ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহত বেড়ে দাঁড়াল ৩১
Published: 8th, May 2025 GMT
পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। এতে আহত হয়েছেন আরও ৫৭ জন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিবিসির
‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার পর পাকিস্তানের পাঞ্জাব ও আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন স্থাপনায় এই হামলা চালায় ভারত।
এর আগে হামলায় ২৬ জন নিহত ও আহত অনেকের হওয়ার খবর জানান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ১৫ ভারতীয় নাগরিকের প্রাণহানি ও বেশ কয়েকজন আহত হন বলে জানায় ভারত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, তারা এসব হামলা চালিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তায়েবা (এলইটি) ও জইশ-ই-মোহাম্মদের (জেইএম) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা বলেছে, পাঞ্জাবের ভাওয়ালপুরে জেইএমের ঘাঁটি এবং একই প্রদেশের মুরিদকে শহরে এলইটি’র আস্তানাসহ নয়টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা।
অবশ্য পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর তথ্যমতে, পাকিস্তানের ছয় স্থান—পাঞ্জাবের শিয়ালকোট, ভাওয়ালপুর ও মুরিদকে এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফারাবাদ, বাগ ও কোটলিতে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।
এদিকে ভারতের হামলার পর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করা হয়েছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানান, এর মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি সু-৩০ ও অন্যটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান। সু-৩০ ও মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান সোভিয়েত আমলে তৈরি।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী জানায়, দেশটির মাটিতে আক্রমণে অংশ নেওয়ার পরই ওই পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার মাধ্যমে ভারতের হামলার জবাব দিয়েছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তবে পাকিস্তানের এ দাবির বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি।
অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতেই নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে (এলওসি) পাকিস্তানি সেনারা গোলাবর্ষণ করেছে। এতে ১৩ ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এখন তা পাল্টাপাল্টি হামলায় রূপ নিয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের হামলার পর ব্যাহত হয় বিমান চলাচল
কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থিত আল–উদেইদ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর পর মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ গতকাল সোমবার সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। ফলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা উড়ান বাতিল ও বিমানের গন্তব্য পরিবর্তন করে। এ নিয়ে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।
এর আগে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে গতকাল ইরান দোহায় মার্কিন ঘাঁটি লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এতে কেউ হতাহত হয়েছেন, এমন খবর পাওয়া যায়নি। খবর রয়টার্স
বিষয়টি হলো, ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনার প্রভাব মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও পড়তে শুরু করেছে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল-ইরানের হামলা পাল্টা-হামলা শুরু হওয়ার পর থেকেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পথ বন্ধ। গতকাল এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, তারা ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চলগামী সব উড়ান স্থগিত করেছে। এখন তাদের মধ্যপ্রাচ্য এড়িয়ে সংকীর্ণ বিকল্প পথে চলাচল করতে হচ্ছে।
শেষমেশ ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এখন বিভিন্ন দেশ আকাশসীমা খুলে দিচ্ছে। কিন্তু মাঝখানে এই ১২ দিনের যুদ্ধে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোকে বেশ নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে, বিশেষ করে শেষ দুই দিনে।
বাহরাইন ও কুয়েত আকাশসীমা বন্ধ করার কিছুক্ষণ পর আবার খুলে দেয়। দুবাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বল্প সময়ের বিরতির পর কার্যক্রম আবার চালু হয়েছে, যদিও উড়ান বাতিল ও বিলম্বের আশঙ্কা আছে। কাতারও সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ রেখেছিল। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের কারণে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বিমান চলাচল কেন্দ্র দুবাই ও দোহার সঙ্গে সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ পথগুলো ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ইরান ও ইরাক থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত যে আকাশপথ সাধারণত বিমানে পরিপূর্ণ থাকে, সেটি এখন প্রায় জনশূন্য, সাধারণ যাত্রীবাহী বিমানের দেখা নেই।
গতকাল এয়ার ইন্ডিয়া জানায়, তারা শুধু মধ্যপ্রাচ্যের উড়ান নয়, বরং ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলগামী সব উড়ান বন্ধ করে দিয়েছে। আকাশে উড়ন্ত বিমানগুলোকে নিজ নিজ উড্ডয়ন কেন্দ্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে; সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া আকাশপথ থেকেও তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে পড়েন ব্যবসায়ী মিরেত পাদোভানি। গতকাল রাতে কাতার এয়ারওয়েজের বিমানে তাঁর থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি দেখে তিনি যাত্রা বাতিল করেন। আজ মঙ্গলবার সকালে দুবাই ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন তিনি।
‘ভয়ংকর অভিজ্ঞতা’, বলেন পাদোভানি। তিনি বলেন, ‘সবকিছু এত দ্রুত ঘটে গেল, আমি প্রথম শ্রেণির লাউঞ্জে থাকা কয়েকজনের কাছ থেকেই শুনি যে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার আগেই তা জানতে পারি।’
বিমান পরিবহন বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান সিরিয়াম জানিয়েছে, গতকাল দোহাগামী প্রায় দুই ডজন উড়ান (বেশির ভাগই কাতার এয়ারওয়েজের) পথ পরিবর্তন করে। আকাশসীমা বন্ধ থাকার কারণে দুবাইগামী কয়েকটি বিমানও ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
গতকাল কুয়েত এয়ারওয়েজের সব উড়ান স্থগিত করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইতিহাদ এয়ারওয়েজ গতকাল ও আজ পথ পরিবর্তন করে উড়ান পরিচালনা করেছে।
স্পেনের বিমান সংস্থা আইবেরিয়া আজ দোহায় উড়ান চালুর পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু সর্বশেষ পরিস্থিতির পর তারা সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের আকাশসীমা যুদ্ধের কারণে আগে থেকেই অধিকাংশ বিমান সংস্থার জন্য বন্ধ। ফলে ইউরোপ ও এশিয়ার উড়ানের জন্য মধ্যপ্রাচ্য গুরুত্বপূর্ণ করিডর হয়ে উঠেছে। গত ১০ দিনের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলার পর অনেক বিমানই এখন কাস্পিয়ান সাগর হয়ে উত্তর দিক দিয়ে বা মিসর-সৌদি আরব ঘুরে দক্ষিণ দিক দিয়ে যাতায়াত করছে।
বিমান চলাচল খাতের ঝুঁকি বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ওসপেরি ফ্লাইট সলিউশনস জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করে ইরান বা তার মিত্রদের ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় বিমান সংস্থাগুলো দোহা, দুবাইসহ পুরো অঞ্চলটি এড়িয়ে চলছে।
দিনের শুরুতে বিমান সংস্থাগুলো ভাবছিল, কত দিন উড়ান স্থগিত রাখতে হবে। প্রথম দীর্ঘমেয়াদি স্থগিতাদেশের ঘোষণা দেয় ফিনএয়ার, তারা ৩০ জুন পর্যন্ত দোহাগামী উড়ান বাতিল করেছে। শীর্ষস্থানীয় এশীয় বিমান সংস্থা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ঘোষণা দিয়েছে, তারা আজ পর্যন্ত দুবাই ফ্লাইট বাতিল রাখবে।
এয়ার ফ্রান্স কেএলএম, আইবেরিয়া, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও কাজাখস্তানের এয়ার আস্তানা গত রোববার ও গতকাল দোহা বা দুবাই—যেকোনো এক বা উভয় গন্তব্যে উড়ান বাতিল করে। এয়ার ফ্রান্স রিয়াদগামী উড়ানও বাতিল করে জানায়, বৈরুত (লেবানন) থেকে যাওয়া-আসার উড়ান আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র হামলার আগেই আমেরিকান এয়ারলাইনস কাতার ফ্লাইট বন্ধ করে। ইউনাইটেড এয়ারলাইনস ও এয়ার কানাডা দুবাই ফ্লাইট স্থগিত রেখেছে, যা এখনো চালু হয়নি।
বাড়ছে সংঘাত, বাড়ছে বিপদ
সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের বিস্তৃতির কারণে বাণিজ্যিক বিমান চলাচলে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। আকাশপথে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঝুঁকি থেকে শুরু করে দুর্ঘটনাবশত যাত্রীবাহী বিমান গুলি করে ফেলার আশঙ্কাও বাড়ছে।
এদিকে রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত অঞ্চলে জিপিএস বিভ্রাটও নতুন হুমকি হয়ে উঠছে। কোথাও কোথাও ভূভিত্তিক জিপিএস যন্ত্র ভুয়া অবস্থান দেখিয়ে বিমানকে ভুল পথে পাঠিয়ে দিচ্ছে, যাকে বলে জিপিএস স্পুফিং, এটি নতুন সংকট হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এসকেএআই জিপিএস বিভ্রাট পর্যবেক্ষণ করে। তারা জানিয়েছে, রোববার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পারস্য উপসাগরে ১৫০টির বেশি বাণিজ্যিক বিমানে স্পুফিং শনাক্ত হয়েছে।
আকাশপথ খুলে দিচ্ছে দেশগুলো
যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর কুয়েত ও বাহরাইন আকাশসীমা খুলে দিয়েছে। দেশ দুটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আকাশসীমা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। খবর বিবিসির।
কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানি হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করেছিল। সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের বিমানবন্দরগুলোর কার্যক্রম পুরোপুরি চালু রয়েছে।
এর আগে কাতারের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, আকাশপথে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের আল–উদেইদ সামরিক ঘাঁটিতে ইরানি হামলার পর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেশটির আকাশসীমা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল।