‘ভেবেছিলাম, বাবা ফিরে আসবেন, বাবাকে ছুঁয়ে দেখব’
Published: 25th, June 2025 GMT
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলছেন, ‘আর কত কান্না করলে, আর কত দিন স্বজনের ছবি বুকে নিয়ে ঘুরলে গুম-খুনের বিচার পাব।’ ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের আয়নাঘর পরিদর্শনের সুযোগ না দেওয়ারও সমালোচনা করেন তাঁরা।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে আয়োজিত এক জাতীয় পরামর্শ সভায় গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা এ কথা বলেন।
মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র (এইচআরডিসি), মায়ের ডাক ফাউন্ডেশন ও এসডব্লিউএবি–এর পক্ষ থেকে নির্যাতিত ব্যক্তিদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবস পালনে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি রাজনীতিবিদ, গবেষক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেলিন।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে শাহবাগ থেকে তুলে নেওয়া হয় তৎকালীন বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পারভেজ হোসেনকে। অনুষ্ঠানে এসেছিল তাঁর ১২ বছর বয়সী মেয়ে আদিবা ইসলাম হৃদি। সে বলে, ‘৫ আগস্টের পর ভেবেছিলাম, আমার বাবা ফিরে আসবেন। আমি বাবাকে ছুঁয়ে দেখব। কিন্তু ১০ মাস হয়ে গেলেও বাবা ফিরে এলেন না। বাবা বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, সেটাও জানতে পারলাম না।’
আদিবা ইসলাম বলেন, ‘একটা দল করার কারণে আমার বাবাকে গুম করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলনে গুমের শিকার পরিবারগুলোর বড় ভূমিকা ছিল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আর কোনো পরিবার যেন এমন অন্যায়ের শিকার না হয়, আর কখনো যেন আয়নাঘর না হয়; সে জন্য যা করার, করা হবে।
গত ১৭ বছরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে যতগুলো গুম-খুন, অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, সেসব ঘটনার বিচার দাবি করেন বিএনপির মানবাধিকার কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন। তিনি বলেন, মানবাধিকার নিয়ে কাজ করার কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ডিবি (গোয়েন্দা শাখা) পুলিশ দিয়ে তাঁকেও গুমের চেষ্টা করেছিল।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হলেই তাঁরা জানতে চান, আর কত দিন কান্না করলে তাঁরা স্বজন হারানোর বিচার পাবেন।
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে আটকের ঘটনায় ‘মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ)’ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। এটা বেআইনি কাজ। তবে এ দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ‘মব’ শুরু করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় ১০ হাজার ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের শিকার প্রতিটি ঘটনার বিচারের দাবি জানান তিনি।
স্বজনদের গুম-খুনের বিচার চাইতে গিয়ে নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানান মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুনের সত্য ঘটনাগুলো সামনে আনতে দিত না। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে কোথাও দাঁড়াতে দিত না। অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই এসব গুম-খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এসডব্লিউএবি–এর চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জামান, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম, পুলিশের গুমের শিকার সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদা প্রমুখ।
আরও পড়ুনআওয়ামী লীগ গুম ও খুনের সরকার কায়েম করেছিল: সানজিদা ইসলাম২৯ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র সদস ল গ সরক র অন ষ ঠ ন র সদস য আওয় ম ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার
পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।
গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন:
‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার
বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।
পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।
এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।
নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”
ঢাকা/শাহীন/মেহেদী