বিদ্রূপের চাবুকে ফুটে ওঠা অসংগতি
Published: 28th, November 2025 GMT
বাংলা সাহিত্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর আবির্ভাব সাহিত্যসমালোচক হিসেবে। তবে অল্প সময়েই নাট্যসাহিত্যে তাঁর পদার্পণ পড়েছিল গভীরভাবে। সফল নাট্যকার, সুবক্তা, কমিউনিস্ট, আদর্শ শিক্ষক—এসব বিশেষণের ভিড়ে গল্পকার মুনীর চৌধুরী অনেকটাই অনালোকিত। তাই সামগ্রিকভাবে তাঁকে বুঝতে ‘গল্পকার মুনীর চৌধুরী’র সত্তা অন্বেষণ জরুরি।
১৯৪৪ থেকে ১৯৪৮—মোটাদাগে চার বছর তাঁর ছোটগল্প লেখার সময়। সংখ্যার বিচারে তাঁর ছোটগল্প হাতে গোনা। গল্পগুলো লেখা তরুণ বয়সে, সাহিত্যজগতে প্রবেশের প্রথম দিকে।
জীবদ্দশায় তাঁর কোনো গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। মৃত্যুর পর বিভিন্ন সময়ে রচনাবলির অংশ হিসেবে এসব গল্প অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত একটি তালাকের কাহিনি ও অন্যান্য গল্প বইটি সেই অর্থে মুনীর চৌধুরীর প্রথম স্বতন্ত্র ছোটগল্পের বই।
সমাজের কুসংস্কার, ধর্মের প্রভাব, শোষকশ্রেণির দমনপীড়ন, মানুষের অসহায়ত্বের চিত্র ও নর-নারীর প্রেমের মতো বিষয় প্রধান হয়ে ওঠে তাঁর ছোটগল্পগুলোতে। সমাজের অসংগতিকে আঘাত করতে তিনি অধিকাংশ গল্পে নিয়েছেন তীক্ষ্ণ বিদ্রূপের আশ্রয়।
‘হালুম’, ‘নগ্ন পা’, ‘ফিডিং বটল’, ‘বাবা ফেকু’, ‘ন্যাংটার দেশে’, ‘খড়ম’, ‘একটি তালাকের কাহিনি’, ‘শবে বরাত’ ও ‘মানুষের জন্য’—মোট ৯টি গল্প নিয়ে এই বই। গল্পগুলোর পটভূমি, কাহিনিনির্মাণ, চরিত্রায়ণ, বর্ণনাভঙ্গি ও সংলাপে মুনীর চৌধুরীর শিল্পপ্রতিভা সহজেই চোখে পড়ে।
‘হালুম’ গল্পটি চল্লিশের দশকের নোয়াখালীর গ্রামীণ একান্নবর্তী পরিবারের আঙিনায় নিয়ে যায় আমাদের। এ গল্পে মুনীর চৌধুরী পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে কটাক্ষ করেছেন তীক্ষ্ণ বিদ্রূপের মাধ্যমে। গুটিবসন্তের গর্তে ভরা মুখ, এক চোখ কানা আশরাফ মুন্সীর ভয়ে সব সময় আতঙ্কে থাকে তার তিন ছেলের বউ। তবে সুযোগ পেলে তারাও শ্বশুরকে বিদ্রূপ করতে ছাড়ে না, আড়ালে-আবডালে ডাকে ‘হালুম’ বলে!
‘একটি তালাকের কাহিনি’ ও ‘মানুষের জন্য’—এ দুটি সমাজসমস্যামূলক গল্প। তালাকের ভয়াবহতা উঠে এসেছে এখানে। গল্প দুটির প্রেক্ষাপট ও কাহিনি ভিন্ন, কিন্তু পরিণতি এক। যেখানে একটিমাত্র শব্দ ‘তালাক’ উচ্চারণে অত্যন্ত দুর্বিষহ ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে নারীর জীবন।
এর বিপরীতে ‘নগ্ন পা’ ও ‘ফিডিং বটল’ গল্পে নারীর স্বাধীনতা গুরুত্ব পেয়েছে। ‘নগ্ন পা’ গল্পে রাহেলার স্বাধীন বাসনা ও চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয় শাশুড়ির বিরাগ আর স্বামীর সন্দেহের কাছে। শেষ পর্যন্ত বোরকার আবরণে বাহ্যিকভাবে নিজেকে মুড়ে নিতে বাধ্য হলেও তার ভেতরের বাসনা শৃঙ্খলমুক্ত থেকেছে শেষ পর্যন্ত।
একটি তালাকের কাহিনি ও অন্যান্য গল্প
মুনীর চৌধুরী
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ: ডিসেম্বর ২০২৩
প্রচ্ছদ: মাসুক হেলাল
পৃষ্ঠা: ৮৬
মূল্য: ২৮০ টাকা
‘ফিডিং বটল’ গল্পটি যেন নারীর স্বাধীনতার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে। স্ত্রী আবেদার যৌক্তিক ও অনড় অবস্থানের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয় সাজ্জাদকে। পরাভূত হয় একগুঁয়ে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। গল্পের শেষাংশে তা উঠে এসেছে অত্যন্ত শ্লেষাত্মকভাবে, ‘সে দেখিল ভাবি দিব্যি আরামের সঙ্গে পা ছড়াইয়া পাশের প্লেট হইতে ছানামাখা একটি একটি ক্রিম ক্র্যাকার তুলিয়া মুখে দিতেছে আর সাজ্জাদ ভাই সমস্ত পুরুষ জাতির কলঙ্ক হইয়া সেই বিস্কুটে মাখন লাগাইতেছে।’
‘ন্যাংটার দেশে’ গল্পে দুর্ভিক্ষপীড়িত, নিরন্ন অসহায় মানুষের মুখোমুখি হই আমরা। আমেনা ও তার মাকে এক কাপড় পরতে হয় ভাগাভাগি করে। ব্যর্থতার দায় নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমেনার বাপের সামনে পথ খোলা থাকে একটাই—আত্মহনন। ‘খড়ম’ গল্পে শোষণে জর্জরিত অসহায় মানুষের আর্তনাদ ভারী করে তোলে পাঠকের হৃদয়কে।
নর-নারীর প্রেম আর না পাওয়ার দোলাচল নিয়ে হাজির হয় ‘শবে বরাত’ গল্পটি। আর ‘বাবা ফেকু’ গল্প উন্মোচিত করে আমাদের চারপাশের ব্যক্তির শুচিতার বহিরাবরণের ভেতরের পশুপ্রবৃত্তি।
এই বইয়ে পাঠক নাট্যকার ও সাহিত্যসমালোচক পরিচয়ের বাইরে গল্পকার মুনীর চৌধুরীকে আলাদা করে আবিষ্কার করবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ছ টগল প প রক শ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
গিটারিস্ট সেলিম হায়দারের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রুনা লায়লা
দেশের নন্দিত গিটারিস্ট সেলিম হায়দার মারা গেছেন। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস করেন। ৬৯ বছরের জীবনে ৫১ বছর গিটারের সঙ্গে কাটিয়েছেন সেলিম হায়দার। দেশের প্রখ্যাত বেশিরভাগ শিল্পীর সঙ্গে বাজিয়েছেন এই মিউজিশিয়ান। এ তালিকায় রয়েছেন গুণী সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা।
গিটারিস্ট সেলিম হায়দারের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বরেণ্য সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) এ শিল্পী তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন।
আরো পড়ুন:
রুদ্রনীলের সঙ্গে তনুশ্রীর প্রেম কেন ভেঙেছিল?
বেড়াতে গিয়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে বিয়ে করলেন নায়িকা
রুনা লায়লা বলেন, “বাংলাদেশ আজ একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান সংগীতশিল্পীকে হারাল। গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার সঙ্গে বাজিয়েছেন তিনি। আমরা প্রায় পুরো পৃথিবী ঘুরে একসঙ্গে কনসার্ট করেছি। আমার ব্যান্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন এবং প্রতিটি সংগীতাংশ ও গান নিখুঁতভাবে মনে রাখতেন। কাজের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত ছিলেন তিনি।”
অসুস্থ হায়দারের খোঁজখবর নিতেন রুনা লায়লা। তা জানিয়ে এই শিল্পী বলেন, “আমি জানতাম তিনি অসুস্থ, তাই মাঝে মাঝে খোঁজ নিতাম এবং আশা করতাম, প্রার্থনা করতাম—তিনি শিগগরি সুস্থ হয়ে আবার আমার কনসার্টে বাজাবেন। কিন্তু তা আর হলো না। আমি সেলিম হায়দারকে খুব তাড়াতাড়ি হারালাম।”
হায়দারকে হারিয়ে স্তব্ধ রুনা লায়লা বলেন, “আমি স্তব্ধ ও আমার হৃদয়ে ভেঙে গেছে; তার অকাল প্রয়াণে কোনো সান্ত্বনা খুঁজে পাচ্ছি না। আল্লাহ তাকে জান্নাত নসিব করুন এবং তার রুহের মাগফিরাত দান করুন। আমিন।”
এক মাস আগে সেলিম হায়দারের প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত হয়। এরপর নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৩১ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় সেলিম হায়দারকে। ২৪ নভেম্বর হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। ২৭ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবার হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সেলিম হায়দার মূলত লিড গিটারিস্ট ছিলেন। তবে বেজ ও রিদম গিটার, অ্যাকুস্টিক ড্রামস এবং কিবোর্ডেও পারদর্শী ছিলেন। ফিডব্যাক প্রতিষ্ঠার বাইরেও দেশের বেশির ভাগ শিল্পীর সঙ্গেই গিটার বাজিয়েছেন। সেলিম হায়দারের সংগীত পরিচালনায় দুটি জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে—ফিডব্যাকের ‘এইদিন চিরদিন রবে’ ও ‘ঐ দূর থেকে দূরে’।
ঢাকা/শান্ত