মেঘনা নদীতে দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষে নিহত ৩
Published: 11th, January 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীতে দুই স্পিডবোটের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। একজন নিখোঁজ আছেন। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মেঘনা নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মামুন ব্যাপারীর ছেলে অদুদ ব্যাপারী (৩৫) ও একই এলাকার মো.
নৌ পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন রাতে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে মেঘনা নদী থেকে নয়ন ও পিয়াসের লোকজন ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু লুট করে। বালু উত্তোলনের সময় তারা নিজস্ব কয়েকটি ট্রলার দিয়ে মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশে মহড়া দেন। ধারণা করা হচ্ছে, স্পিডবোট দুটি বালুমহালের অবৈধ বালু উত্তোলনে মহড়ার কাজ করছিল। অন্ধকার ও কুয়াশার কারণে একটি স্পিডবোট অন্যটিকে দেখতে না পাওয়ার কারণে সংঘর্ষ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা সংঘর্ষের শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান তাঁরা।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সায়মা আক্তার শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত পৌনে ১০টার দিকে ৩ জনকে আমাদের হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন মৃত ছিলেন। আবদুল হালীম (৩৪) নামে অন্য একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
গজারিয়ার নৌ পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক মো. মাহাবুব আলম বলেন, ‘আমরা যত দূর জানতে পেরেছি, রাতে কুয়াশার কারণে ওই দুটি স্পিডবোট চলাচলের সময় একটি আরেকটিকে দেখতে পায়নি। এতে তাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজন মারা গেছেন। একজন নিখোঁজ আছেন। আহতও আছেন দু-একজন। তবে ওই দুটি স্পিডবোট রাতে এখানে কী করছিল, কোথা থেকে এসেছে, বিস্তারিত জানা যায়নি।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টাইটানিক যাত্রীর সোনার ঘড়ি বিক্রি হলো সাড়ে ২৮ কোটি টাকায়
শত বছরের বেশি আগে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের এক মৃত যাত্রীর কাছ থেকে পাওয়া একটি পকেটঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে। গতকাল শনিবার যুক্তরাজ্যে এক নিলামে ১৭ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডে এটি বিক্রি হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার টাকা (১ পাউন্ড সমান ১৫৯.৯৫ টাকা হিসাবে)।
১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কগামী টইটানিক জাহাজটি আটলান্টিক মহাসাগরে বিশাল বরফখণ্ডে (হিমশৈল) ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। এতে মারা যান দেড় হাজারের বেশি যাত্রী। তাঁদেরই একজন মার্কিন ধনকুবের ইসিডর স্ট্রাউস। তিনি ছিলেন ওই জাহাজের অন্যতম ধনী যাত্রী। ওই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী আইডাও মারা গেছেন।
জাহাজ ডুবে যাওয়ার কয়েক দিন পর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে ইসিডর স্ট্রাউসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর সঙ্গে পাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল জুলস ইয়ুরগেনসেন কোম্পানির তৈরি ১৮ ক্যারেটের সোনার ঘড়ি।জাহাজ ডুবে যাওয়ার কয়েক দিন পর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে স্ট্রাউসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাঁর সঙ্গে পাওয়া জিনিসের মধ্যে ছিল জুলস ইয়ুরগেনসেন কোম্পানির তৈরি ১৮ ক্যারেটের সোনার ঘড়ি।
স্ট্রাউস দম্পতির পরিবারের কাছে থাকা এ ঘড়ি গতকাল যুক্তরাজ্যের উইল্টশায়ারে হেনরি অ্যালরিজ অ্যান্ড সন অকশনার্স নামের প্রতিষ্ঠান আয়োজিত নিলামে বিক্রি হয়েছে।
জার্মান বংশোদ্ভূত ইসিডর স্ট্রাউস ছিলেন একজন মার্কিন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ। তিনি নিউইয়র্কের বিখ্যাত মেসি’স ডিপার্টমেন্ট স্টোরের মালিকদের একজন ছিলেন।
ধারণা করা হয়, টাইটানিক ডুবে যাওয়ার সময় স্ট্রাউসের স্ত্রী আইডা স্বামীকে রেখে একা লাইফবোটে উঠতে রাজি হননি। বলেছিলেন, তিনি স্বামীর সঙ্গেই মরতে চান। পরে আইডা স্ট্রাউসের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুননিলামে ৩ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে টাইটানিকের যাত্রীর চিঠি২৭ এপ্রিল ২০২৫টাইটানিকের আনুষ্ঠানিক কাগজে লেখা এবং জাহাজে থাকা অবস্থায় পাঠানো আইডা স্ট্রাউসের একটি চিঠিও গতকালের নিলামে ১ লাখ পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া টাইটানিকের যাত্রীদের একটি তালিকা ১ লাখ ৪ হাজার পাউন্ডে এবং উদ্ধারকৃত যাত্রীদের পক্ষ থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ আরএমএস কারপাথিয়ার ক্রুদের দেওয়া একটি সোনার পদক ৮৬ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছে।
টাইটানিক–সংক্রান্ত স্মারকসামগ্রী নিয়ে আয়োজিত এ নিলামে মোট আয় হয়েছে ৩০ লাখ পাউন্ড।
স্ট্রাউসের পকেটঘড়িটি রাত ২টা ২০ মিনিটের দিকে এসে থেমে গিয়েছিল। মূলত ওই সময়েই টাইটানিক জাহাজটি পানিতে তলিয়ে যায়।
ধারণা করা হয়, ১৮৮৮ সালে আইডা তাঁর স্বামীর ৪৩তম জন্মদিনে ঘড়িটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। ঘড়িটির ওপর স্ট্রাউসের আদ্যক্ষর খোদাই করা আছে।
উদ্ধারের পর ঘড়িটি স্ট্রাউসের পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছিল। পরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঘড়িটি সংরক্ষিত থাকে। একপর্যায়ে ইসিডরের প্রপৌত্র কেনেথ হলিস্টার ঘড়িটি মেরামত করান। এটি আবার সচল হয়।
নিলামকারী অ্যান্ড্রু অ্যালড্রিজ মনে করেন, ঘড়িটি রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়ার মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, টাইটানিকের কাহিনির প্রতি মানুষের এখনো আগ্রহ আছে। তিনি আরও বলেন, ‘নারী, পুরুষ বা শিশু—প্রত্যেক যাত্রীরই একটি গল্প ছিল। আর ১১৩ বছর পরও সে গল্পগুলো স্মারকসামগ্রীর মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।’
টাইটানিক থেকে ৭০০-এর বেশি যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা জাহাজ আরএমএস কারপাথিয়ার ক্যাপ্টেনকে উপহার হিসেবে দেওয়া একটি সোনার পকেটঘড়ি গত বছর ১৫ লাখ ৬০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হয়েছিল। দামের দিক থেকে এটি সে সময় রেকর্ড করেছিল।
আরও পড়ুনটাইটানিকের যাত্রী মার্কিন ধনকুবেরের সেই সোনার ঘড়ি রেকর্ড দামে বিক্রি২৯ এপ্রিল ২০২৪