মাছবাহী গাড়ির পানি ঝরে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক
Published: 4th, February 2025 GMT
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার নাসির গ্লাস কারখানা থেকে নিশিন্দা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কিছু স্থানে খানাখন্দ এত বড়, সেসব স্থানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভালুকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ২৫ কিলোমিটার এলাকা খানাখন্দে ভরে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার আইডিয়াল মোড় থেকে উত্তরে স্কয়ার ফ্যাশান, মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড হয়ে তেপান্তর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার। আমতলী, সিডস্টোর বাজার, ভালুকা সদরের খিরু নদীর দক্ষিণে এআর ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে উত্তরে থানার মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার। এ ছাড়া ভরাডোবার বাকসাতরা মোড় থেকে উত্তরে ক্লাবের বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঢাকাগামী লেনের কার্পেটিং উঠে অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কিছু খানাখন্দ যেন মরণফাঁদ। যেখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
একাধিক গাড়িচালক জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়ি ও থানার মোড় এলাকার কিছু রাস্তা সবচেয়ে খারাপ ও বিপজ্জনক। এসব এলাকায় গাড়ি চালানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের দাবি, মাছের গাড়ি থেকে পানি পড়ে সব সময় ওইসব গর্ত ভরে থাকে। অপরিচিত চালকরা গর্তের আকার ও গভীরতা বুঝতে না পারার কারণে প্রায়ই দেখা যায়, মাস্টারবাড়ি এলাকায় সড়কের গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে আছে।
ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের তথ্যমতে, এমনিতেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করে। অপরদিকে সদর, ভালুকা ও ত্রিশাল উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি পাঙাশ মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব মাছ পানিভর্তি ড্রামে ট্রাকে এই মহাসড়ক দিয়ে রাজধানীসহ দেশের হাটবাজারে নেওয়া হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি রাতে ২৫০-৩৫০ ট্রাক মাছ পরিবহন করা হচ্ছে। মহাসড়কজুড়ে ওইসব মাছ বহনকারী ট্রাক থেকে অনবরত পানি পড়ছে। এই পানির কারণেই অল্প সময়ের মধ্যে মহাসড়কের কার্পেটিং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন জানান, মহাসড়কের কিছু স্থান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে ভালুকা উপজেলার ভরাডোবার ক্লাবের বাজার, ভালুকা সদরের থানার মোড় খিরু সেতুর দুই পাশ ও মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকার প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা। ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগ ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে অব্যাহত রুটিন ওয়ার্ক করলেও তা ২-৩ দিনের বেশি টিকছে না। তাঁর দাবি, কিছু ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ডাবল এইচবিবি করা হলেও বেশি দিন টিকছে না। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মূল কারণ প্রতিদিন মাছ বহনকারী শত শত ট্রাক ও পিকআপ থেকে অবিরাম পানি ঝরা। গত বছর সদর, ত্রিশাল ও ভালুকা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মাছের গাড়িগুলোয় পানি সরবরাহ করা মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ ৫০টিরও বেশি পানির পাম্প উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাতেও ফল পাওয়া যায়নি। এক কথায়, মহাসড়কে পানি পড়া সম্পূর্ণ বন্ধ করতে না পারলে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই।
প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা উল্লিখিত বিষয়ে লিখিতভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বারবার করেছি এবং মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরসিসি করার প্রস্তাব দিয়েছি। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো আরসিসি করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম চলমান।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ল ম ট র এল ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দর কাঠ ও ফুলের গামারি
ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র তীরের কাছারিঘাট ও শিল্পাচার্য জয়নুল উদ্যান সকালে প্রাতভ্র৴মণকারীদের পদচারণে মুখর থাকে। কয়েক দিন আগে হেঁটে ফেরার পথে জেলা নির্বাচন অফিসের পেছনে গামারিগাছে ফুল ফুটতে দেখলাম। এই গাছের পাতা শীতে ঝরে গিয়েছিল। বসন্তে পত্রশূন্য গাছে ফুল ফুটেছে। ফুল ফোটার পর আবার পাতা গজাচ্ছে। কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর হলুদ ফুলও কিন্তু সুন্দর। গামারি ফুল ভ্রমরের খুব প্রিয়; কারণ, এই ফুলে বেশ মধু আছে। তাই গামারির আরেক নাম ভ্রমরপ্রিয়া। টিয়া ও কাঠবিড়ালিরও প্রিয় এই ফুল। ফুলের নিচের দিকটা খয়েরি বাদামি।
গামারি সবুজ ও ঘন পাতাবিশিষ্ট, দ্রুত বর্ধনশীল পত্রঝরা বৃক্ষ। গামারি কাঠের জন্য লাগানো হলেও এর ফুলও কম সুন্দর নয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Gmelina arborea, এটি Lamiaceae পরিবারের বৃক্ষ। ইংরেজিতে এই গাছ কান্ধার ট্রি, কাশ্মীর ট্রি, গুমার ট্রি, মালয় বুশ-বিচ, হোয়াইট বিচ, হোয়াইট টিক ইত্যাদি নামে পরিচিত। এ ছাড়া বাংলা নাম গামার, গাম্বার, গাম্ভারি, তার কাঠ, গাম্ভারিকা ইত্যাদি নাম রয়েছে। এর সংস্কৃত নামগুলো হলো মধুমতি, গাম্ভারি, সিন্ধুপর্ণী, ভাদ্রাপর্ণী, গামহার ইত্যাদি।
আদিনিবাস ভারতবর্ষ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় জন্মে। ভারতের আসাম, দক্ষিণ বিহার, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল–সংলগ্ন এলাকায় এ গাছ হয়। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় বেশি দেখা যায়।
এই গাছ লম্বায় ১৫ থেকে ৩৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের প্রশাখা ও কুঁড়ি রোমশ। বাকল সাদা বা উজ্জ্বল ধূসর। পাতা পানপাতার আকৃতির, ২০ থেকে ২৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পাতার ওপর দিক উজ্জ্বল সবুজ, নিচে পাণ্ডুর, বোঁটা ৬ থেকে ১০ সেন্টিমিটার লম্বা। শীতে পাতা ঝরে। এটি অত্যধিক খরা–সহনশীল। বসন্তকালে পাতাহীন ডালে ডালে দেখা যায় গাঢ় হলুদ ফুল। পাঁচটি পাপড়ি থাকলেও মাঝের পাপড়িটি অন্যগুলোর চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লম্বা। বড় পাপড়িটির লম্বা পতাকার মতো অংশটি গাঢ় হলুদ। ফুলের গোড়ার দিকে হলুদ রঙের পাশাপাশি দেখা মেলে লালচে-বাদামি ও খয়েরি রঙের। ফুলের অনেক মিষ্টি গন্ধ, ফুল ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, ২ ভাগে বিভক্ত। এর পুষ্পমধু ভোমরাদের খুবই প্রিয়। গামারির ফল দেখতে গোলাকার, ডিম্বাকৃতির, ফলে এক-দুটি বীজ হয়। ফল তিন সেন্টিমিটার চওড়া, শাঁসাল, পাকলে হালকা হলুদ হয়। শীতের পর ফুল এবং তাঁর দুই মাস পর ফল হয়।
কাঠ হলুদ, খানিকটা লাল অথবা সাদা। কাঠ টেকসই, সহজে কাজ করা যায়। সেগুনের পরেই গামারি কাঠের স্থান। এ জন্য ইংরেজিতে একে হোয়াইট টিক বলে। এই কাঠ আসবাব নির্মাণের জন্য বিশেষ উপযোগী। খোদাইয়ের কাজ, তক্তা, বাক্স, চিরুনি, খেলনা, গাড়ি ও নৌকা এই কাঠ দিয়ে বানানো যায়। এই কাঠের প্লাইউড বেশ ভালো।
গামারির অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে। কটু–তিক্ত রস, গুরুপাক, উষ্ণবীর্য, কফ ও ত্রিদোষনাশক, বিষদোষ দাহ, জ্বর, তৃষ্ণা ও রক্তদোষনাশক। এর ছাল এবং কাঠে আছে অনেক তিক্ত পদার্থ ও স্টেরোল। পাতার রসে আছে জীবাণুনাশক শক্তি। কচি পাতার রস গনোরিয়া ও কাশিতে উপকারী। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। ক্ষতের পুঁজ বের করে দেয়। ফল চর্মরোগ ও চুল ওঠা বন্ধ করার মহৌষধ। শিকড় কৃমিনাশক ও কুষ্ঠরোগে উপকারী। গামারিগাছের পাতা এবং ফল গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো পুষ্টিকর এবং প্রাণীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
চয়ন বিকাশ ভদ্র: অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি কলেজ, ময়মনসিংহ