রিশাদ হোসেন ও নাহিদ রানা প্রথমবার দেশের বাইরে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলতে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। পাকিস্তান সুপার লিগে রিশাদের অভিষেক হলেও নাহিদকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল।

পিএসএলের শুরু থেকে থাকায় রিশাদ ৫টি ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন লাহোর কালান্দার্সের জার্সিতে। নাহিদ সিলেটে টেস্ট খেলে মাঝপথে যোগ দেন। খেলার সুযোগ পাননি। তার দল ছিল পেশোয়ার জালমি।

তবে দুজনকেই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হয়েছে দেশে। পাকিস্তান ও ভারতের দ্বন্দ্বে পিএসএল স্থগিত হয়েছে। যুদ্ধের মঞ্চে শেষ কয়েকটি দিন কাটিয়েছেন তারা। অজানা আতঙ্কে ঘিরে রেখেছিল চারপাশ। স্টেডিয়ামেও হামলা হওয়ায় বড় কিছুর আশঙ্কাতেও ছিলেন। অবশেষে আজ স্বস্তি নিয়ে ফিরতে পেরেছেন দেশে।

সেই স্বস্তি কতটা রিশাদের কণ্ঠে আঁচ পাওয়া গেল, ‘‘ভালোয় ভালোয় ফিরে আসছে। ভালো লাগতেছে আলহামদুলিল্লাহ।’’ নাহিদের কথা বলতে গিয়ে রিশাদ বলেছেন, ‘‘স্বাভাবিক নাহিদ রানা একটু ঘাবড়ে গেছে, এবং একটু চুপচাপ ছিল।আমি চেষ্টা করছি কীভাবে…ওকে বলছি টেনশনের কিছু নাই, আমরা দুজন আছি। আল্লাহ তো আছেই।’’

ইসলামাবাদ থেকে দুবাই হয়ে ঢাকা ফেরেন রিশাদ ও নাহিদ। তাদের বিমান ইসলামাবাদ ছাড়ার ২০ মিনিট পর সেখানে একটি মিশাইল পড়েছিল। নিজেদের কোনো ক্ষতি না হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন এই লেগ স্পিনার, ‘‘আমাদের ফ্লাইট টেক অফ করার ২০ মিনিট পর এয়ারপোর্টে একটা মিশাইল পড়ছে। পড়ার পর আমরা একটু শকড হয়ে গেছি যে হয়তো আল্লাহ ভালো চেয়েছেন দেখে আমরা দেশে ফিরে আসছি। স্বাভাবিক এরকম হলে একটু ভয় কাজ করবে। স্বাভাবিক সবাই আতঙ্কিত হবে।সবার কাছে কৃতজ্ঞ সবাই দোয়া করেছে।’’

শুরুর পরিস্থিতি জানাতে গিয়ে রিশাদ বলেছেন, ‘‘আসলে প্রথম যে পরিস্থিতি আমরা দেখছি এবং শুনতে পেরেছি, শোনার পর একটু আতঙ্ক তো হয়েছিলাম সবাই, ভয় কাজ করছিল। শোনার পর সবাই সাপোর্ট করছিল দেশ থেকেও, টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকেও। বিসিবি থেকেও অনেক খোঁজখবর নিয়েছে সবসময়। পিসিবি ও পিএসএল টিমও খোঁজ নিয়েছে আমরা ভালো আছে কি না।’’

পরিবারের কথা বলতে গিয়ে রিশাদ বলেছেন, ‘‘পরিবার তো সবসময় টেনশন করে বাইরে থাকলে। নরমালি যখন শুনবে আশেপাশে এরকম যুদ্ধ হচ্ছে, টেনশন করবে। চেষ্টা করছি যত ভালো রাখার জন্য, ভালো ভালো পজেটিভ কথা বলার জন্য যেন টেনশন না করে।’’

পিএসএলে অংশ নেওয়া ডেভিড ওয়ার্নার, রাইলি রুশো, উলিয়ামসনরা একই ফ্লাইটে দুবাই এসেছেন। পাকিস্তানে থাকাকালীন প্রত্যেকে একসঙ্গে ছিলেন। গল্প করে কাটিয়েছেন সময়। মানসিকভাবে চাঙা রাখতে একে অপরকে সাহায্য করেছেন। 

ঢাকা/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প এসএল ট নশন

এছাড়াও পড়ুন:

চিরকুট: ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’

রাজশাহীর পবার একটি ঘরে শুক্রবার সকালে চার মরদেহের সঙ্গে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যার শব্দ-বাক্যে জীবন-সংসারে অভাব ও ঋণের চরম অভিঘাতের কথা লেখা রয়েছে। তার মধ্যে দুটি বাক্য এমন- “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না।”

দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা একটি পরিবারের কর্তা ব্যক্তির বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে স্ত্রী, তারপর ছেলে-মেয়ের প্রাণ নিয়ে নিজেও শেষ হয়ে গেছেন। তবে এই চিরকুট যে তারই লেখা, সেটি তদন্তের আগে নির্ধারণ করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য পুলিশের।

পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড়ে শুক্রবার সকাল এল চারজনের জীবনাবসনের শোকের ছায়া নিয়ে। বৃহস্পতিবার রাত দ্বিপ্রহরে একই ঘরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

আরো পড়ুন:

পদ্মায় গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই ছাত্রের লাশ উদ্ধার

কুমিল্লায় মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার

৩৫ বছর বয়সি মিনারুল ইসলামের সংসার ছিল স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলাকে নিয়ে। তারা এখন বামনশিকড়ের অভাবে-ঋণে হারিয়ে যাওয়া একটি শোকগাথা।

মতিহার থানার ওসি আবদুল মালেকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিনারুলের ঘরে তাদের লাশের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে বেশ কিছু কথা লেখা আছে। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

দুই পাতার চিরকুটের ছবি রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে এসেছে, যেখানে অভাব-ঋণ, বাবা-ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া কষ্টের কথা লেখা রয়েছে।  

চিরকুটের এক পাতায় লেখা আছে, “আমি মিনারুল নিচের যে সব লেখা লেখবো। সব আমার নিজের কথা লিখে যাচ্ছি। কারণ, আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাবো। এই মৃত্যুর জন্য কারো কোনো দোষ নেই। আমি মিনারুল প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিমকে (ছেলে) মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে (মেয়ে) মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।”

চিরকুটে আরো লেখা আছে, “আমাদের চারজনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার স্ত্রী-সন্তান না দেখে এবং বাপের বড় ছেলে যেন জানাজায় না আসে। আমাদের চার জনকে কাফন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা যেন টাকা না দেয়। এটা আমার কসম।”

চিরকুটের দ্বিতীয় পাতায় লেখা আছে, “আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম, কারণ আমি একা যদি মরে যাই তাহলে, আমার স্ত্রী-সন্তানরা কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না।”

এরপরের বাক্যগুলো হুবহু এমন, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমারা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভাল হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্যে কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য অনেক মানুষের কাছে ছোট হয়েছে, আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন।”

শেষে লেখা, “ধন্যবাদ।”

ঢাকা/কেয়া/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ