বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন আগামীকাল। যদিও অনেক বছর ধরে আলাদা করে জন্মদিন উদযাপন করতে দেখা যায়নি তাঁকে। ভক্ত-অনুরাগীদের শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটাতে দেখা গেছে তাঁকে। এবার শিল্পীর পক্ষ থেকে তাঁর ৮৫তম জন্মদিনে ভিন্ন ধরনের আয়োজন করছে চ্যানেল আই।

 আগামীকাল ২৮ জুন সংগীতজ্ঞ ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে চানেল আই প্রচার করবে ‘তারকাকথন’ অনুষ্ঠানের বিশেষ পর্ব। সেখানে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত করবেন চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ। তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ‘এসো গান শিখি’ অনুষ্ঠানের প্রিয় দুই মুখ মিঠু ও মন্টি। তাদের সঙ্গে থাকবে একদল নতুন প্রজন্মের শিশু। 

এছাড়াও শুভেচ্ছা জানাবেন ‘এসো গান শিখি’র প্রযোজক মেনোকা হাসান এবং এই প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী কনা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন সানজিদা, প্রযোজনায় অনন্যা রুমা। ‘তারকাকথন’ প্রচার হবে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে। ফেরদৌসী রহমানের কথায়, ‘‘শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে জন্মদিনে তেমন কিছু করা হয় না। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই সময় কাটাই। এ জন্য শুধু জন্মদিনকে ঘিরে চ্যানেল আইয়ে আয়োজিত ‘তারকাকথন’ অনুষ্ঠানে অংশ নেব। আগেও এতে অংশ নিয়েছি। সেখানে শিল্পীজীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে ভালোই লাগে।’’

 স্মৃতিচারণায় ফোরদৌসী রহমান তাঁর জন্মদিন নিয়ে এক মজার তথ্যও তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, তাদের বাড়িতে জন্মদিন সেভাবে উদযাপন করা হতো না। একমাত্র তাঁর বড় ভাই মোস্তফা কামালের (সাবেক প্রধান বিচারপতি) জন্মদিন হইচই করে উদযাপন করা হতো। গান হতো, কবিতা হতো, খাওয়া-দাওয়া হতো। কিন্তু একটি অর্জন বদলে দিয়েছিল তাদের বাড়ির চিত্র। সেটি ছিল ১৯৫৬ সাল। সে বছরই মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন ফেরদৌসী রহমান। জন্মদিনের ঠিক দু’দিন আগে ২৬ জুন প্রকাশ পায় তাঁর মেট্রিকের রেজাল্ট। ফলাফল বোর্ড স্ট্যান্ড করার পাশাপাশি সারাদেশে মেয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি; যা আনন্দ দিয়েছিল সবাইকে। সেই সুবাদে ঘটা করে উদযাপন করা হয় ফেরদৌসী রহমানের জন্মদিন। 

কিংবদন্তি শিল্পী ও ভাওয়াইয়াসম্রাট আব্বাস উদ্দীন আহমদের উত্তরসূরি হিসেবে সংগীত বলয়ে ফেরদৌসী রহমানের বেড়ে ওঠা। ১৯৪১ সালের ২৮ জুন ভারতের কোচবিহারে তাঁর জন্ম। ছোটবেলায় বাবার কাছে তাঁর সংগীতে হাতেখড়ি। এরপর ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খসরু, ইউসুফ খান কোরেইশী, কাদের জামেরী, গুল মোহাম্মদ খান প্রমুখ সংগীতজ্ঞের কাছে তালিম নিয়েছেন। খুব অল্প বয়স থেকে তিনি মঞ্চে পারফরম্যান্স শুরু করেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে রেডিওতে খেলাঘর নামের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ১৯৬০ সালে ‘আসিয়া’ নামের চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম নেপথ্য কণ্ঠ দেন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে দুই শতাধিক সিনেমায় প্লেব্যাক করেছেন তিনি। ১৯৪৮ সালে রেডিওতে শিশুশিল্পী এবং ১৯৫৬ সালে তিনি প্রথম বড়দের অনুষ্ঠানে গান করেন। 

১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর দেশের সংগীতপ্রেমীদের মাঝে সাড়া ফেলেন ‘এসো গান শিখি’ গানের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। ফেরদৌসী রহমানের বড় ভাই মোস্তফা কামালও ছিলেন সংগীত অনুরাগী। আরেক ভাই লোকগানের নন্দিত কণ্ঠশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী। শুধু ভাইবোনই নয়, তাদের উত্তসূরিদের প্রায় সবাই দেশীয় সংগীতকে ধারণ ও লালন করেন যাচ্ছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার

পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।

গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।

এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ