সড়ক ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিভিন্ন এলাকার সেতুগুলো। বিপত্তি না ঘটা পর্যন্ত যেন এসবের তদারকি করা মানা। এতে করে স্থানীয়দের কতটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তার উদাহরণ ছাতক উপজেলার নোয়ারাইয়ের দুর্ভোগ।
সম্প্রতি নোয়ারাই ভায়া জোড়াপানি-নরসিংপুর সড়কের মৌলা খালের ওপর অবস্থিত সেতুটি হঠাৎ ধসে পড়েছে; যার ফলে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম পরস্পরের সঙ্গে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে দুটি উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, এসব স্থাপনা দুর্বল হয়ে এলেও নজর দেয় না কর্তৃপক্ষ। কাজ করার সময় করে অনিয়ম। পরে ডেকেও পাওয়া যায় না। একটি দুর্ঘটনা ঘটার পর সবাই খুব তৎপর। আরও অন্তত দুই থেকে তিনটি সেতু আছে এই সড়কে; যার মধ্যে একটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সময় থাকতে সংস্কার করা হলে বড় সমস্যা হয় না।
জনদুর্ভোগ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে মৌলা খালে অস্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। দুর্ঘটনার আগে কেন এসব নিয়ে কাজ করা হয় না, সে ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে।
জানা যায়, ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ও ইসলামপুর ইউনিয়ন এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। দুটি উপজেলার বালু-পাথরমহালসহ ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এই সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। হঠাৎ সেতু ভাঙার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটছে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
১০ জুন রাতে হঠাৎ করে সেতুর একাংশ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই সড়কে স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। দুটি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পড়েছেন ব্যাপক দুর্ভোগে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, কৃষক ও সাধারণ মানুষ যাতায়াতে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা। নোয়ারাই ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুর রহমান, ছাতক উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কয়েছ আহমেদসহ বেশ কয়েকজন নেতা ও ব্যবসায়ী সেতু ভেঙে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে না পেরে গত এক সপ্তাহ ধরে ছাতক শহরে অবস্থান করছেন।
ছাতক-দোয়ারাবাজার নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ছাতকের উত্তরাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় কেন্দ্র। এই সেতু ভেঙে যাওয়ায় কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। 
ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নোয়ারাই ইউনিয়নের জোড়াপানি-নরসিংপুর সড়কের মৌলা গ্রামের ধসে পড়া ব্রিজটি বৃহস্পতিবার পরিদর্শন করেছেন। সাময়িক সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে কাজ চলছে।
এদিকে, একই সড়কের আরও কয়েকটি সেতু নিয়ে কথা বলেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, উপজেলার নোয়ারাই ভায়া জোড়াপানি-নরসিংপুর সড়কে বর্তমানে রওয়াইল বিলসংলগ্ন জোড়াপানি পয়েন্টে অবস্থিত ব্রিজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ব্রিজটি দু’পাশের অ্যাপ্রোচ দুর্বল অবস্থায় থাকায় এটিও যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। এ ছাড়া এই সড়কে নরসিংপুর এলাকায় আরও দু-একটি ব্রিজ নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাবাবাসী।
জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, জোড়াপানি পয়েন্টের এই ব্রিজটি ১৯৯৬ সালে পুনর্নির্মিত হওয়ার পর বর্তমান অবস্থা ভালো না। ঝুঁকি নিয়েই এখানকার যানবাহনগুলো এ পথ ধরে চলাচল করছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র ন ব যবস য় এই সড়ক ব র জট অবস থ সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিচ্ছেন তো

ইসলামে সুস্থতার লক্ষ্য হলো আল্লাহর ইবাদতের পথে অবিচল থাকা। যদি কোনো বাধা এই পথে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, তবে তা দূর করা প্রয়োজন। ইসলাম বলে, মানসিক অসুস্থতা শুধু ক্লিনিক্যাল লক্ষণে সীমাবদ্ধ নয়।

ইসলাম চরিত্রের ত্রুটি, যেমন অহংকার (কিবর), হিংসা (হাসাদ) বা দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা (হুব্বুদ দুনিয়া), যা ক্লিনিক্যাল মাত্রায় না পৌঁছালেও আধ্যাত্মিক অসুস্থতা হিসেবে বিবেচনা করে।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১)

কীভাবে চিকিৎসা নেবেন

ইসলামি ঐতিহ্যে আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) এবং আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে কাজ করা আধ্যাত্মিক স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। এই প্রশিক্ষণ আমাদের দৈনন্দিন চাপ মোকাবিলার জন্য মানসিক ও আধ্যাত্মিক কৌশল শেখায়।

যার হৃদয়ে এক পরমাণু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯১আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫

যখন কেউ ক্লিনিক্যাল মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন, তখন প্রথমে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কার্যকারিতা পুনরুদ্ধার করা হয়। এরপর আধ্যাত্মিক ত্রুটিগুলোর চিকিৎসা শুরু হয়, যাতে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি (মারদাতিল্লাহ) অর্জন করতে পারে।

এ জন্য ভালো হলো, কোনো আল্লাহভীরু মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআন বলছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যপন্থীদের সান্নিধ্য গ্রহণ করো’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৯)।

শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

চারটি অভ্যাস আমাদের আত্মাকে পুষ্টি দেয় এবং ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে:

১. চিন্তামূলক অভ্যাস: নামাজের আগে বা পরে চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন। প্রকৃতির মধ্যে বসে ‘আল্লাহ’ নাম জপ করুন, আল্লাহর প্রতি নিমগ্ন ধ্যান করুন; যাকে ইসলামে মুরাকাবা। এ ছাড়া বই পড়া (বিবলিওথেরাপি) মানসিক চাপ কমায় এবং আত্মসচেতনতা বাড়ায়। যেমন: গাজার মুসলিমদের দুঃখের কথা ভেবে নিজের দুঃখকে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে।

২. সৃজনশীল অভ্যাস: ধাঁধা, আসবাব তৈরি বা অঙ্কনের মতো সৃজনশীল উপকারী কাজ মননশীলতা বাড়ায়। এটি ইসলামের ইহসান (শ্রেষ্ঠত্ব) ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উদ্দেশ্য ও নিয়তের সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত করে। এই কাজগুলো মানসিক শান্তি দেয় এবং বার্নআউট প্রতিরোধ করে।

আরও পড়ুননামাজে দাঁড়িয়ে নানা চিন্তার আনাগোনা২২ জানুয়ারি ২০২৩শারীরিক স্বাস্থ্যের মতো, মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্যও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য। আধুনিক সমাজের ক্রমাগত উৎপাদনশীলতার চাপ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের জীবনে বিরতি (পজ) আনতে হবে।

৩. শারীরিক অভ্যাস: ব্যায়াম, বাগান করা বা তিরন্দাজির মতো কার্যকলাপ আত্মার প্রশিক্ষণ (রিয়াদাহ আন-নাফস) দেয়। নবীজি (সা.) সাঁতার, ঘোড়দৌড়, এবং তিরন্দাজিকে উৎসাহিত করেছেন, কারণ এগুলো শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বাড়ায়। প্রকৃতিতে হাঁটা আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা জাগায় এবং আধ্যাত্মিক সংযোগ গড়ে।

৪. আধ্যাত্মিক অভ্যাস: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আবশ্যক। এরপর রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ), সোমবার ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা রাখা এবং কোরআন তিলাওয়াতের মতো অভ্যাস বাড়ানো যেতে পারে। প্রতিদিন কয়েকটি পয়সা দিয়ে হলেও সামান্য সাদাকা আত্মার পুষ্টি জোগায়। এই অভ্যাসগুলো আমাদের নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য বাড়ায়।

প্রতিবেশীদের ভূমিকা

মহানবী (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা শিখি, নির্জনতা নয়, বরং মানুষের সঙ্গে সংযোগ মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তিনি একজন ব্যক্তির দুঃখ লক্ষ করে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন এবং দোয়া শিখিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন।

আমাদেরও পরিবার, বন্ধু এবং প্রতিবেশীদের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। জুমার নামাজ বা জামাতে নামাজে আমরা একে অপরের খোঁজ নিতে পারি। যদি কেউ দুর্বল মনে হয়, তবে তাদের সমর্থন দিন বা বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান। এই সহানুভূতি ইসলামের শিক্ষার মূল।

 সূত্র: মুসলিম ডটএসজি

আরও পড়ুনহিজরি কালপঞ্জি: ইসলামি পরিচয়ের ধারণা২৩ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ