গতিসীমা মেনে চলছে না। গতিসীমার মাপার জন্য কোথাও নেই যন্ত্র বা ক্যামেরা। কিছু স্থানে গতিরোধক থাকলেও নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন চালকেরা।
চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতেও গাড়ির গতি কমানোর প্রবণতা কম চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। এসবের কারণে সেখানে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
আরও পড়ুনবেপরোয়া গতিতে চলে গাড়ি, বাড়ছে ঝুঁকি১৯ নভেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল দ র ঘটন ব পর য় গত স ম
এছাড়াও পড়ুন:
জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যা মামলায় ২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় দুইজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দীন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আরো পড়ুন:
সখীপুরে মেয়েকে হত্যার পর নিজেকে শেষ করলেন মা
নেত্রকোণায় চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই
সাক্ষীরা হলেন, জবি শিক্ষার্থী সৈকত হোসেন এবং সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদুর রহমান। সৈকত নিহত জোবায়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই এবং ডা. ওয়াহিদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বর্ষার মামা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ হোসেন সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন।
জবানবন্দিতে সৈকত বলেন, “আমি জবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও জোবায়েদ ভার্সিটির বড় ভাই। আমি জোবায়েদ ভাইয়ের ক্লোজ ছোট ভাই হওয়াতে বর্ষা আমার নাম্বার জোবায়েদ ভাই থেকে নেয়। মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপ হাই, হ্যালো কথাবার্তা হত। ২-৩ মাস আগে বর্ষা আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। তখন থেকে বর্ষার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। জোবায়েদ ভাই প্রায় ১ বছর ধরে বর্ষাকে বাসায় টিউশন পড়াত।”
তিনি বলেন, “ভার্সিটি এলাকায় থাকাকালে গত ১৯ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটের দিকে বর্ষা তাকে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দেয়, ‘ভাইয়া কই তুমি?’ আমি জানাই ক্যাম্পাসে। বর্ষা বলে, ‘স্যারের আম্মুর নাম্বার আছে?’ কারণ জানতে চাইলে বর্ষা বলে, ‘লাগবে।’ ভাইয়ের কিছু হয়ছে কি না জানতে চাইলে বর্ষা বলে, ‘ভাইরে (জোবায়দে) কে জানি মাইরা ফেলছে।’ আমি বলি, মাইরা ফেলছে বলতে? বর্ষা বলে, ‘খুন করে ফেলছে।’ তখন বর্ষাকে কল দেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এরপর বিষয়টি বড় ভাইদের জানাই।”
ডা. ওয়াহিদুর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, “গত ১৯ অক্টোবর সাপ্তাহিক নৈশ্যকালীন ডিউটি থাকায় বাসায় অবস্থান করছিলাম এবং ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ আমার স্ত্রীকে দ্বিতীয় তলার চাচাতো ভাই ফোন করে জানায়, সিঁড়িতে কোনো একজন লোক পড়ে আছে। আমরা তখন সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দেখি সিঁড়ির মাঝামাঝি একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।”
তিনি বলেন, “তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়ির লোকজন জড় হয়ে যায় এবং সেখানে শনাক্ত হয় যে, আমার ভাগ্নি বর্ষার প্রাইভেট টিউটর জুবায়েদের মরদেহ। তাৎক্ষণিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে অবহিত করি।”
বর্ষার মামা জানান, পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন তার ভাগ্নি বর্ষার সঙ্গে মাহির নামক এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং জোবায়েদ মাস্টারের সঙ্গেও বর্ষার প্রেম ছিল। এই দ্বন্দ্বের কারণে মাহির রহমান, জোবায়েদ মাস্টারকে হত্যা করে ঘটনার দিন দৌড়ে পালিয়ে যায়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, মো. জোবায়েদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতেন। প্রতিদিনের মতো গত ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানাধীন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর হোল্ডিং রৌশান ভিলায় বর্ষাকে পড়ানোর জন্য যান।
সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই ছাত্রী জোবায়েদ হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানায়, “জোবায়েদ স্যার, খুন হয়ে গেছে। কে বা কারা জোবায়েদ স্যারকে খুন করে ফেলছে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. কামরুল হাসান ৭টার দিকে জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্যটি জানান। এনায়েত তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল রৌশান ভিলায় পৌঁছান। ভবনের নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সময় সিঁড়ি এবং দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান। ওই ভবনের তৃতীয় তলার রুমের পূর্ব পার্শ্বে সিঁড়িতে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখতে পান।
ঘটনার দুইদিন পর ২১ অক্টোবর জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন বংশাল থানায় মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে জোবায়েদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার ডান পাশে আঘাত করে হত্যা করেছে।
মামলায় বর্ষা, তার প্রেমিক মো. মাহির রহমান, মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান ২১ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী