Risingbd:
2025-08-11@03:07:25 GMT

ঝিনুক থেকে চুন

Published: 24th, June 2025 GMT

ঝিনুক থেকে চুন

‘পান খাইতে চুন লাগে’ গানটি শোনেননি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। পানের সঙ্গে চুনের যুগলবন্দি যুগ-যুগান্তরের। এই চুন ঘিরে আমাদের দেশের মানুষের জীবন ও যাপনের সংস্কৃতিতে গানতো আছেই, আরও আছে এই অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি।

আমি ছোট বেলায় দেখেছি, কেউ কারও বাড়িতে চুন ধার করতে গেলে চুনকে চুন বলতো না। চুনকে বলতো পান খাওয়ার দই। বা অন্য কিছু। কিন্তু আতিথেয়তায় পানের অনুসঙ্গ হিসেবে চুন দিতেই হতো। পানের পরেই চুনের কদর, এরপরে আসে সুপারির কথা। চুন সাধারণত চার প্রকার হয়— শঙ্খ চুন, ঝিনুক চুন, পাথর চুন, শামুক চুন।

শঙ্খ এবং ঝিনুকের চুনই সাধারণত পানের সঙ্গে খাওয়া হয়। বাকি যে পাথর চুন বা অন্য  চুন বিভিন্ন কাজের ব্যবহৃত হয়। যেমন বিল্ডিংয়ে চুনকাম করার জন্য পাথর চুন ব্যবহার করা হয়। পুকুরের পানি পরিষ্কার করার জন্য চুন ব্যবহার করা হয়। সেগুলো অনেক সময় শামুক থেকে তৈরি করা হয়।

আরো পড়ুন:

বহু বছর ধরে তালাবদ্ধ রাজশাহী কলেজের জাদুঘর

কুমিল্লায় মাটি খুঁড়তেই বেড়িয়ে এলো প্রাচীন স্থাপনা

কারা তৈরি করে: আগে প্রায় প্রতি গ্রামে না হলেও দুই, এক গ্রাম পর পর চুন তৈরির লোকজন পাওয়া যেত। যাদেরকে বলা হতো তাম্বুলী। তখন গ্রাম-গঞ্জের ছোট-বড় জলাশয়ে আগে প্রচুর শামুক ও ঝিনুক পাওয়া যেত। কালক্রমে কৃষিজমিতে অতিরিক্ত সার-কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এবং অতিরিক্ত চুন তৈরির কারণে প্রকৃতি থেকে শামুক এবং ঝিনুক হারিয়ে গেছে। 

বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে আর শামুক ও ঝিনুক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। তাহলে চুন তৈরি হচ্ছে কীভাবে?—বর্তমানে বিভিন্ন খামারে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তা চাষ হচ্ছে। ঝিনুক থেকে মুক্তা আহরণ করার পরে স্বাভাবিকভাবেই ওই ঝিনুকটা মারা যায়। মৃত ঝিনুকের খোলসটা চুন তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। 
তাম্বুলিরা বিভিন্ন ঝিনুকের খামারিদের কাছ থেকে ঝিনুকের খোলস সংগ্রহ করে থাকে। এগুলোর বেশিরভাগই পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, যশোর অঞ্চলগুলোতে পাওয়া যায়। কম-বেশি ছয়শো টাকা কেজি দরে তারা কেনে। আগে তারা প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করতো। বলা চলে বিনামূল্যে কাঁচামাল পেয়ে যেতো। ঝিনুক ভেঙে মাঝের অংশটা হাঁসকে খাওয়াতো আর  খোলসটা নিয়ে চুন তৈরি করতো।

চুন বানানোর ধাপ: শামুক, ঝিনুকের খোলস সংগ্রহের পরে এগুলো বিশেষ এক ধরণের চুলায় পোড়াতে হয়। তার আগে পরিষ্কার করে নেয়। তারপর চুলায় পুড়িয়ে ছাইয়ের মতো করে ফেলে। তারপরে চালের গুঁড়ার মতো চেলে নেয়। যে অংশটা পোড়ানোর পরেও ছাই হতো না, সেই অংশ বাদ দেয়। 

ছাইয়ের সঙ্গে পানি মিশিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বড় একটা হাতল (বাঁশ বা কাঠের দণ্ড) দিয়ে এটাকে মন্থন করা হয়। ঘুটতে ঘুটতে পানি এবং ঝিঁনুক পোড়া গুঁড়া মিশে মণ্ডের মতো হতো। যতক্ষণ পর্যন্ত সুন্দর মিশ্রণ তৈরি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাড়া এই নাড়াচাড়াটা করতে থাকে। নাড়াচাড়া করতে করতে একটা সময় চুন তৈরি হয়ে যায়। 

এরপর একটি পাতলা কাপড়ে অনেকটা তালের ক্বাথ থেকে পানি ঝরানোর মতো করে পানি ঝরানো হয়। পানি ঝরে গেলেই এই চুন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। অনেক সময় তাম্বুলিরা নিজেরাই চুন বিক্রি করে থাকে। আবার অনেক সময় পাইকাররা তাম্বুলিদের কাছ থেকে চুন সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। 
মানুষ, পশু ও পাখির রোগ নিরাময়েও চুনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে ছিলো। 
মানুষের পেঁট ফাঁপা হলে চুনের পানি খাওয়ানো হতো। চুনের ভেতর পানি দিয়ে রাখা হতো। তারপর যে পানিটা উপরে উঠে আসতো সেই পানিটা খাওয়ানো হতো। 
বোলতা বা মৌমাছি কামড়ালে আক্রান্ত জায়গার চারপাশে চুন লাগিয়ে দেওয়া হতো, এতে ব্যথা কমে যেত। এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যেত।
পশুপাখি আঘাতপ্রাপ্ত হলে ও নির্দিষ্ট জায়গায় হলুদ মিশ্রিত চুন লাগিয়ে দেওয়া হতো। যাতে ব্যথা কমে।

বলা যায়, বাঙালির অবসর- আমোদে, আপ্যায়নে রোগে-নিরোগে চুন ছিল অনেক চেনা ও বহুল ব্যবহৃত এক অনুসঙ্গ।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র স গ রহ

এছাড়াও পড়ুন:

জিম্বাবুয়েতে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের যুবারা, ৯৫ রানের পর ৫ উইকেট রিজানের

রিজানের বলে বায়ান্দা মায়োলা আউট হতেই নিশ্চিত হলো জয়। উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ছুটলেন রিজানের দিকে—সেঞ্চুরি হারানোর আক্ষেপে পোড়া রিজানই যে জয়ের নায়ক। ব্যাট হাতে দলের বিপদের সময় দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন ঢাল হয়ে, বল হাতেও পেস বোলিংয়ে তিনি পেয়েছেন ৫ উইকেট। তাতে জিম্বাবুয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৩৩ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল হয়েছে চ্যাম্পিয়ন।

অথচ আজ ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েই শুরুটা ভালো ছিল না বাংলাদেশের যুবাদের। হারারেতে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৬৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। কালাম সিদ্দিকির সঙ্গী হয়ে দলের হাল এরপরপরই ধরেন রিজান। তাঁদের জুটিতেই নতুন করে আশা দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে ১১৭ রানের জুটি গড়েন দুজন।

৭৬ বলে ৬৫ রান করে আউট হয়ে যান কালাম। তবে রিজান ছুটতে থাকেন সেঞ্চুরির দিকে। শেষ পর্যন্ত তা তিনি পাননি, ফিরেছেন রানআউট হয়ে তাঁর সঙ্গী হয় রান আউটের দুর্ভাগ্য। ৪৮তম ওভারে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে ৯৬ বলে ৯৫ রানে রানআউট হন রিজান।

এরপর ২৯ বলে ৩৮ রান করা আবদুল্লাহ ও ৮ বলে ১৩ রান করা সামিউন বাসীর শেষ ১৫ বলে যোগ করেন ২৪ রান।

বড় রান তাড়ায় দুর্দান্ত একটা শুরু পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার যুবারাও। তাঁদের ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন আল ফাহাদ। ৩১ বলে ৪০ রান করা আদনান লাগাদিয়েনকে ফেরান তিনি। আরেক ওপেনার ইউরিখ ফন শালকবভিকও ২২ বলে ১৯ রান করে আউট হন তাঁর বলেই।

দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পরও দক্ষিণ আফ্রিকাকে কক্ষপথে রেখেছিলেন মোহাম্মদ বুলবুলিয়া ও জেসন রোলেস। তাঁদের ৪৫ রানের জুটি ভাঙেন রিজান। ৪৩ বলে ৩১ রান করে আউট হন বুলবুলিয়া, ৩৫ রানের বেশি করতে পারেননি রোলেসও।

এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকার যুবারা। শেষদিকে এমবাথার ২৯ আর সোনির ৩৪ কেবল ব্যবধানই কমিয়েছে। ফাইনাল জয়ের আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশের যুবারা। আর তাতে ব্যাটে-বলে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে নায়ক রিজান। রাতটা নিশ্চিতভাবেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে তাঁর জন্য।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৫০ ওভারে ২৬৯/৫ (রিজান ৯৫, কালাম ৬৫, আবদুল্লাহ ৩৮; এমবাথা ২/৫০, মায়োলা ১/৪১)
দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দল : ৪৮.৪ ওভারে ২৩৬ (লাগাদিয়েন ৪০, রোলেস ৩৫, বুলবুলিয়া ৩১, সোনি ৩৪, এমবাথা ২৯; রিজান ৫/৩৪, ফাহাদ ৩/৫০, স্বাধীন ২/৩৪)
ফল: বাংলাদেশ অ–১৯ দল ৩৩ রানে জয়ী।

আরও পড়ুনদুবার জীবন পেয়ে ডেভিডের ৮৩, জিতেছে তাঁর দলই২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ এনসিপিসহ ১৬ দল
  • ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে: শফিকুল আলম
  • জিম্বাবুয়েতে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের যুবারা, ৯৫ রানের পর ৫ উইকেট রিজানের
  • এনসিপি নেতাকে ‘প্রস্তুত হ রাজাকার’ চিরকুটের সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি
  • ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ এনসিপিসহ অন্তত ১৬টি দল
  • পটিয়ায় চাকরিচ্যুতদের অবরোধ প্রত্যাহার, ৪ ঘণ্টা পর সচল হলো ২০ ব্যাংক
  • পাটুরিয়া লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন, লঞ্চে যাত্রীদের ঝুঁকিপূর্ণ ওঠানামা
  • থমকে গেছে জুলাই যোদ্ধা মিশনের জীবন
  • বিরল নেপালি খুদে ছাতারে 
  • হুমা কুরেশির ভাই খুন