ফেনী সীমান্ত দিয়ে আবারও চারজনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
Published: 26th, June 2025 GMT
ফেনীর সদর উপজেলার জোয়ারকাছার সীমান্ত দিয়ে আবারও চার বাংলাদেশিকে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে একই পরিবারের এই চারজনকে ঠেলে পাঠানো হয়। তাঁদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) টহল দল হেফাজতে নেয়। পরে তাঁদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঠেলে পাঠানো চারজন হলেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পূর্ব মাইজভান্ডার গ্রামের মোহাম্মদ তহিদুল আলম, তাঁর স্ত্রী হাজেরা খাতুন, ছেলে মো.
বিজিবির কুমিল্লা ১০ ব্যাটালিয়নের এক কর্মকর্তা জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে জেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের জোয়ারকাছার সীমান্ত দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠায় বিএসএফ। পরে বিজিবির সদস্যরা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তহিদুল আলম জানান, ১৯৭৯ সালে স্ত্রীকে নিয়ে কাজের খোঁজে ভারতে যান তিনি। সেখানে তাঁদের ছেলে ও মেয়ের জন্ম হয় এবং দীর্ঘদিন তাঁরা সেখানেই বসবাস করছিলেন। সম্প্রতি ভারতীয় পুলিশ তাঁদের আটক করে মুম্বাই থেকে আগরতলায় পাঠায়। পরে ত্রিপুরা সীমান্ত হয়ে তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
কুমিল্লা ১০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, চার বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফের ঠেলে পাঠানোর বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তাঁদের ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামান জানান, বিজিবির মাধ্যমে হস্তান্তর করা চারজনকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাঁদের চট্টগ্রামের গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলছে।
বিএসএফের মাধ্যমে ফেনী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর ঘটনা বেড়েছে। গত ২ মাসে ৪ দফায় ৬৫ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ।
সর্বশেষ ২৬ জুন একই পরিবারের চারজনকে ধর্মপুর জোয়ারকাছার সীমান্ত দিয়ে, এর আগে ১৯ জুন ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ১১ জন, ৩০ মে ১৩ জন এবং ২২ মে ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ৩৭ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুনখাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে আরও ৯ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ৬ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মামুন হত্যা মামলায় চার আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে, অস্ত্র মামলায় ইউসুফের দায় স্বীকার
রাজধানীর পুরান ঢাকায় আদালত এলাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাঈদ মামুন হত্যার ঘটনায় অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার পাঁচ আসামির মধ্যে চারজনকে আজ রোববার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পরে এ মামলায় তাঁদের আদালতের মাধ্যমে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়।
আজ রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামান এ আদেশ দেন।
অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন মো. ফারুক হোসেন ফয়সাল (৩৮), রবিন আহম্মেদ ওরফে পিয়াস (২৫), মো. রুবেল (৩৪), শামীম আহম্মেদ (২২) ও মো. ইউসুফ জীবন (৪২)। তাঁদের মধ্যে ইউসুফ আজ দায় স্বীকার করে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
এ হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারে আসামি ইউসুফ জীবনের বাসার ওয়ার্ডরোবের নিচ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের গুলির উদ্ধার করা হয়। ১২ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা করেন পুলিশ। পরে সেদিনই এই মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচজনের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ফটকের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সামনে ১০ নভেম্বর সকালে গুলি করে হত্যা করা হয় তারিক সাইফ মামুনকে। তিনি মামলার হাজিরা দিয়ে বের হচ্ছিলেন তখন। নিকটস্থ সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফুটেজে দেখা যায়, মামুন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। তখন দুই ব্যক্তি খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করছেন।
এ ঘটনায় আজ গতকাল শনিবার ১৫ নভেম্বর সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত মামুনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার। তবে মামলায় তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক আবু বকর জানান, আজ মামুন হত্যা মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মো. সাজ্জাদ হোসেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আগের অস্ত্র মামলার চার দিনের রিমান্ডে সব তথ্য বেরিয়েছে। পুলিশও মিডিয়াকে সব জানিয়েছে। হত্যার ঘটনা কেন হয়েছে? কে কী করেছে। সে ক্ষেত্রে আর রিমান্ডে যৌক্তিকতা নেই। বিচারক বলেন, ওটা তো অন্য মামলায়। আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের সঙ্গে আর কে কে আছেন, সেটা জানা দরকার। শুধু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নয়, এখানে আরও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, মিডিয়াতে এসেছে, রনি জড়িত। এ ছাড়া হত্যা মামলায় আসামি সব অজ্ঞাতনামা। বিচারক তখন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামি কে কে, তা জানতে চান। জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি। বাদী চেয়েছেন, তদন্তের মাধ্যমে আসামি বের হোক। সে জন্য অজ্ঞাতনামা দিয়েছেন। বাদী ন্যায়বিচার চান।
তখন আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, এ আসামিদের প্রতি বাদীর (হত্যা মামলা) কোনো সন্দেহ নেই। তাঁরা গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ দিন আগে। তিনি মামলা করেছেন গতকাল শনিবার। কাউকে তিনি সন্দেহ করেননি। তখন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, এঁরাই গুলি করছেন। মামলাটি তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে। তদন্ত হলে সব বেরিয়ে আসবে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।