জামালপুরের ইসলামপুরে আবদুর রহিম (৪৮) নামের ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাত ২টার দিকে উপজেলার কুলকান্দি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের যমুনা নদীর দুর্গম চর জিগাতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আবদুর রহিম ওই গ্রামের মৃত তৈয়বুর খন্দকারের ছেলে ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

নিহতের স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে একদল লোক এসে প্রশাসনের পরিচয়ে দরজা খুলতে বলে। না খোলায় ধাক্কাধাক্কি করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিলে তারা আবদুর রহিমকে টেনেহিঁচড়ে বের করে উঠানে ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। পরে দুর্বৃত্তরা যমুনা নদী দিয়ে ট্রলারে করে পালিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যরা আবদুর রহিমকে উদ্ধার করতে গেলে তাদেরও পিটিয়ে আহত করা হয়। রাতে মুখোশ পরে থাকায় কাউকে চিনতে পারেননি বলে জানিয়েছেন আবদুর রহিমের পরিবারের সদস্যরা।

আবদুর রহিম কুলকান্দি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপদে টানা দুইবার নির্বাচিত হন। তাঁর স্ত্রী রেহেনা বেগম জানান, বাড়ির পাশের দোকানে চা পান করে রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবদুর রহিম ঘরে আসেন। ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। রাতে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে ঘর থেকে বের করে সন্তানদের সামনে আবদুর রহিমকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চান তিনি।

আবদুর রহিমের ভাই সোলায়মান খন্দকার ও জাহাঙ্গীর আলম জানান, শনিবার রাতে যমুনা নদীর ভাটি এলাকা থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে করে ২০-২৫ জন তাদের বাড়িসংলগ্ন জিগাতলা খেয়াঘাটে আসে। পরে মুখোশধারীরা বাড়িতে এসে ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষ ভাড়াটে খুনিদের মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন তারা।

স্থানীয় কুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান আনিস সাংবাদিকদের জানান, আবদুর রহিম খুবই জনপ্রিয়। টানা দুইবার জনগণ তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এমন মানুষকে এভাবে হত্যা মেনে নিতে পারছি না। আমরা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

ইসলামপুর থানার ওসি আ স ম আতিকুর রহমান জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সূত্র উদ্ঘাটন ও জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক প য় হত য ইউপ সদস য হত য ক ণ ড

এছাড়াও পড়ুন:

শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ, আরেক আসামি গ্রেপ্তার

পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া এলাকায় ৯ বছরের শিশু শিক্ষার্থী হাফসা হত্যার ঘটনায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) দায়ের করা মামলায় আরো এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মামলার নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার হলো।

গ্রেপ্তাররা হলেন, পাবনা পৌর সদরের উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া মহল্লার টিপু সরদারের ছেলে সাব্বির সরদার (২৬), ছবেদ আলীর ছেলে রমজান আলী (৩০) ও খালেক সরদারের ছেলে পান্না সরদার (২৮)। এদের মধ্যে সাব্বির ও রমজানকে রবিবার এবং পান্নাকে সোমবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

আরো পড়ুন:

‘আবর্জনার মতো লাগে’ বলে অর্ধশত বকুলগাছ কাটা সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার

বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে ৩ আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার 

এদিকে, শিশু হাফসাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত হাফসার মা রিতু খাতুন বাদী হয়ে সোমবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনজন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার দুপুরে পাবনা টেক্সটাইল কলেজ এলাকা থেকে অভিযুক্ত পান্না সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার প্রধান অভিযুক্ত নামীয় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

এদিকে, শিশু হাফসা হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর শালগাড়িয়া সরদারপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়ে জেলা প্রশাসক কর্যালয়ের সামনে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা। সেখানে নিহত শিশু শিক্ষার্থী হাফসার স্বজন ও এলাকাবাসী বক্তব্য দেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ শেষে তারা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। অন্যত্থায় আরো কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দেন।

এ সময় প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে, শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে শিশু হাফসাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তার সন্ধান চেয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রায় ২ ঘণ্টা পর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতর পাটিতে মোড়ানো কাদা মাখা অবস্থায় হাফসার মরদেহ পাওয়া যায়।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় রাতেই সন্দেহভাজন হিসেবে রমজান ও সাব্বির নামের দুইজনকে আটক করা হয়।

নিহত হাফসা সদর উপজেলার মালঞ্চি ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের প্রবাসী হাফিজুর রহমানের মেয়ে এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

হাফসার নানার বাড়ির পাশের বাগানটি দীর্ঘদিন ধরে বখাটে, মাদকসেবী ও জুয়ারুদের আড্ডাস্থল ছিল বলে জানায় স্থানীয়রা। তারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাবনা সদর থানার ওসি (অপারেশন) সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, “মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে শিশু হাফসাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। এছাড়া পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতিয়মান হয়েছে।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ