টেকনাফে ইউপি চেয়ারম্যান খোকন গ্রেপ্তার
Published: 5th, February 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন খোকনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শামলাপুরের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিমেল রায়।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান আমজাদ জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনে টেকনাফে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতি মামলার আসামিও তিনি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ, মামলা দায়েরের পরও পুলিশ চেয়ারম্যান আমজাদকে এতদিন গ্রেপ্তার করেনি। স্থানীয় কিছু বিএনপির লোকজনও তাকে আশ্রয় দিয়েছে। তাই তিনি প্রকাশ্যে ঘুরেছেন। অবশেষে গ্রেপ্তার করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন তারা।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর
এছাড়াও পড়ুন:
অল্প অস্ত্রে বড় বিজয়
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানিকগঞ্জে বড় আকারে সফল যতগুলো যুদ্ধ হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম গোলাইডাঙ্গার যুদ্ধ। ২৯ অক্টোবর জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার গোলাইডাঙ্গায় যুদ্ধটি হয়। যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই তুলনায় মুক্তিবাহিনীর ক্ষতি ছিল সামান্য। এমন অর্জন মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল চাঙা করে। বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে বিজয় অর্জনের দিকে এগিয়ে যান তাঁরা।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস (সেক্টর দুই) বইয়ে লেখা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে সিঙ্গাইর থানায় ক্যাম্প স্থাপন করে পাকিস্তানি বাহিনী। গোলাইডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। ২৯ অক্টোবর ওই ক্যাম্পের বীর মুক্তিযোদ্ধারা খবর পান যে তিন শতাধিক পাকিস্তানি সেনা ১০–১২টি নৌকা নিয়ে ক্যাম্পটি দখল করতে অগ্রসর হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা দুই দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি দল গোলাইডাঙ্গা খালের মোড়ে এবং অন্য দল খালের অপর পাড়ে অবস্থান নেয়।
একই বইয়ে লেখা হয়েছে, পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে স্থানীয় স্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে যায়। সেখানে কাউকে না পেয়ে ফেরার জন্য রওনা হয়। পথে পাকিস্তানি বাহিনীর সব কটি নৌকা যখন মুক্তিযোদ্ধাদের আওতার মধ্যে আসে, তখন মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে আক্রমণ চালান। পাকিস্তানি সেনাদের প্রায় সব কটি নৌকা ডুবে যায়। প্রায় এক শ পাকিস্তানি সেনা ঘটনাস্থলে নিহত হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান (তৃতীয় খণ্ড) বইয়ে লেখা হয়েছে, এই খবর ওয়্যারলেসের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে যায়। তখন পাকিস্তানি সেনাদের সমর্থনে হেলিকপ্টারে করে হামলা চালানো হয়। ওই এলাকার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস (সেক্টর দুই) বইয়ে উল্লেখ আছে, গোলাইডাঙ্গা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা এলএমজি, এসএলআর, ৩০৩ রাইফেল ও গ্রেনেড ব্যবহার করেন। যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। সেসব অস্ত্রের মধ্যে ছিল রকেটবোমা, চায়নিজ এসএমজি, চায়নিজ অটোমেটিক রাইফেল, রকেট লাঞ্চার প্রভৃতি।
মুক্তিযুদ্ধে সামরিক অভিযান (তৃতীয় খণ্ড) বইয়ে লেখা হয়েছে, পাকিস্তানি সেনারা ডুবুরি নামিয়ে পানি থেকে মৃত সেনাদের লাশ তুলে নিয়ে যায়। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা তোবারক হোসেন (লুডু)। সার্বিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেন মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন একাত্তরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাবিলদার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আর চাকরিতে ফিরে যাননি। সেই যুদ্ধের স্মৃতিচারণা করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পাকিস্তানি সেনাদের আসার খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভাগ হয়ে যান, আলাদাভাবে অবস্থান নেন। গোলাইডাঙ্গা ত্রিমুখী খালের তিন পাড়ে তিনটি বাংকার (মাটির গর্ত) করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে অবস্থান নেন। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ৩২ জনের মতো। পাকিস্তানি সেনারা যখন বিদ্যালয়ের দিকে যায়, তখন মুক্তিযোদ্ধারা কিছু করেননি। সিদ্ধান্ত নেন, ফেরার পথে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হবে। সকাল ১০টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা নৌকায় করে ফেরার পথে খালের ত্রিমুখী স্থানে তিন দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেন।
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে এই যুদ্ধে ৮৩ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ১০ থেকে ১৫ জন পাকিস্তানি সেনা বেঁচে পালিয়ে যায়। তখন মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে নেন। এর এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর ওই এলাকায় হেলিকপ্টারের মাধ্যমে গানপাউডার ছিটিয়ে, ওপর থেকেই গুলিবর্ষণ করতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী। এতে শতাধিক বাড়িঘর আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। গ্রামের ৮ থেকে ১০ জন শহীদ হন।
অসমসাহস, দেশপ্রেম আর অল্প অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এই যুদ্ধে বড় সাফল্য পেয়েছিলেন। এই অর্জন তাঁদের আরও জয়ের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী করেছিল, আশপাশের এলাকার মুক্তিযোদ্ধারাও প্রেরণা পেয়েছিলেন।