বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি, নেতৃত্বে রশিদুল-ইনামুল
Published: 25th, June 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছে। ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত এই কমিটিতে রশিদুল ইসলাম (রিফাত রশীদ) সভাপতি ও মো. ইনামুল হাসান সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মুঈনুল ইসলাম ও মুখপাত্র পদে সিনথিয়া জাহীন আয়েশা নির্বাচিত হয়েছেন।
আজ বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় ফল ঘোষণা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত বছরের জুলাই–আগস্টে হওয়া অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিল। পরে এই প্ল্যাটফর্ম ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম সেভাবে ছিল না। প্ল্যাটফর্মটির নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন নেতিবাচক ঘটনার খবর আসছিল। এমন প্রেক্ষাপটে কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হলো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটিতে সভাপতি হওয়া রশিদুল ইসলাম জুলাই অভ্যুত্থানের সময় প্ল্যাটফর্মটির সম্মুখসারির সমন্বয়ক ছিলেন। পরে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব হয়েছিলেন। সম্প্রতি সেখান থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত ইনামুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেলের সম্পাদক ও জুলাই ম্যাসাকার আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁরা দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এর আগে গত সোমবার প্রথম কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। প্ল্যাটফর্মের সভাপতি পদে রশিদুলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাকির হোসেন মঞ্জু। সাধারণ সম্পাদক পদে ইনামুলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইব্রাহীম নিরব ও মো.
গত বছরের ১ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়। তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের নির্বিচার দমন–পীড়নের কারণে সেই আন্দোলন একপর্যায়ে গণ–অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। সেই অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জুলাই অভ্যুত্থানে বিভিন্ন দল–মতের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন, অংশ নিয়েছিলেন বিভিন্ন মতের ছাত্রসংগঠনের নেতা–কর্মীরাও। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর গত বছরের অক্টোবরে সমন্বয়কেরা এর একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন। এর পর থেকে অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দূরত্ব তৈরি হয়। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা সমন্বয়কদের একটি অংশের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটিকে কুক্ষিগত করার অভিযোগ করে আসছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ক উন স ল ইন ম ল র নত ন বছর র স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার
পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।
গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন:
‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার
বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।
পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।
তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।
এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।
নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”
ঢাকা/শাহীন/মেহেদী