সংস্কার নেই সেতুর, ধসে না পড়লে নজর দেওয়া মানা
Published: 21st, June 2025 GMT
সড়ক ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিভিন্ন এলাকার সেতুগুলো। বিপত্তি না ঘটা পর্যন্ত যেন এসবের তদারকি করা মানা। এতে করে স্থানীয়দের কতটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তার উদাহরণ ছাতক উপজেলার নোয়ারাইয়ের দুর্ভোগ।
সম্প্রতি নোয়ারাই ভায়া জোড়াপানি-নরসিংপুর সড়কের মৌলা খালের ওপর অবস্থিত সেতুটি হঠাৎ ধসে পড়েছে; যার ফলে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম পরস্পরের সঙ্গে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছে দুটি উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, এসব স্থাপনা দুর্বল হয়ে এলেও নজর দেয় না কর্তৃপক্ষ। কাজ করার সময় করে অনিয়ম। পরে ডেকেও পাওয়া যায় না। একটি দুর্ঘটনা ঘটার পর সবাই খুব তৎপর। আরও অন্তত দুই থেকে তিনটি সেতু আছে এই সড়কে; যার মধ্যে একটি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সময় থাকতে সংস্কার করা হলে বড় সমস্যা হয় না।
জনদুর্ভোগ বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে মৌলা খালে অস্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। দুর্ঘটনার আগে কেন এসব নিয়ে কাজ করা হয় না, সে ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে।
জানা যায়, ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ও ইসলামপুর ইউনিয়ন এবং দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষ নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। দুটি উপজেলার বালু-পাথরমহালসহ ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এই সড়কের মাধ্যমে সংযুক্ত রয়েছে। হঠাৎ সেতু ভাঙার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটছে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
১০ জুন রাতে হঠাৎ করে সেতুর একাংশ ভেঙে যাওয়ার পর থেকে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই সড়কে স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। দুটি উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ পড়েছেন ব্যাপক দুর্ভোগে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, কৃষক ও সাধারণ মানুষ যাতায়াতে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা। নোয়ারাই ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুর রহমান, ছাতক উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কয়েছ আহমেদসহ বেশ কয়েকজন নেতা ও ব্যবসায়ী সেতু ভেঙে যাওয়ায় বাড়ি ফিরতে না পেরে গত এক সপ্তাহ ধরে ছাতক শহরে অবস্থান করছেন।
ছাতক-দোয়ারাবাজার নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ছাতকের উত্তরাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় কেন্দ্র। এই সেতু ভেঙে যাওয়ায় কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। দ্রুত নতুন সেতু নির্মাণ না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।
ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, নোয়ারাই ইউনিয়নের জোড়াপানি-নরসিংপুর সড়কের মৌলা গ্রামের ধসে পড়া ব্রিজটি বৃহস্পতিবার পরিদর্শন করেছেন। সাময়িক সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে কাজ চলছে।
এদিকে, একই সড়কের আরও কয়েকটি সেতু নিয়ে কথা বলেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, উপজেলার নোয়ারাই ভায়া জোড়াপানি-নরসিংপুর সড়কে বর্তমানে রওয়াইল বিলসংলগ্ন জোড়াপানি পয়েন্টে অবস্থিত ব্রিজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ব্রিজটি দু’পাশের অ্যাপ্রোচ দুর্বল অবস্থায় থাকায় এটিও যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা প্রবল। এ ছাড়া এই সড়কে নরসিংপুর এলাকায় আরও দু-একটি ব্রিজ নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাবাবাসী।
জয়নগর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, জোড়াপানি পয়েন্টের এই ব্রিজটি ১৯৯৬ সালে পুনর্নির্মিত হওয়ার পর বর্তমান অবস্থা ভালো না। ঝুঁকি নিয়েই এখানকার যানবাহনগুলো এ পথ ধরে চলাচল করছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল র ন ব যবস য় এই সড়ক ব র জট অবস থ সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
ওজুর ফরজ কয়টি
ওজু ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজের জন্য পবিত্রতার পূর্বশর্ত। কোরআনে আল্লাহ ওজুর ফরজ কাজগুলো স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। তবে ওজু শুধু শারীরিক পবিত্রতাই নিশ্চিত করে না, বরং এটি মানুষের মনকে আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য প্রস্তুত করে।
নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ওজু করে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তার গুনাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়ে, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৫) আরেকটি হাদিসে আছে, ‘ওজু হলো ইমানের অর্ধেক।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৮৯)
ওজুর ফরজ কয়টিওজুর ফরজ চারটি, যা কোরআন (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬) এবং হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত। এগুলো হলো—
১. মুখমণ্ডল ধোয়া: পুরো মুখ, অর্থাৎ কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক পর্যন্ত এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত ধুয়ে ফেলা। এটি ওজুর প্রথম ফরজ।
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাতের হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ধোয়া, যাতে কোনো অংশ বাদ না যায়।
৩. মাথায় মাসেহ করা: মাথার সামনের অংশে ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করা। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই যথেষ্ট।
৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পায়ের পাতা থেকে টাখনু পর্যন্ত ধোয়া, যাতে আঙুলের ফাঁকসহ পুরো অংশ ভিজে।
আরও পড়ুনপবিত্রতায় অজু ও গোসলের বিকল্প তায়াম্মুম২৪ ডিসেম্বর ২০২১ওজুর ফরজের বিস্তারিত ব্যাখ্যাফরজগুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, কেননা, স্পষ্ট বিধান জানা না থাকায় অনেকের ভুল হয়ে যায়।
১. মুখমণ্ডল ধোয়া: মুখ ধোয়ার সময় কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। এর মধ্যে মুখের ভেতরে কুলি করা বা নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ফরজ নয়, তবে এগুলো সুন্নত। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় পুরো মুখমণ্ডল ধুয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাত ধোয়ার সময় হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। হানাফি মাজহাবে কনুই পর্যন্ত ধোয়া ফরজ এবং কনুইয়ের ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ওজু করার সময় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৬)
৩. মাথা মাসেহ করা: মাথায় মাসেহ করার জন্য ভেজা হাত দিয়ে মাথার সামনের অংশে মাসেহ করতে হবে। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই ফরজ আদায় হয়। শাফিই মাজহাবে পুরো মাথা মাসেহ করা ফরজ। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় দুই হাত ভিজিয়ে মাথায় মাসেহ করতেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১১১)
৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পা ধোয়ার সময় পায়ের আঙুলের ফাঁক থেকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। টাখনুর ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যারা ওজুতে পা টাখনু পর্যন্ত না ধুয়ে বাদ দেয়, তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৫)
আরও পড়ুনঅজু করার নিয়ম কানুন১৯ ডিসেম্বর ২০২৩কয়েকটি পরামর্শওজু পালন করার জন্য ব্যবহারিক কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
সময় ব্যবস্থাপনা: ওজুতে সাধারণত দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। নামাজের আগে পরিকল্পনা করে ওজুর জন্য সময় রাখা যায়।
পানি সংরক্ষণ: নবীজি (সা.) অল্প পানি দিয়ে ওজু করতেন। আধুনিক সময়ে পানির অপচয় এড়িয়ে ওজু করা পরিবেশের জন্যও উপকারী। একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) এক মুদ (প্রায় ৬২৫ মিলিলিটার) পানি দিয়ে ওজু করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০)
কর্মক্ষেত্রে ওজু: অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওজুর জন্য ওয়াশরুম বা নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করা যায়। অনেক মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে ওজুর ব্যবস্থা থাকে।
ওজুর ক্ষেত্রে সতর্কতাপূর্ণতা নিশ্চিত করা: ফরজ অংশগুলোর কোনোটি বাদ দেওয়া যাবে না। যেমন পায়ের আঙুলের ফাঁক বা কনুইয়ের কিছু অংশ বাদ দেওয়া হলে ওজু পূর্ণ হবে না।
ক্রম বজায় রাখা: হানাফি মাজহাবে ফরজ কাজগুলো ক্রমানুসারে করা ওয়াজিব।
পানির ব্যবহার: পানি অপচয় না করে সুন্নত অনুযায়ী অল্প পানি ব্যবহার করা।
নিয়ত: মনে মনে ওজুর নিয়ত করা সুন্নত, যা ওজুকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে।
(আল-ফিকহুল মুয়াসসার, মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, পৃষ্ঠা: ৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা: ২০১৫)
ওজুর ফরজগুলো পালনের মাধ্যমে মুমিন নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ওজু পালন করা সহজ হয়েছে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে ওজু করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতকে আরও পরিপূর্ণ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
আরও পড়ুনঅজু ভাঙার কারণ: পবিত্রতা অর্জনে সতর্কতা১০ জুলাই ২০২৫