সময় কখনো থামে না, কিন্তু কিছু নাম থাকে, যারা সময়কে ছাপিয়ে যায়। নব্বইয়ের শেষ প্রজন্মের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে তেমনই এক নাম ‘ম্যাডাম ফুলি’। শহীদুল ইসলাম খোকনের পরিচালনায় ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমা কেবল বক্স অফিস জয় করেনি, জন্ম দিয়েছিল এক উজ্জ্বল তারকার— শিমলা। প্রথম সিনেমায় বাজিমাত, সঙ্গে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার; যেন ক্যারিয়ারের সূচনাতেই তিনি ছুঁয়ে ফেলেছিলেন সাফল্যের চূড়া।

কিন্তু তার পরের গল্পটা যেন আরেক সিনেমার চিত্রনাট্য। শিমলা ছিলেন ব্যস্ত, রূপালি পর্দা দাপিয়ে ফিরতেন চরিত্র থেকে চরিত্রে। অথচ সময়ের স্রোতে তিনি ধীরে ধীরে সরে গেলেন আড়ালে, রঙিন আলোর দুনিয়া থেকে যেন ফিকে হয়ে গেলেন একসময়। মাঝে মাঝে ভেসে উঠেছে তার নাম, কিন্তু ছিল না সেরকম কোনো আলোড়ন।

২০১৫ সালে শিমলার জীবনে নামে আরও এক নাটকীয় অধ্যায়। ‘নাইওর’ নামে নতুন সিনেমার কাজ শুরুর খবরে ফিরেছিলেন শিরোনামে, কিন্তু আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন এক ট্র্যাজেডির কারণে। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ বিমান ছিনতাই চেষ্টায় নিহত হন শিমলার সাবেক স্বামী পলাশ আহমেদ। সারা দেশে তখন এ নিয়ে হইচই হলে শিমলা সিনেমার নায়িকা থেকে বাস্তব জীবনের ট্র্যাজেডির মুখপাত্রে পরিণত হন।
এরপর কেটে যায় অনেকটা সময়। শিমলা হয়ে ওঠেন স্মৃতির নাম। কোথায় আছেন, কী করছেন তা নিয়ে চলত কানাঘুষা। ঢালিউডের রুপালি জগৎ তখন ব্যস্ত নতুন মুখের খোঁজে, পুরনো তারকারা যেন হারিয়ে যেতে বসেছিলেন।

কিন্তু সময়ের চাকা আবারও ঘুরল। সম্প্রতি এক জাঁকজমকপূর্ণ অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে লাল গালিচায় পা রেখেই শিমলা জানিয়ে দিলেন— তিনি ফিরেছেন। চোখেমুখে সেই চেনা আত্মবিশ্বাস, ঠোঁটে ঘোষণা, “হ্যাঁ, আবার নিয়মিত কাজ করব। দর্শকদের ভালো কিছু উপহার দিতে চাই।”যেন বলে দিলেন, এই ফেরা শুধু উপস্থিতির জন্য নয়, আবার আলো ছড়ানোর জন্য।

দর্শকমনে প্রশ্ন উঠেছে—শিমলা কি ফিরবেন সেই পুরনো ‘ম্যাডাম ফুলি’ রূপেই? নাকি এই প্রত্যাবর্তন হবে নতুন কাহিনির, নতুন রূপের? নিজেই স্পষ্ট করেছেন শিমলা, তিনি বলেন, “নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। এখন কাজ করার জন্য প্রস্তুত। আবার চলচ্চিত্রে নিয়মিত হতে চাই। ভালো গল্প আর বাজেট পেলে কাজ করবো। এরই মধ্যে কয়েকটি কাজের কথা হয়েছে। ব্যাটে-বলে মিললে কাজগুলো করবো।”

সময়ের প্রেক্ষাপটও যেন তার এই ফেরার পক্ষে কথা বলছে। ঢালিউডে এখন অভিজ্ঞ ও পরিণত অভিনেত্রীদের সংকট স্পষ্ট। তাই শিমলার মতো এক সময়ের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত তারকার কামব্যাক সিনেমাপ্রেমীদের জন্য নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। আর যখন এই প্রত্যাবর্তন ঘটছে তার নিজের কথায়, তখন মনে হতেই পারে—‘ম্যাডাম ফুলি’ ফিরেছেন ফুল ফর্মে, নতুন দিনের আলোয়।

এখন শুধু অপেক্ষা রুপালি পর্দায় সেই আলো ছড়িয়ে পড়ার। শিমলার এই নতুন যাত্রা কতটা জাঁকজমকপূর্ণ হয়, তা সময়ই বলে দেবে।

ঢাকা/রাহাত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য সময় র

এছাড়াও পড়ুন:

বৃত্তি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীরা

এবার পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে না কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকার থেকে পাওয়া বইয়ে তারা পড়াশোনা করলেও প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষা থেকে তাদের দূরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করার ষড়যন্ত্র দেখছেন শিক্ষকেরা।

নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক পরিপত্রে এবার বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী মহানগর শাখা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রিপন বলেন, “সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী এবার বৃত্তি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। অথচ ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও ২০২২ সালের বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই শিক্ষার্থীরা একই বই পড়াশোনা করে। বই সরকারই দেয়। অথচ এবার তাদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। বৃত্তি শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি একটি শিক্ষার্থীর আত্মমর্যাদা ও অনুপ্রেরণার প্রতীক। কোনো শিশু শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের ধরন ভিন্ন হওয়ার কারণে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলে তা মানসিক আঘাত ও হতাশার সৃষ্টি করবে। এটি জাতীয় শিক্ষানীতির সাম্যের নীতির পরিপন্থী। আমি অবিলম্বে পরিপত্রটি বাতিল করে সবাইকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘‘২০২৩ ও ২০২৪ সালে বৃত্তি পরীক্ষা হয়নি। তার আগের পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিয়ে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি অর্জনের হার প্রায় শতভাগ। এই কারণে এবার তাদের পরীক্ষায় সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটি পক্ষ। কারণ, কিন্ডারগার্টেনে ভাল পড়াশোনা হয় বলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী টানতে কিন্ডারগার্টেনকে বাদ দিয়ে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সুযোগ দেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নানা বিষয়ে আন্দোলন লেগেই আছে। আমার মনে হয়, এটাও একটা ষড়যন্ত্রের অংশ। কারণ, কিন্ডারগার্টেনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাদের বাদ দিলে আন্দোলন হতে পারে। সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে আমলাদের একটি গোষ্ঠী এ ষড়যন্ত্র করেছে বলে আমাদের ধারণা।’’

সংবাদ সম্মেলনের পর বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে সব শিক্ষার্থীকেই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আর আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও এবং ‘মার্চ ফর ঢাকা’সহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শাহজাহান আলী, রাজশাহী মহানগর সভাপতি রফিকুল আলম, সহ-সভাপতি ড. ইব্রাহিম হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সাংগাঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, অর্থ সম্পাদক এম এম রহমান, শিক্ষা সম্পাদক মনোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।

ঢাকা/কেয়া/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ