মানিকগঞ্জে এক ঘণ্টার ব্যবধানে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সন্ত্রাসীরা। রবিবার (১৬ নভেম্বর) রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও সাটুরিয়ার গোলড়া এলাকায় এসব বিস্ফোরণ ঘটে। এসব ঘটনায় সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের পরিচয় জানা যায়নি।

বিস্ফোরণে দুই রিকশাচালক আহত হয়েছেন। তারা হলেন- মানিকগঞ্জ পৌরসভার বান্দুটিয়া এলাকার সাগর এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মো.

নবীর হোসেন। পুলিশ ও স্থানীয়রা তাদের মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

আরো পড়ুন:

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন

ঢাবির টিএসসিতে ককটেল বিস্ফোরণ, আহত ১

স্থানীয়রা জানান, রাত ১০টার দিকে বাসস্ট্যান্ডের অদম্য ৭১ ভাস্কর্যের সামনে একসঙ্গে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। এর ২০ মিনিট পর ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে আরেকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে সাটুরিয়ার গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘটে চতুর্থ বিস্ফোরণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোলড়া বাসস্ট্যান্ডের এক ফার্মেসি ব্যবসায়ী জানান, তার দোকানের সামনে একটি কালো মাইক্রোবাসে আসা লোকজন ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত ঢাকার দিকে পালিয়ে যায়।

ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে এক রিকশাচালক দাবি করেন, হাসপাতালের ছাদ থেকে ককটেলটি নিক্ষেপ করা হয়। আবার অদম্য ৭১ ভাস্কর্যের সামনে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্রুতগতির একটি মোটরসাইকেল থেকে প্রথম দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তবে পুলিশের ধারণা, ফুটওভার ব্রিজের ওপর থেকে প্রথম দুইটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল আল মামুন বলেন, “ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে পুলিশ ও গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছে। বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”

ঢাকা/চন্দন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত আটক ককট ল ব স ফ র ম ন কগঞ জ র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

মারিয়া মান্দার লেখা: লড়ি মাঝমাঠে, লড়ি জীবনের মাঠেও

ধোবাউড়ার মন্দিরগোনা গ্রামে জন্ম আমার। আমি গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে। গারোরা এমনিতেই অনগ্রসর। তবে গারো হিসেবে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারে বাধা আসেনি। কেউ বলেনি যে ফুটবল খেলো না। আমার সম্প্রদায় নিরুৎসাহিত করেনি কখনো। তবে মেয়ে হিসেবে আমরা যে গ্রামাঞ্চলে খেলাধুলা করেছি, তাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

বলা হতো, গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে! তা-ও আবার হাফপ্যান্ট পরে! এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। রক্ষণশীল সমাজ থেকে নিষেধ করা হতো ফুটবল খেলতে। বাধাটা পেয়েছি আদতে এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে।

অনেকে আমার মাকে বলতেন, ‘মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন, এটা ভালো না।’ অভিভাবকেরা মেয়েদের নিষেধ করতেন ফুটবল খেলতে। বলা হতো, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারবে না।

বাধা পেরিয়ে

তারপরও কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোচ মফিজ উদ্দিন স্যার থেমে থাকেননি। সঙ্গে ছিলেন মিনতি রানী শীল ম্যাডাম। সপ্তাহে এক দিন-দুই দিন অভিভাবকদের সভা ডাকতেন; বোঝাতেন, কেন মেয়েদের খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের নেতৃত্বে আমরা ছোটবেলা থেকেই ফুটবল-পাগল হয়ে উঠেছিলাম, বাধা দিলেও অনেকে লুকিয়ে খেলত। তবে খেলার জগতে আসতে পরিবার থেকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বীরেন্দ্র মারাক মারা যান। তাঁর কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ঘরে তাঁর কোনো ছবি নেই, চেহারাটাও মনে করতে পারি না। তাই বাবার স্নেহ কাকে বলে, তা ঠিক জানি না। বাবার মৃত্যুর পর আমাদের চার ভাইবোনকে একাই বড় করেছেন মা—এনতা মান্দা।

গারোরা ধান কাটা, ধন বোনার কাজই বেশি করেন। আমার মা-ও সেটাই করতেন। আমাদের লালন–পালনের জন্য প্রতিদিন যে পরিশ্রম তিনি করেছেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ। ধান কাটার কাজ মানে দৈনিক মজুরি, আমাদের নিজের জমি ছিল না, অন্যের জমিতে কাজ করতেন মা। দিনে পেতেন মাত্র ২০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চলত না। ঋণ করতে হতো। ছোটবেলা থেকে মা ঘামে, চোখের জলে এগিয়ে নিয়েছেন আমাদের। তাঁর সেই পরিশ্রম আর ত্যাগের মধ্যেই আমার শৈশব কেটেছে।

ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে কিশোরী মারিয়া মান্দার অনুশীলন

সম্পর্কিত নিবন্ধ