মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ধষর্ণের শিকার হয়েছে। গত ১৭ জুন ওই শিক্ষার্থীকে তার চাচাতো ভাই নিজ বাড়িতে হাত-পা বেঁধে ও মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। আদালত অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) আদেশ দিয়েছেন।

ওই শিক্ষার্থীর মা জানান, গত ১৭ জুন তার মেয়ে বাড়িতে চাচাতো বোনের সঙ্গে খেলাধুলা করছিল। মেয়ের চাচাতো ভাই জাকির হোসেন (২০) কৌশলে তাকে ঘরে নিয়ে যায়। এর পর মেয়ের হাত-পা বেঁধে ও মুখ চেপে ধর্ষণ করে। বিষয়টি কাউকে জানালে মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় জাকির। কিন্তু মেয়ের অসুস্থতা দেখে জিজ্ঞাসা করলে তখন ঘটনা খুলে বলে। এর পর জাকিরের বাবাকে ঘটনা জানানো হলে তিনি বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। বাজার থেকে মেয়ের জন্য ওষুধ এনে দেন।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি পরে আশপাশের কয়েকজন জেনে যাওয়ায় আপসে মীমাংসার কথা বলে কোথাও যেতে দেয়নি। কিন্তু রোববার মেয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় প্রথমে সাটুরিয়া উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোববার থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসা করানো হয়। মঙ্গলবার দুপুরে মানিকগঞ্জ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে মেয়েকে  বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন ও জাকিরের বাবা বলেছিলেন ঘটনা নিজেদের মধ্যে, তাই থানা-পুলিশ করার দরকার নেই। নিজেরাই আপসে মীমাংসা করে নেব। কিন্তু তারা মীমাংসার নামে ঘুরাতে থাকে ও মেয়েকে চিকিৎসা করাতে বাধা দেয়। গত ২২ জুন সাটুরিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ জানায়- ধর্ষণের মামলা প্রমাণ করা কঠিন। বিষয়টি যখন নিজেদের মধ্যে হয়েছে, তাই আপসে মীমাংসা করে নেন। পরে এক আত্মীয়র সহযোগিতায় মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা করা হয়েছে।’

শিশুটির মামা রুবেল হোসেন জানান, তার ভগ্নিপতি সহজ সরল দিনমজুর। জাকির একজন রাজমিস্ত্রির সহযোগী। ঘটনাটি তার বোনের পরিবার গোপন রেখেছিল। কিন্তু ভাগনির অবস্থা খারাপ হওয়ায় রোববার তারা ঘটনাটি জানায়। এর পর ভাগনিকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করি। তার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তা ক্ষমার করা যায় না। জাকিরের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.

রুমা আক্তার জানান, ধর্ষণের ঘটনার ৫ দিন পর ওই শিশুটিকে রোববার ভর্তি করা হয়। তার রক্তক্ষরণ বন্ধসহ অন্যান্য চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

মানিকগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর হুমায়ুন কবির বলেন, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা বাদী হয়ে মঙ্গলবার আদালতে মামলা করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ এম এ হামিদ মামলাটি আমলে নিয়ে তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ম ন কগঞ জ র বব র ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার

পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।

গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।

এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ