তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের প্রতি দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিলের আহ্বান
Published: 8th, May 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী ত্বকী হত্যা মামলার তদন্তের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আবার শুরু করে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১১। তাদের প্রতি দ্রুত আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪৬ মাস উপলক্ষে আয়োজিত মোমশিখা প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি এ আহ্বান জানান। নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, সিপিবির শহর সভাপতি আবদুল হাই, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর, সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের সভাপতি শাহেদ কায়েস, বাসদের জেলা সংগঠক এস এম কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
রফিউর রাব্বি তাঁর বক্তব্যে বলেন, শেখ হাসিনার দুর্বৃত্ত লালনের প্রকৃষ্ট উদাহরণ ত্বকী হত্যা। শামীম ওসমানের মতো দুর্বৃত্ত, গডফাদারদের রক্ষা করতে সাড়ে ১১ বছর তিনি ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন। নারায়ণগঞ্জে খুন, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজের মাধ্যমে মাফিয়াদের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তারা মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। আজ তারা পালিয়ে গেছে, কিন্তু আবার নতুন দখলদার তৈরি হচ্ছে। শামীম ওসমানের সন্ত্রাসীরা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে ঢুকে যাচ্ছে। ওসমান পরিবার ও তাদের ক্যাডারদের দখলে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নতুন দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে। নতুন নতুন চাঁদাবাজ, গডফাদার তৈরি হচ্ছে। সরকারকে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রফিউর রাব্বি বলেন, ৫ আগস্টের পর তদন্তকারী সংস্থা র্যাব ত্বকী হত্যার বন্ধ থাকা তদন্তের কাজ আবার শুরু করেছে। কিন্তু সময় অনেক হয়েছে। অতি দ্রুত অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিতে হবে। হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, ক্যাডার শাহ নিজামসহ হত্যায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কেউ যেন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেড়িয়ে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক বিচার নিশ্চিত করে তাঁদের দেশে এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
শামীম ওসমান ত্বকী হত্যার সঙ্গে জড়িত বলেই ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন মাহবুবুর রহমান। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘এখন কেন বিচার আটকে আছে? বাধা কোথায়?’ তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি অভিযোগপত্র দিতে না পারেন, তবে পদত্যাগ করুন। ত্বকী হত্যার বিচার করতেই হবে। আমরা বিচার চাইব, তা আদায় করে নেব।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজের দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু তিন মাস পর শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিলে বিচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সেই অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ম ম ওসম ন ন র য়ণগঞ জ ওসম ন র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে দুই খুন : সাবেক কাউন্সিলরকে ‘হুকুমের আসামি’ করে ৪৩ জনের নামে হত্যা মামলা
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুটি পক্ষের সংঘর্ষে দুটি খুনের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। রাজমিস্ত্রি আবদুল কুদ্দুস (৭০) হত্যার ঘটনায় তাঁর মেয়ে রোখসানা আক্তার গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মামলায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হান্নান সরকারকে ‘হুকুমের আসামি’ করা হয়েছে। মামলায় বাবু ওরফে জুয়াড়ি বাবুসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে দুজন খুন২২ জুন ২০২৫বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আবদুল কুদ্দুস হত্যা মামলায় শাকিল ও জজ মিয়া নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে, একই সংঘর্ষে নিহত মেহেদী হাসান হত্যার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
আবদুল কুদ্দুসের জামাতা মিনার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার শ্বশুর আবদুল কুদ্দুস নিরীহ মানুষ ছিলেন। তিনি কখনো ঝগড়া-ঝামেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাঁকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ এ ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
আরও পড়ুনএলাকায় থমথমে অবস্থা, আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ১৮ ঘণ্টা আগেগত শনিবার রাত ৯টার দিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও অটোরিকশাস্ট্যান্ড দখল নিয়ে বিএনপির হান্নান সরকার ও আবুল কাউসার–সমর্থিত দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে রাজমিস্ত্রি আবদুল কুদ্দুসকে কুপিয়ে হত্যা করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। এই ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেহেদী হাসানকেও পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা হান্নান সরকার–সমর্থিত বাবু-মেহেদী এবং মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউসার–সমর্থিত রনি-জাফর পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ চলছিল। এই বিরোধের জেরেই ওই দুই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে এলাকাবাসীর ভাষ্য।