টানা কয়েকদিনের তীব্র তাপপ্রবাহের পর অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টিতে ভিজল ময়মনসিংহ। শনিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টিতে জনজীবনে ফিরে এসেছে স্বস্তি, কমেছে অস্বস্তিকর উষ্ণতা। নগরের বিভিন্ন এলাকা ও বেশ কয়েকটি উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার সকাল আটটা থেকেই ময়মনসিংহের আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সকাল ৯টার পর থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে শুরু হয় মুষলধারে বর্ষণ। টানা কয়েকদিনের অসহনীয় গরমে শিশু ও বৃদ্ধসহ সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এই বৃষ্টি যেন সবার মনে শীতল পরশ বুলিয়ে দিয়েছে।

নগরের সানকিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, টানা কয়েকদিনের গরম শিশু বৃদ্ধ প্রত্যেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আজকের বৃষ্টি একেবারে হৃদয় শীতল করেছে।

নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান সাজু বলেন, কয়েকদিন ঘর থেকে বের হওয়া যায়নি প্রকট রোদে। বৃষ্টি আসার পর সবকিছু ঠান্ডা হয়ে পড়েছে। মানুষের মধ্যে স্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে শীতল হাওয়া উপভোগ করছে।

অটোরিকশা চালক খালেকুজ্জামান বলেন, বৃষ্টিতে আমিও ভিজছি যাত্রীরাও ভিজছে, এটা আলাদা একটা আনন্দ। গরমের কারণে না কোন কিছু খাইয়ে না ঘুমিয়ে শান্তি ছিল না। বৃষ্টিই সকল শান্তির মূল।

তবে স্বস্তির পাশাপাশি বৃষ্টি কিছু ভোগান্তিও বয়ে এনেছে। নগরের বাঁশবাড়ি কলোনির বাসিন্দা আব্দুল মজিদ জানান, বৃষ্টিতে যেমন স্বস্তি ফিরেছে তেমন ভোগান্তিও বেড়েছে আমাদের। টানা মুষলধারের বৃষ্টিতে বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। রাস্তা তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি দ্রুত না কমলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।

মুক্তাগাছা শহরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয় এবং সকাল ১১টা বাজলেও বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়নি। তিনি মনে করেন, এটা মানুষের উপর আল্লাহর রহমত।

ময়মনসিংহ আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মো.

মনিরুজ্জামান জানান, শনিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ভারী বৃষ্টির সঙ্গে ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় বজ্রপাত হচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, শুক্রবার ময়মনসিংহের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বৃহস্পতিবার ছিল ৩৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স বস ত

এছাড়াও পড়ুন:

বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

ময়মনসিংহের সড়ক-মহাসড়কে সাড়ে তিন বছরে ৭৭২ জনের মৃত্যু—এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং প্রতিদিনের রূঢ় বাস্তবতা। প্রতিটি প্রাণহানি একটি পরিবারকে শোকে নিমজ্জিত করেছে, অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। একই সময়ে গুরুতর আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতি আমাদের সড়কব্যবস্থার নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ দুরবস্থা তুলে ধরে।

বিআরটিএর তথ্য বলছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়ক দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’। বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, আঁকাবাঁকা সড়ক এবং থ্রি-হুইলারের অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে এই সড়কগুলোকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। চার লেনের মহাসড়ক হলেও উল্টো পথে গাড়ি চলা, গতিসীমা অমান্য করা এবং হাইওয়েতে ধীরগতির থ্রি-হুইলার চলাচল পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা ও গতিসীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু চালকদের অনিয়ম ও বেপরোয়া গতির কারণে তা কোনো কাজে আসছে না। অনেক চালক মনে করেন, ভালো রাস্তা মানেই বেশি গতি। এই মানসিকতা ভাঙতে কঠোর নজরদারি ও শাস্তির বিকল্প নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়? সড়কে নিয়ম ভাঙা, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং রোধে কেন কঠোর নজরদারি ও শাস্তি নেই? জাতীয় মহাসড়কে থ্রি–হুইলার নিষিদ্ধ থাকলেও বিকল্প পরিবহন না থাকায় এবং দুর্বল নজরদারির কারণে সেগুলো নির্বিঘ্নে চলছে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে সক্রিয় হলেও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগের ঘাটতি প্রকট। শুধু দুর্ঘটনার পর উদ্ধার নয়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধই হতে হবে মূল লক্ষ্য। এ জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়ানো এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ক্যামেরা বসানো জরুরি।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপেক্ষিত হচ্ছে—জনসচেতনতা ও চালকের প্রশিক্ষণ। অধিকাংশ দুর্ঘটনা চালকদের অসতর্কতা, অভ্যাসগত আইন ভাঙা এবং প্রতিযোগিতামূলক গতির কারণে ঘটছে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে তাঁরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে চালকদের বাধ্য না করেন। পাশাপাশি থ্রি-হুইলারের বিকল্প হিসেবে নির্ভরযোগ্য লোকাল পরিবহনব্যবস্থা চালু না করলে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না; এগুলো একধরনের ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’। দায়িত্বশীলদের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণ যেন সড়কে না ঝরে—এখনই সেই দাবি তুলতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে। ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশকে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • টাঙ্গাইলে কুকুরের কামড়ে ২৫ জন আহত
  • চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা, ভারী বর্ষণের আশঙ্কা
  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ছেলের মুক্তি চেয়ে কাঁদলেন মা
  • ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
  • এনসিপির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি হচ্ছে: হাসনাত
  • প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে চুরি করতেন অটোরিকশা, আটক ৪
  • বিকেলে এনপিপির পদযাত্রা-সমাবেশ, প্রস্তুত ময়মনসিংহ
  • বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
  • অশোভন আচরণ, শিষ্টাচারবহির্ভূত বিরুদ্ধাচরণ কাম্য নয়: সৈয়দ এমরান সালেহ