Prothomalo:
2025-09-18@02:50:29 GMT

গরিব মানুষের কথাও একবার ভাবুন

Published: 11th, January 2025 GMT

যেখানে আরও বেশিসংখ্যক গরিব মানুষের কাছে সুলভে নিত্যপণ্য পৌঁছানোর কথা, সেখানে সরকার ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে ট্রাক সেল বা খোলাবাজারে বিক্রিই বন্ধ করে দিয়ে তাঁদের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে দিয়েছে। এর পাশাপাশি এখন থেকে শুধু স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীদের টিসিবির পণ্য দেওয়া হচ্ছে। এতে ৪৩ লাখ কার্ডধারী পণ্য পাচ্ছেন না। কারণ, স্মার্টকার্ড পেয়েছে ৫৭ লাখ পরিবার। স্মার্টকার্ড না পাওয়া ৪৩ লাখ পরিবারের মধ্যে ৬ লাখের কার্ড ছাপা ও ১৩ লাখের কার্ড যাচাই–বাছাই করার কাজ চলছে। বাকিদেরও যাচাই–বাছাই হবে। অনিয়মের কারণে অনেকে আর কার্ড পাবেন না, এটা ঠিক; কিন্তু অনেকে কার্ড পাওয়ার যোগ্যও। 

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, খোলাবাজারে বিক্রির কর্মসূচির আওতায় প্রতিদিন ঢাকা ও চট্টগ্রামে সাড়ে ২৪ হাজার মানুষ ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য কেনার সুযোগ পেতেন। মাত্র দুই মাস সাত দিন চলার পর এ কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে সংস্থাটি। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত বছর বাজারে চাল, পেঁয়াজ, আলু, মুরগি, ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি মসুর ডাল কিনতে পারতেন। এতে একজন ক্রেতার অন্তত ৩৫০ টাকা সাশ্রয় হতো।

১ জানুয়ারি এ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন। সবজির দাম কমে যাওয়ায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ট্রাকে করে সবজি বিক্রি বন্ধ করার যুক্তি না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যেখানে দাম অত্যান্ত চড়া, সেখানে ট্রাকে সুলভ মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি বন্ধ করার কী যুক্তি থাকতে পারে?

ট্রাকে যখন চারটি পণ্য সুলভে বিক্রি করা হতো, তখন দীর্ঘ সারির কারণে অনেকে বিমুখ হয়ে ফিরে যেতেন। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদনও হয়েছে। সরকার কি একটি জনহিতকর কর্মসূচি বন্ধ করে গরিব মানুষকে কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিল না? 

আওয়ামী লীগ সরকার কার্ড তৈরিতে অনিয়ম করে থাকলে সেটি যাচাই–বাছাই করতে এত সময়ক্ষেপণ কেন? বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক যথার্থই বলেছেন, ট্রাক সেল কর্মসূচি বন্ধ করা উচিত হয়নি। বাতিল হওয়া টিসিবির ৪৩ লাখ পরিবার কার্ডের সমপরিমাণ পণ্য আপাতত ওএমএস বা ট্রাক সেলের মাধ্যমে বাজারে বিক্রি করা যেত।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাছে গরিব মানুষের প্রতি এ রকম বৈষম্যমূলক আচরণ কখনোই কাম্য হতে পারে না। অবিলম্বে যাচাই–বাছাই করে বাকি ৪৩ লাখ পরিবারকে সুলভে পণ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। আর কার্ডের বাইরে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ আছেন, তাঁদের জন্য ট্রাক সেল বা খোলাবাজারে বিক্রির কাজটি পুনরায় শুরু করা হোক। বাণিজ্য উপদেষ্টার ভাষায় পুনর্বিবেচনার কাজটি দ্রুততম সময়ে হবে আশা করি।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, খেটে খাওয়া মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকলে চব্বিশের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান সফল
হতো না। অতএব, তেলা মাথায় তেল না দিয়ে তাঁদের কষ্টের কথাও একবার ভাবুন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে