কেশবপুরে শিশুদের ঝগড়া নিয়ে সালিশ পছন্দ না হওয়ায় সংঘর্ষে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতিসহ দু’জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত জনতা প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর করেছে। গত মঙ্গলবার রাতে পাঁজিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে কমলাপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেনের মেয়ে তাসলিমা খাতুন ও প্রতিবেশী আমিনুর রহমান দফাদারের ছেলে শিহাব হোসেন বাড়ির আঙিনায় খেলছিল। এ সময় দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের ঘটনা জানালে সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন।

মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কমলাপুর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবাদুল শেখের সভাপতিত্বে এলাকার শহিদুল ইসলামের চায়ের দোকানের সামনে সালিশ বৈঠক বসে মীমাংসার চেষ্টা করেন মাতবররা। সালিশের সিদ্ধান্ত আমিনুর রহমান দফাদারের বিপক্ষে যাওয়ায় তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সালিশের সভাপতি এবাদুল শেখকে ‘ঘুষ খেয়ে বিচার করছিস’ বলেই পেছন থেকে লাথি মেরে ফেলে দেন এবং তাঁর কাছে থাকা ছুরি দিয়ে আঘাত করতে যান।

এ সময় তাঁর পাশে থাকা ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য তুহিন মোড়ল ঠেকাতে গেলে ওই ছুরির আঘাত তাঁর বুকের বাঁ পাশে লেগে জখম হয়। সালিশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন চিকিৎসক। ওই রাতেই সালিশে উপস্থিত জনতা উত্তেজিত হয়ে আমিনুর রহমান ও তাঁর বাবা আব্দুস সালাম দফাদারের বসতঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। এরপর থেকে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন।

পাঁজিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মকবুল হোসেন মুকুল জানান, আহত ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এবাদুল শেখ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য তুহিন মোড়লের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বুধবার (গতকাল) বিকেলে তাঁর অপারেশন হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আনোয়ারুল ইসলামের ভাষ্য, তুহিন মোড়ল নামে একজনকে এখানে আনা হয়েছিল। তাঁর বুকের বাঁ পাশে ছুরিকাঘাতের গভীর ক্ষত রয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

কেশবপুর থানার এসআই আসমত আলী বলেন, কমলাপুরে মারামারির ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ওসি এসে অভিযোগটি দেখে দিলে তারপর 
মামলা হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: যশ র কমল প র

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্রান্সে পত্রিকার ‘সর্বশেষ’ হকার আলী আকবরকে জাতীয় সম্মাননা দিচ্ছেন মাখোঁ

নাম আলী আকবর। থাকেন ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। শহরটির পুরোনো অধিবাসীদের কাছে তিনি খুব পরিচিত মুখ। আকবর প্রতিদিনের পত্রিকা বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়েন। মুখে বলতে থাকেন দৈনিক পত্রিকার তরতাজা শিরোনামগুলো। এভাবেই পত্রিকা পৌঁছে দেন পাঠকের হাতে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এ কাজ করছেন তিনি।

এটুকু পড়েই বোঝা যাচ্ছে আলী আকবর একজন সংবাদপত্রের হকার। পাঠকের হাতে ছাপা পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া তাঁর কাজ। তবে আকবরের আলাদা বিশেষত্ব আছে। হারিয়ে যেতে বসা পেশা পত্রিকার হকারি প্যারিসে এখন একমাত্র তিনিই ধরে রেখেছেন। অর্থাৎ প্যারিস তথা পুরো ফ্রান্সে পত্রিকার সর্বশেষ হকার তিনি। সম্ভবত ইউরোপেও।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ দেশটির অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ জাতীয় সম্মাননা ‘অর্ডার অব মেরিট’–এর জন্য আলী আকবরকে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন দিয়েছেন। এটা সে দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননারও একটি। আগামী মাসে আলী আকবরকে এ সম্মাননা দেওয়া হবে। ফরাসি সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি এ সম্মাননা পাচ্ছেন।

পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম আলী আকবরের। ষাটের দশকের শেষ ভাগে ইউরোপে পাড়ি জমান। শুরুতে যান নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। সেখানে তিনি একটি ক্রুজ জাহাজে কাজ পান। পরে ১৯৭২ সালে ফ্রান্সে আসেন। বছরখানেক পর থিতু হন প্যারিসে। পত্রিকার হকারির কাজ নেন।

মজার বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট মাখোঁ নিজেও ছাত্রজীবনে আলী আকবরের কাছ থেকে পত্রিকা কিনতেন।

স্মৃতি হাতড়ে আলী আকবর বলেন, ‘১৯৭৩ সালের দিকে আমি যখন প্যারিসে পত্রিকার হকারি শুরু করি, তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আর কেউ নেই। আমি একাই রয়ে গেছি।’

দিন বদলের স্রোতে ছাপা পত্রিকা ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সময়ের এই বাঁকবদলে পত্রিকার হকাররাও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন, পেশা বদলে ফেলছেন।

আলী আকবর বলেন, ‘আমি খুবই হতাশ। এখন সবকিছু ডিজিটাল মাধ্যমে চলে। মানুষ শুধু নিজের টেলিফোন (মুঠোফোন) দেখতে চায়।’

১৯৭৩ সালের দিকে আমি যখন প্যারিসে পত্রিকার হকারি শুরু করি, তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আর কেউ নেই। আমি একাই রয়ে গেছি।আলী আকবর, প্যারিসে পত্রিকার হকার

কেতাদুরস্ত ফ্যাশনশিল্পের জন্য পরিচিত প্যারিসের সেইন্ট জার্মেই এলাকার ক্যাফেগুলো ঘুরে আলী আকবর এখন বিখ্যাত ফরাসি পত্রিকা লা মঁদের মাত্র ৩০ কপি বিক্রি করতে পারেন। তিনি জানান, পত্রিকা বিক্রির টাকার অর্ধেক তিনি পান। তবে অবিক্রীত পত্রিকাগুলো ফেরত দেওয়ার সুযোগ নেই।

অথচ একসময় দৃশপট ছিল পুরো উল্টো। আলী আকবর জানান, ইন্টারনেট জমানার আগে পত্রিকার সন্ধ্যাকালীন মুদ্রণের পর প্রথম ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কপি বিক্রি হয়ে যেত। তিনি বলেন, ‘সেসব দিনে পাঠকেরা দৈনিক পত্রিকা কেনার জন্য আমার চারপাশে ভিড় করতেন। আর এখন এক কপি পত্রিকা বিক্রি করতে আমাকেই পাঠকের পিছে পিছে ছুটতে হয়।’

পথে ঘুরে ঘুরে পাঠকের হাতে দৈনিক পত্রিকা পৌঁছে দেন আলী আকবর

সম্পর্কিত নিবন্ধ